যশোরের বেনাপোলে ট্রেন ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ার পর সাড়ে সাত ঘণ্টা পার হলেও এখনো সচল হয়নি বেনাপোলের সঙ্গে খুলনার রেল যোগাযোগ।
ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক সরিয়ে না নেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সকাল থেকে এ রুটে যাত্রী পারাপার ও পণ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
ঠিক কখন রেল চলাচল স্বাভাবিক হবে এ বিষয়ে সংশিষ্ট কেউ নিদিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে উদ্ধার কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি বেনাপোল থেকে যশোরে ফেরত গেছে।
এদিকে, আহত চারজনকে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে রফিকুল নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
বুধবার (২০ এপ্রিল) সকাল ১০টায় খুলনা-বেনাপোল রুটে কমিউনিটি যাত্রীবাহী ট্রেনটি খুলনা থেকে বেনাপোল আসার পথে বেনাপোল ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে রেল ক্রসিংয়ে ট্রেন-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনার পর থেকে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে ট্রেন-ট্রাক সংঘর্ষে দুর্ঘটনার আশপাশ এলাকায় কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি বসতবাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এতে মাথা গোঁজার ঠাই হারিয়ে এক প্রকার মানবেতর জীবন যাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। তবে দুর্ঘটনার সময় ওইসব বাড়িতে থাকা মানুষ জন হতাহত হয়নি বলে জানা গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা হলেন, বেনাপোলের দিঘিরপাড় গ্রামের বস্তিবাসী মশিয়ার, মিন্টু, ছোট্টু, উজ্জ্বল ও গফফারসহ আরো কয়েকজন।
স্থানীয় পৌর কমিশনার রাশেদ আলী জানান, এ বাইপাস সড়কটি ব্যবহার করে প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর থেকে শত শত ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এছাড়া ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে এ রেলপথ ব্যবহার করে ট্রেন যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী এলাকা যশোরের নওয়াপাড়া ও খুলনায়। পাসপোর্টধারী যাত্রীরাও যাতায়াতে ব্যবহার করছেন রেলপথ। সড়কটি ব্যস্ততম হলেও সেখানে দির্ঘদিন ধরে রেলক্রসিংয়ে কোন গেট না থাকায় প্রায়ই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
বেনাপোল রেল স্টেশন মাস্টার আজিজুর রহমান বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জানান, বেনাপোল থেকে যশোর পযর্ন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেলপথে ১৩টি ক্রসিং রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র তিনটিতে গেট ও গেটম্যান রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ওই বাইপাস সড়কটিতে রেল ক্রসিংয়ে গেট ও গেটম্যান না থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত রেল লাইনের উপর ট্রাকটি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় এ পথে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রেলের উপর থেকে ট্রাকটি সরিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এর আগে সকাল বুধবার ১০টায় খুলনা-বেনাপোল যাত্রীবাহী কমিউনিটি ট্রেনটি খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে বেনাপোলের উদ্দেশে আসছিল। এসময় বেনাপোল ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে পৌঁছালে সেখানে বাইপাস সড়কে রেল ক্রসিংয়ে একটি পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে ট্রেনটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় বাঘারপাড়ার ফজলুর রহমানের ছেলে তাকিবুর, বাবর আলীর ছেলে আল আমিন, ঢাকার আক্কাছ আলীর ছেলে সৈকত ও যশোরের বসুন্দিয়ার আনোয়ারের ছেলে রফিকুল গরুতর আহত হয়। এদের মধ্যে একজনের পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।