রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। এর উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের মাওলাইকে। ভূমিকম্পে গভীরতা ছিল ১২৫ কিলোমিটার।
একই সময় ভূকম্পন অনুভূত হয় পাশের দেশ ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানেও।
এদিকে গত ৫ এপ্রিলও দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের ধাক্কা ঢাকাতেও পৌঁছানোর পর নগরীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতংক দেখা গিয়েছিল।
সারা শহরে হাজার হাজার মানুষ হুড়োহুড়ি করে নেমে এসেছিলেন রাস্তায়।
শহরজুড়ে এতে আহত হয়েছেন অনেকেই।
ঢাকার বাইরে প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটেছে। ভবনের সামনে জটলা দেখা গেছে লম্বা সময় ধরে।
যাতে ঢাকাব্যাপী যানজটও লেগে গিয়েছিল।
নেপালে ২৫শে এপ্রিল ভূমিকম্পের পর কয়েকদিন ধরে যে কটি আফটার শক হয়েছে তার প্রতিটির সময় একই দৃশ্য দেখা গেছে ঢাকায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের সময় মাথা ঠাণ্ডা রেখে বরং এর উল্টোটাই করতে হয়।
১৯১১ সালের মার্চ মাসে জাপানের সেনদাই শহরে ৯ মাত্রার ভূকম্পনের সময় টোকিওতে ছিলেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইন্সপেক্টর মুহাম্মদ মামুন।
তিনি বলছিলেন সেখানে মানুষের প্রতিক্রিয়া ছিলও পুরোটাই উল্টো।
তিনি বলছিলেন, “টোকিওতে মানুষজন তাড়াহুড়া করে নি। রাস্তায় নেমে আসে নি। বরং ভূকম্পন থেমে গেলে তবেই তারা দেখে শুনে রাস্তায় নেমেছেন”
বাংলাদেশে বড় ধরনের শেষ ভূমিকম্পটি হয়েছিল প্রায় একশো বছর আগে শ্রীমঙ্গল এলাকায়।
সাম্প্রতিক স্মৃতিতে ভূমিকম্পের কোন অভিজ্ঞতার অভাবেই ঢাকায় এমন প্রতিক্রিয়া বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।
তিনি বলছিলেন, ভূমিকম্প হয় মোটে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মতো।
এসময় কিছুতেই ভবনের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়।
তাই প্রথম ধাক্কার সময় যে যেখানে আছে সেখানেই টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
সম্ভব হলে ভবনের কলাম কিংবা বীমের সংযোগস্থলে দাড়াতে হবে।
যদি কিছুই না থাকে তবে মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়তে হবে। কিন্তু হুড়োহুড়ি করে নিচে নামা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
তিনি বলছিলেন, কম্পন থেমে গেলে তার জন্যে রয়েছে আরও কিছু করনিয়। যেমন প্রথমে বুঝে নিতে হবে চারপাশের অবস্থা।
তার পর ঘরের গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে চলে যেতে হবে খোলা যায়গায়।
ভূমিকম্পের প্রথম ধাক্কার পর সাধারণত একটি আফটার শক হয়।
মহড়ার ফলে ভূমিকম্পে কি করনিয় তার একটি অনুশীলন হয়ে যাবে
প্রথম ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন তাতে ধসে পড়তে পারে।
তাই অন্তত এক ঘণ্টা বাইরে কাটাতে হবে এবং তারপরই ঘরে ফেরা নিরাপদ।
ঘরে ফিরে ভবনের ক্ষতি যাচাই করতে হবে এবং আবার গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ পরীক্ষা করতে হবে।
কিন্তু ঢাকা শহর ঘুরে দেখা গেল বিশেষজ্ঞদের তৈরি এই করনীয়র তালিকা পৌঁছায়নি বেশিরভাগ মানুষের কাছেই।
এমন অনেককেই পাওয়া গেল যাদের ধারনা ভূমিকম্পের সময় ভবনের সিঁড়িই সবচাইতে নিরাপদ স্থান।
কেউবা আবার মনে করছেন ভবন থেকে বের হলেই তিনি জানে বেঁচে যাবেন।
অনেককেই আবার পাওয়া গেল যারা ভূমিকম্পে নিজেকে রক্ষার উপায়গুলো শুনেছেন, তবুও ঘটনার দিন তিনিও ছুটেছেন ভবন থেকে বাইরে যাবেন বলে।
বাংলাদেশের প্রধান উদ্ধারকারী সংস্থা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক আলী আহমদ খান বলছিলেন, সেদিন ঢাকা বাসিরা ভীত হয়ে যে তাড়াহুড়ো করেছেন তার ফলে পদদলিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং তা হয়েছেও।
ঢাকায় অনেকে আহত হয়েছেন।
তিনি বলছিলেন, “অনেকেই ভবন থেকে বের হয়ে তার সামনেই দাড়িয়ে থাকেন। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছেন যে দুলুনিতে ভবনের এসি, বিদ্যুতের তার বা বিলবোর্ড খুলে পড়তে পারে”
বাংলাদেশ ও তার চারপাশে একশো বছর পর এসে আবারো একটি বড় ভূমিকম্পের আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তার জন্য ঢাকার মতো নগরীর মানুষজন কতটা প্রস্তুত?
মি: খানের মতে বিশাল সংখ্যক মানুষের বিপদের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে ভূমিকম্পের মহড়া খুবই জরুরী। “মহড়ার ফলে যেটা হবে যে ভূমিকম্পে কি করনিয় তার একটি অনুশীলন হয়ে যাবে। এর ফলে সত্যি ভূমিকম্প হলে মানুষ অভ্যাসবশত সেই কাজগুলোই করবে”
আর অধ্যাপক কামালের মতে মানুষকে জানানোর বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ।
সেজন্যে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে হবে যারা নিজেরা ক্লাসরুমে বিষয়টা জেনে ছড়িয়ে দিতে পারবেন নিজের বাড়িতে ও মহল্লায়।
অধ্যাপক কামালের মতে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে ভূমিকম্প ছাড়াই কয়েকটি নতুন ভবন ধসের স্মৃতি শহরের বাসিন্দাদের ভীতি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভবনের নকশা আর মাল মশলায় দুর্বলতার কারণে ভবনের উপর মানুষের আস্থাও অনেক কম।
এধরনের ভবন দিয়ে গড়া ঢাকায় বড় মাপের একটি ভূমিকম্প হলে তা থেকে বাচার জন্যে কি করনিয় সে প্রশ্নটি এখন তাই সামনে উঠে এসেছে।