ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবাল। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে তামিম নেতৃত্ব দেবেন শক্তিশালী আবাহনীর। অন্যদিকে কাগজে-কলমে কমশক্তির দল কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের নেতৃত্ব দেবেন মাশরাফি। গতকাল দুপুরে দুজনই দলের অনুশীলনে হাজির মিরপুর বিসিবি একাডেমির মাঠে। এক ফাঁকে দুই অধিনায়কের চুটিয়ে আড্ডাও চলে দীর্ঘক্ষণ। আড্ডার মাঝে লীগ প্রসঙ্গ আসতেই দুজনের মুখে একটাই শব্দ ‘তীব্র গরম’। তামিম ইকবালই সবার আগে বললেন, ‘এবার গরমে যে কত ক্রিকেটার অসুস্থ হবে তা বলা যায় না।’ মাশরাফি পরক্ষণেই বললেন, ‘ঠিকই বলেছিস, এটাই মাঠে বড় বাধা হবে। গরম নিয়ে দুজনের পরামর্শ- ক্রিকেটারের করণীয় এবং দলের লক্ষ্য নিয়েও কথা বলেন সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে। আজ মিরপুর শেরে বাংলা মাঠে গত আসরে চ্যাম্পিয়ন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের মুখোমুখি হবে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স বিকেএসপি-২ মাঠে প্রাইম দোলেশ্বরের মুখোমুখি হবে সিসিএস (ক্রিকেটে কোচিং স্কুল)। গাজী ও সিসিএস এবার প্রথম বিভাগ থেকে উঠে এসেছে। ১৯৭৪/৭৫ মওসুমে লীগের প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। এরপর ২০১০ পর্যন্ত ১২ বার তার শিরোপা ঘরে তোলে। এই ঐতিহ্যবাহী দলটি শেষ পাঁচ বছর খুব বাজে সময় পার করেছে। এবার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে পেয়ে তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু মাঠে লড়াইয়ে স্বপ্নের পথ কতটা সহজ হবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।
মাঠেই প্রমাণ দিতে মাশরাফি
প্রিমিয়ার লীগের এই আসরে আবাহনীর তুলনায় কাগজে কলমে কলাবাগান দুর্বল দল এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের বড় ভরসা জাতীয় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এটাই মাশরাফির আপাতত চ্যালেঞ্জ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুরু অবশ্যই ভালো আশা করছি। ভালো খেলতে হবে। তবে এক তরফাও হতে পারে, আবার চ্যালেঞ্জিংও হতে পারে। কলাবাগানের জন্যও এটা ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। সুপার লীগে ওঠা থেকে শুরু করে একটি ভালো অবস্থানে যাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একই গতিতে খেলতে হবে। একটা ম্যাচ এদিক-সেদিক হলে সমস্যা।’ কাগজে কলমে আবাহনী শক্তিশালী দল হওয়ায় কলাবাগানের থাকবে বাড়তি চিন্তা ও সতর্কতা। এই বিষয়ে অধিনায়ক বলেন, আবার আমরা ভালো খেলে ম্যাচটা জিতেও যেতে পারি। আর আমরা যদি ওই লেভেলের ক্রিকেট না খেলতে পারি, তাহলে একতরফা ম্যাচ হবে। তাদের বড় খেলোয়াড় আছে, আমাদের নেই-ব্যাপারটা তেমন না। এই মুহূর্তে ইতিবাচক চিন্তাই করছি।’
ছোট দলের অনেক বড় ভরসা হচ্ছে এই অধিনায়ক। নিজের ওপর দলের আস্থা নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘তারা আমাকে অনেক আশা করেই নিয়েছে। তাই আমারও একটা দায়িত্ব আছে। তারা আমার থেকে কী আশা করছে জানি না। তবে আমি আশা করি ভালো কিছুই দিতে পারবো।’ গরম নিয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি পেসারদের জন্য গরমটা বেশি চ্যালেঞ্জ হবে। আমার মনে হয় তাদের বড় স্পেলে বল না করিয়ে ছোট ছোট স্পেলে বল করালে ভালো হয়। এ ছাড়াও ব্যাটসম্যানদের জন্যও বলছি। আগের দিন থেকেই তাদের পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। যেন ম্যাচের দিন নিজেদের ফিট রাখতে পারে।’
অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন তামিম
ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত আবাহনী নাম। এই দলে তামিম ইকবাল এর আগে খেলেছিলেন ২০০৯ সালে। সেবার আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু পরের মওসুমেই তিনি অন্য দলে চলে যাওয়াতে দূরত্বই তৈরি হয় তার প্রিয় দল আবাহনীর সঙ্গে। এবার যেন ঘরের ছেলে ফিরে এসেছে নেতৃত্বের ভার কাঁধে নিয়েই। জাতীয় দলের সেরা এই ওপেনার লীগের প্রস্তুতি শুরু করেছেন সেঞ্চুরি দিয়ে। বড় দলের নেতা হিসেবে মাঠের বাইরের চাপটাও খুব ভালো জানা তার। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আবাহনী অনেক বড় দল। এখানে খেলার প্রেসারটাও অনেক বেশি। কিন্তু আমরা প্রস্তুত আছি। দলটিতে তরুণদের ভূমিকা বেশ ভালো হবে বলে মনে করি। আমাদের তিনজন ভালো বোলার আছেন। এর মধ্যে একজন তাসকিন। এ ছাড়াও ব্যাটিংটাও খারাপ না। আমি মনে করি মাঠের লড়াইটা ঠিক ভাবে হলে চ্যাম্পিয়নও হতে পারবো।’ প্রতিপক্ষ হিসেবে অধিনায়ক মাশরাফি। তার মুখোমুখি হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলেন, ‘আমি যখন জাতীয় দলে খেলি তখন তার (মাশরাফি) কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করি। কারণ আমি মনে করি শেখার কোনো শেষ নেই। কাল (আজ) তিনি যখন আমার বিপক্ষ দলের নেতৃত্ব দিবেন তখনও আমার শেখার আছে। সে কিভাবে দল পরিচালনা করে সেটিও দেখার বিষয় আছে। আমি মনে করি এটি আমার জন্য বেশ ভালো।’
এ ছাড়াও জাতীয় দলের অনেকেই থাকবেন প্রতিপক্ষ হিসেবে। এই বিষয়ে তামিম বলেন, ‘আমি মনে করি জাতীয় দলের যে ১৫ জন লীগ খেলবেন তাদের অনেক দায়িত্ব। একটা সময় ছিল যখন আমাদের ৫০ করার পর ১০০ করা খুব কঠিন হয়ে যেত। এখন কিন্তু আমাদের অনেক সেঞ্চুরি হয়। ৮০/৯০ করে রান হয়। লীগে যে তরুণদের এমন সমস্যা হবে তাদেরকে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে এগিয়ে নিতে পারি। আমি মনে করি আমাদের জাতীয় দলের অভিজ্ঞতা লীগে ভালো ভূমিকাই রাখবে।’ অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমে মাঠে কী করতে হবে সেটিও জাতীয় দলে অভিজ্ঞতা থেকে কাজে আসবে মনে করেন তিনি। তামিম বলেন, ‘দেখেন আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে অবশ্য এই গরমে তরুণদের পরমর্শ দিতে পারি। তাদের কিভাবে এই গরমে খেলতে হবে। কী করতে হবে জানাতে পারি। আমি দলগুলোর প্রতি অনুরোধ করবো যেন মাঠে ক্রিকেটারদের জন্য ভালো পানির ব্যবস্থা করা হয়। নয়তো এই গরমে অনেক ক্রিকেটারই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।’
দলগুলোর অধিনায়ক ও কোচ যারা
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব
অধিনায়ক: শুভাগত হোম চৌধুরী
কোচ: আবদুল করিম জুয়েল
প্রাইম দোলেশ্বর
অধিনায়ক: ফরহাদ রেজা
কোচ: মিজানুর রহমান বাবুল
আবাহনী লিমিটেড
অধিনায়ক: তামিম ইকবাল খান
কোচ: খালেদ মাহমুদ সুজন
কলাবাগান ক্রীড়া চক্র
অধিনায়ক: মাশরাফি বিন মুর্তজা
কোচ: জালাল আহমেদ চৌধুরী
কলবাগান ক্রিকেট একাডেমি
অধিনায়ক: মাহমুদুল হাসান লিমন
কোচ: ওয়াহিদুল গনি
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ
অধিনায়ক: নির্ধারণ হয়নি
কোচ: খালেদ মাসুদ পাইলট
মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব
অধিনায়ক: মুশফিকুর রহীম
কোচ: সোহেল ইসলাম
শেখ জামাল ধানমিন্ডি ক্লাব
অধিনায়ক: মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
কোচ:
ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্লাব
অধিনায়ক: নাদিফ চৌধুরী
কোচ: কাজী ইমদাদুল বাশার রিপন
ব্রাদার্স ইউনিয়ন
অধিনায়ক: শাহরিয়ার নাফীস
কোচ: সারওয়ার ইমরান
ক্রিকেট কোচিং স্কুল
অধিনায়ক: রাজিন সালেহ
কোচ: আসাদুল্লাহ বিল্পব
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স
অধিনায়ক: অলক কাপালী
কোচ: মোহাম্মদ সালাউদ্দিন