শুধুই পড়াশুনার মাঝে ডুবে থাকা নয় বরং আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে সেবার হাত বাড়িয়ে ছুটে চলা সমাজের সকলের কাছে – এ কথারই সত্যতা প্রমাণে গত ১ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জের সিপাইপাড়ায় ছুটে গিয়েছিল একদল তরূণ তরূনী চিকিৎসক । এশিয়ান মেডিকেল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (আমসা বাংলাদেশ) আয়োজিত এই ফ্রি হেলথ ক্যাম্পের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় স্বাস্থসেবা পৌঁছে দেয়া। এর পাশাপাশি তাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আলোচনা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে পরামর্শ প্রদান । এছাড়াও মহিলাদের নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছিল । আর এই হেলথ ক্যাম্পের সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতায় ছিল “অভিযাত্রিক” সংগঠনের একদল উদ্দাম কর্মঠ তরুণদল। মুন্সিগঞ্জের রামপাল ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সিপাইপাড়া গ্রামে “রামপাল মহাবিদ্যালয়” এর একাডেমিক ভবনে আয়োজন করা হয়েছিল এই ফ্রি হেলথ ক্যাম্প এর।
১লা এপ্রিল সকাল ৯ টা থেকেই ফ্রি হেলথ ক্যাম্পের কার্যক্রম শুরু হয় । এই ক্যাম্পে অংশগ্রহন করেছিল দেশের ১৫টি মেডিকেলের ৪০ জনেরও বেশি চিকিৎসক তরুণ তরূণী এবং মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীবৃন্দ । এসব মেডিকেল কলেজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ,ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, ডেলটা মেডিকেল কলেজ, উত্তরা উইমেনস মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ, আশিয়ান মেডিকেল কলেজ সহ আরো সরকারী এবং বেসরকারী মেডিকেল কলেজ। সকাল থেকেই সাধারণ মানুষজন ভিড় করতে থাকেন রামপাল মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গনে । এসময় রামপাল মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ এবং “অভিযাত্রিক” নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে হেলথ ক্যাম্পকে সফল করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছেন।
হেলথ ক্যাম্পের প্রধান স্বাস্থ্যসেবা গুলোর মধ্যে ছিল রোগীদের সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা অনুসন্ধান এবং তার প্রেক্ষিতে চিকিৎসা প্রদান, রক্তচাপ নির্ণয়, রক্তের গ্রুপ এবং ডায়বেটিস পরীক্ষা, মহিলাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে পৃথকভাবে পরামর্শ প্রদান, বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ এবং শিশুদের জন্য কৃমিনাশক ট্যাবলেট বিতরণ কর্মসূচি। সকাল ৯ টা থেকে শুরু হওয়া এই হেলথ ক্যাম্পের কার্যক্রম চলে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত । প্রায় ৫০০ জন মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে এই হেলথ ক্যাম্পের মাধ্যমে । আমসা বাংলাদেশ এই ধরণের হেলথ ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা কে মানুষের আরো কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ । এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমসা বাংলাদেশ এর রিজিওনাল চেয়ারপার্সন ডা: তাজদীত রহমান তানিম জানান যে,“আমাদের এই হেলথ ক্যাম্প করার উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা এবং তাদের কে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। আমরা বর্তমান প্রজন্ম চাই দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে এবং সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়া ছাড়া সেটা করা সম্ভব নয়। আর আমরা শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই পাশাপাশি মেডিকেলে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সমাজের সাধারণ মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া ছিল আমাদের আরেকটি উদ্দেশ্য। আমরা তরুণ রক্ত দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি । তাই সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে তাদের জন্য কিছু করাই আমাদের প্রথম ইচ্ছা থাকবে সবসময়। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হলেন আমাদের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা, যারা জীবন বাজি রেখে ছিনিয়ে এনেছিলেন আমাদের স্বাধীনতা।” আমসা বাংলাদেশ এর ভাইস চেয়ারপার্সন ডাঃ সাজিদ রেজওয়ান বলেন, “এভাবে হেলথ ক্যাম্প এর মাধ্যমে আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মাঝে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে চাই। আশা করছি এর মাধ্যমে ডাক্তার-রোগীর মধ্যকার দূরত্ব অনেকাংশেই কমে যাবে।’’ এছাড়াও হেলথ ক্যাম্পে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ডাঃ ফাহিম আহমেদ, ডাঃ সাজ্জাদ শাহরিয়ার সিয়াম, তন্ময় শেখর বিশ্বাস, অনন্যা রায় সহ অনেকেই ।
“অভিযাত্রিক” সংগঠনের সাথে ভবিষ্যতে আরো এই ধরণের হেলথ ক্যাম্প আয়োজন করার প্রয়াস ব্যক্ত করার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় কর্মচঞ্চল এই দিনটির ।
উল্লেখ্য যে,আমসা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অরাজনৈতিক, অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান। আমসা বাংলাদেশ আমসা ইন্টারন্যাশনালের একটি চ্যাপ্টার।
আমসা এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিকের মধ্যে মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় যোগাযোগের মাধ্যম। আমসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ১৯৮৫ সালে ফিলিপাইনের ম্যানিলা শহরে মাত্র ৯টি অধ্যায় নিয়ে, তাদের যাত্রা শুরু হয় এবং এরা হল: অস্ট্রেলিয়া, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, ইন্ডিয়া, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন। এছাড়া পাপুয়া নিউ গিনি, নেপাল ও কম্বোডিয়া ছিল তাদের সহকারি সদস্য। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ২০০৫ সালে আমসার সদস্য হয় এবং ২০০৬ সালে তারা পূর্ণ প্রতিষ্ঠা পায়। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে পুনরায় তাদের সদস্যপদ ফিরে পায়। বর্তমানে আমসা ইন্টারন্যাশনাল এর সদস্য সংখ্যা ২৪ ।