বক্সিংয়ের কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীর ছোটভাই রহমান আলী কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। যাকেই কাছে পাচ্ছেন তাকেই জড়িয়ে ধরছেন। হাউমাউ করে কাঁদছেন তিনি। দু’হাত আকাশের দিকে তুলে চোখ বন্ধ করছেন। প্রার্থনা করছেন। তাকে ঘিরে আছেন অনেক শোকার্ত মানুষ। এ ঘটনা একটি চার্চের। এই চার্চেই তাদের পিতা এক সময় প্রার্থনা করতেন।
কিং সলোমন মিশনারি ব্যাপ্টিস্ট চার্চে মোহাম্মদ আলীর জন্য দু’ঘন্টার প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন রহমান আলী ও তার স্ত্রী ক্যারোলিন। আলী ভাইয়েরা বড় হয়েছেন কেনটাকির লুইসভিলের পশ্চিম প্রান্তে। সেখান থেকে খুব বেশি দূরে নয় এই চার্চ। রোববার মোহাম্মদ আলী স্মরণে শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে আবেগঘন প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। শহরের বেশির ভাগ মানুষ তাদের সবচেয়ে সেলিব্রেটেড ছেলের জন্য এ প্রার্থনা সভায় সমবেত হন। এ সপ্তাহের শেষের দিকে রাজনীতিক, সেলিব্রেটি, ভক্তরা মোহাম্মদ আলী স্মরণ সভায় যোগ দেবেন শুক্রবার। তাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসার কথা রয়ছে। মোহাম্মদ আলী তার দাফন অনুষ্ঠান উন্মুক্ত রাখতে বলেছিলেন। সেই পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। এ জন্য রোববার তার মৃতদেহ একটি বিমানে করে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় নিজের জন্মভূমিতে। তবে রোববার শহরজুড়ে তার যে স্মরণসভা হয়েছে তাতে সবাই মোহাম্মদ আলীর ধর্ম নিয়ে কয়েকটি শব্দ বার বার উচ্চারণ করেছেন। তা হলো: নদী, হ্রদ, পুকুর, ঝরনা, সমুদ্র সব কিছুরই আলাদা নাম আছে। কিন্তু এর সবটাই ধারণ করে পানি। তাই ধর্মেরও বিভিন্ন রকম নাম আছে। তবে সবগুলোতেই রয়েছে সত্য বা আস্থা।
রোববার সন্ধ্যায় লুইসভিলে ইসলামিক সেন্টারে আয়োজন করা হয় এক স্মরণ সভা। এতে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণের মানুষ যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন মুসলিম, খ্রিস্টান, ক্যাথলিক, ইহুদি। ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে যখন অধিকতর বিভক্তি দেখা দিয়েছে সে সময়ই মৃত্যু হলো মোহাম্মদ আলীর। তবে ওই স্মরণসভায় যারা যোগ দিয়েছিলেন তারা রিপাবলিকান দলের বহুল বিতর্কিত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামটি উল্লেখ করেন নি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সব মুসলিম প্রবেশ তিনি অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেবেন। তার এমন অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন মোহাম্মদ আলী। তিনি ইসলাম গ্রহণ করার বিষয়টি ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি করে। তিনি বিরোধিতা করেছিলেন ভিয়েতনাম যুদ্ধের। এ জন্য তাকে তার বক্সিং ক্যারিয়ারের মূল্য দিতে হয়েছে অনেক বছর। তিনি সারাজীবন বলে গেছেন, সব ধর্মের ও বর্ণের মানুষকে শান্তির জন্য একত্রিত হতে হবে। উল্লেখ্য, মোহাম্মদ আলী ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হওয়ার পরেও কিং সলোমন মিশনারি ব্যাপ্টিস্ট চার্চে মাঝে মাঝে যোগ দিতেন। তার পিতা ক্যাসিয়াস ক্লে সিনিয়র ছিলেন একজন পেইন্টার। তিনি ছিলেন এই চার্চের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি যিশু খ্রিস্টের একটি মুরাল অঙ্কন করেছেন। ওই চার্চের সহকারী পাস্তুর চার্লস এলিয়ট তৃতীয় বলেছেন, এই শহরের জন্য মোহাম্মদ আলীর চেয়ে বেশি কোন মানুষই করে নি। তিনিই গ্রেট। এলিয়ট আরও বলেন, তার নিজের দাদী এক সময় আলী পরিবারের একজন আয়া ছিলেন। তিনি দেখেছেন বিস্ফারিত চোখের আলীকে। তাদের বাড়িতে ছিল একটি তোতাপাখি। মোহাম্মদ আলীর জন্মের পরই সে বলতোÑ হেয়ার কামস দ্য চ্যাম্প, হেয়ার কামস দ্য চ্যাম্প।