ইরানি বীর যুবক, মাতৃ ও জন্মভূমি ‘সিরাজ’। নাম মির্জা মোহাম্মদ বন্দে আলি। বয়স যখন ১৩, এই অল্প বয়সেই মনে প্রাণে প্রাপ্তবয়স্ক। তখন থেকেই রপ্ত করেন যুদ্ধ কৌশল। যে বয়সে তাঁর দুরন্তপনায় মেতে উঠার কথা সে বয়সেই লেগে গেলেন দেশ রক্ষার কাজে। এ ফাঁকে ‘সিরাজে’ অনেক সময় গড়িয়ে গেল। ততদিনে পরিপূর্ণ যুবক। বিবাহ করেন ইরানি সুন্দরী শরফুন্নিসাকে। বন্দে আলির জন্ম ১৬৭৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, ইরানের ‘সিরাজ’ প্রদেশে। ‘সিরাজে’ নিবিড় অরণ্য ছিল, নদী ছিল, ছিল আদিগন্ত শস্যের মাঠ। বাহারি সব ফুলের গাছ, ফুলের সৌরভ আর ছায়াঘেরা পথ-প্রান্তরের শৈশবেই তাঁর চোখে সবুজ স্বপ্ন এঁকে দিয়েছিল। এই নিবিড় সবুজ তৈরির স্বপ্নই তাঁর সারাজীবনের সঙ্গী হয়েছিল। কত সুন্দর এ মানুষটি, কত সুন্দর তাঁর মন। এক সময় নিজ মাতৃভূমি ‘সিরাজ’ থেকে চলে এলেন ভারতবর্ষে। তিনি মুঘল সম্রাট কর্তৃক ‘আলিবর্দী খান’ এবং ‘মহব্বত জঙ্গ’ উপাধিতে ভূষিত হন। আলিবর্দী খান জন্মভূমি ‘সিরাজ’ থেকে ভারতবর্ষে এনেছিলেন রকমারি ফল ফুলের চারা ও বীজ। আর বাংলার বুকে বাহারি বাগিচা করার মূল উৎস আদি জন্মস্থান ‘সিরাজ’ । আলিবর্দী খান তাঁর নবাবি আমলে দু’বাংলায় গড়ে তুলেছিলেন অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ ও বাগানবাড়ি। সেখানে স্থান পায় অসংখ্য ইরানি গাছপালা। শুধু নবাব আলিবর্দী নন, তাঁর অতি আদরের নাতি সিরাজউদ্দৌলা, যার জন্ম ১৯-৯-১৭২৭, তৎকালীন দু’বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদ। তিনিও কিশোর বয়সেই চির সবুজ উদ্যান সম্পর্কে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন। নবাব আলিবর্দীর নবাবি আমলে অসংখ্য ইরানি কারিগরদের সু-নিপুণ বাহারি সোনা-রূপার কারুকার্য ও নিখুঁত কাচের কজে সেজে ছিল, সিরাজের স্বপ্ন রঙে তৈরি হিরাঝিল প্রাসাদ। পারস্য ও দেশীয় লোকেরা দিনরাত এক করে দীর্ঘদিন ধরে এর নির্মাণ কাজ শেষ করেন। হিরাঝিলে যুবরাজ সিরাজউদ্দৌলা ও লুৎফুন্নিসা নিজ হাতে পারস্যের রকমারি ফুল ও ফলের বৃক্ষ রোপণ করেন। বছর জুড়ে ফোঁটা সিরাজের প্রিয় ইরানি ফুলগুলো ‘হিরাঝিলের’ বাগানকে বেশ মোহনীয় করে তুলেছিল। পারস্যের গোলাব, নাসরিন, ইয়াস, নার্গিস ‘হিরাঝিলের’ অন্যতম আকর্ষণ ছিল। ১৭৪৫ সালে যুবরাজ সিরাজউদ্দৌলার বিবাহ উৎসবে সুদূর ইরান থেকে বহুসংখ্যক আত্মীয়-স্বজন, আমির-ওমরাহ, শায়ের-কবি ও আমত্যবর্গ যোগদান করেন। নবাব আলিবর্দী অতিথিদের প্রত্যেককে ইরানি সুগন্ধি উপহার হিসেবে বিতরণ করেন। ‘সিরাজ’ পারস্যের ঐতিহ্যবাহী প্রদেশ। সিরাজে বাংলার হৃদয়ের নবাব আলিবর্দী খানের জন্ম। ‘সিরাজ’ আলিবর্দীর মাতৃভূমিও।তবে তাঁর পিতৃভূমি ইরাকের পবিত্র কারবালা প্রদেশে। ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে আনুমানিক ৭০০ কি.মি. দূরে অবস্থান করছে ঐতিহ্যের গর্ব ‘সিরাজ’।সিরাজের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানসমূহ…সিরাজ জামি ধঃরয় মসজিদ( সিরাজের – প্রাচীনতম এবং প্রথম মসজিদ),শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত স্টীটাদেল তধহফ রাজবংশের রাজত্ব কালে নির্মিত… করিমখান দুর্গ, জাহান নামো গার্ডেন সিরাজের উত্তর পূর্বে অবস্থিত, ঊৎধস গার্ডেন,গার্ডেন আল-মুজাফফর এবং ওহলঁরফং প্রফুল্ল বাগান শয্যা,সিরাজ ঐতিহাসিক ভবন(চারটি ঋতু অট্টালিকা,গার্ডেন, জাদুঘর, প্রিন্স বাগান প্যাতিলিয়ন, আইনজীবী সমাধি),ঝযধয পযবৎধময সমাধি ভবন, বাগান সেলজুক, ইরান ও সিরাজের সবচেয়ে ঐতিহ্যগত বাজার… ধিশরষবাজার, ধিশরষবাথ, ধিশরষ মসজিদ ভবন, ধুঁফ ফড়ঁষধ উবরষধসররাজত্ব কালে নির্মিত হয়েছিলকুরআন বরকতময় সিরাজ গেট, সিরাজেরপ্রখাত বাগান… ইধমব হধৎধহলরংঃধহ য়বধিস. ‘সিরাজ’ একটি দৃষ্টিনন্দন প্রদেশ। সেখানকার গাছপালা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উদার মনে স্বাগত জানাচ্ছে সকলকে। সিরাজের নজর কাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আগত পর্যটকদের এতটাই আকৃষ্ট করে যে… তাইতো পর্যটকরা প্রিয়জনের সঙ্গে বছরে একাধিকবার সিরাজ দর্শনে বেরিয়ে পড়েন। বাংলা সাহিত্য পুস্তকে যে সব কবির নাম শীর্ষে দেখতে পাই তাদের মধ্যে অন্যতম শেখ সাদি ও মওলানা হাফিজ। তাদের স্মৃতিসৌধ ‘সিরাজে’ রয়েছে। ‘পাসারগার্দ’ সিরাজের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। ১৭৪৫ সাল- ১৩ ফেব্র“য়ারি যুবরাজ সিরাজউদ্দৌলা ও লুৎফুন্নিসার শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয় তৎকালীন দু’বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে। উক্ত ঐতিহাসিক বিবাহতে পারস্যের ‘সিরাজ’ প্রদেশ থেকে এসেছিলেন বহু নামি দামি ব্যক্তিত্ব। তাদের আমন্ত্রণে যুবরাজ সিরাজ ও স্ত্রী লুৎফা প্রাণপ্রিয় নানাজান বাংলার বীর নবাব আলিবর্দী খানের জন্ম ও মাতৃভূমি পারস্যের ঐতিহ্যবাহী ‘সিরাজ’ প্রদেশ ভ্রমণে আসেন। বিয়ের অল্প দিন পরে বলা যায় মধুচন্দ্রিমায় সিরাজ ও লুৎফুন্নিসা ‘সিরাজ’ গিয়েছিলেন। ওই সময়ে যুবরাজ সিরাজউদ্দৌলা ও বেগম লুৎফুন্নিসাকে ‘সিরাজ’ শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে গুণিজনেরা রাজকীয় সংবর্ধনা দেন। আজকের ‘সিরাজ’ পারস্যের একটি অত্যাধুনিক প্রদেশ। তাইতো সিরাজ আধুনিক শহরের শ্রেষ্ঠত্বের তকমা গায়ে লাগিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্যে। পারস্যবাসীর পরিকল্পনা মাফিক গড়ে ওঠা আধুনিক শহরের সেরা উদাহরণ এটি। সিরাজ প্রদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো নান্দনিকতা। নিরাপদ ও বসবাসের প্রিয় শহরগুলোর তালিকায় এ শহরকে এগিয়ে রাখেন অনেকেই। ভ্রমণ আর ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি সময় কাটানোর জন্য প্রতি বছরই বিভিন্ন দেশের অসংখ্য নাগরিক ছুটে আসেন ঐতিহ্যবাহী এই শহরটিতে। রাতের ‘সিরাজ’ অন্য জগতে নিয়ে যাবে পর্যটকদের। যে পরিকল্পনা ধরে ‘সিরাজ’ নির্মিত হচ্ছে নিত্যনতুন ভাবে, তাতে সামনের দিনগুলোয় তা হবে পর্যটকদের জন্য গোছানো ও স্থাপনার নান্দনিকতায় ভরপুর এক আধুনিক শহর। পারস্যের গর্ব ‘সিরাজ’…একেবারে ছবির মেতা সাজানো-গোছানো। ফ্যাশন, স্টাইল, গ্ল্যামার, বিউটি শপিংÑএ শব্দগুলো ‘সিরাজের’ সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। ইতিহাস-ঐতিহ্য, রাজনীতি, শিক্ষা, বিনোদন, ফ্যাশন, শিল্পকলা সব দিক থেকে ‘সিরাজের’ গুরুত্ব ও প্রভাব এটিকে ইরানের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত করেছে। আলোর ঝলকানিতে রঙিন এই ‘সিরাজ’ যেন পটে আঁকা ছবির মতোই এক স্বপ্নপুরী। অনেকেই দেশের বাইরে থেকে শপিং করতে পছন্দ করেন। লম্বা ছুটি পেলে অথবা সামনে বড় কোন উপলক্ষ থাকলে ‘সিরাজ’ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পারস্যের এই শহর যেন এক স্বপ্নপুরী, সব কিছু পারফেক্ট এবং পরিকল্পনা মাফিক সাজানো-গোছানো। সিরাজ প্রদেশে ইরানি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের রকমারি সব খাবারের রেষ্টুরেন্ট আপনার ভোজনবিলাস মেটাবে। ইরানে মূলত মসলাসমৃদ্ধ কিন্তু ঝালবিহনী চেলো কাবাব ও বাকেরী কাবাব সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার। বিভিন্ন প্রকার রুটি অন্যতম প্রধান খাবার। এখানকার অনেক রেষ্টুরেন্টে ফাস্ট ফুড পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মতো ভাত, মাছ ও মাংস পাওয়া যায়Ñ যা খুবই দামী। একানকার আইসক্রীম বেশ জনপ্রিয় ও সুস্বাদু। আইসক্রীমকে ইরানীরা ‘আইচপার্ক’ বলে থাকে। এখানে চকলেট, পীচ, চেরী, কফি, আপেল, স্ট্রবেরীসহ বিভিন্ন ফলের ফ্লেভারের আইসক্রীম পাওয়া যায়Ñ যা ইউরোপে খুব জনপ্রিয়।
বহু মূল্যবান পাথর ও খনিজ পদার্থের দেশ ইরান। আর প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নৈসর্গিক শোভায় সাজানো সুন্দর উপত্যকা ঘেরা পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ ইরানের…‘সিরাজ’ প্রদেশ। এখানে অরণ্য শোভা ও ফুলের সমাহার খ্বুই রমণীয়। সিরাজের অর্থনীতি পর্যটন, হস্ত ও কুটির শিল্প, বনজ সম্পদ, চাষাবাদ সহ বহুবিধ বিষয়াদির ওপর নির্ভরশীল। সমতল, পাহাড়-পর্বত, বনাঞ্চল ঘিরে গড়ে উঠেছে পারস্যের এই সুন্দর ভূমি ‘সিরাজ’। সন্ধ্যায় আলোর মালায় সেজে ওঠে বাগ-বাগিচায় ঘেরা পারস্যের এই ঐতিহ্যবাহী শহর। সবুজ প্রকৃতির মাঝে ‘সিরাজের’ নৈসর্গিক শোভা অত্যন্ত রমণীয়। ‘সিরাজের’ ইতিহাস বহু প্রাচীন। এক সময় বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা, দিল্লি এবং আগ্রার মোঘল সম্রাট ও নবাবরা গ্রীষ্মকালীন গরম এড়াতে ‘সিরাজে’ পাড়ি জমাতেন। বাংলার প্রাণপ্রিয় নবাব আলিবর্দী খানের মাতৃভূমি ও জন্মভূমি…পারস্য খ্যাত ইরানের ঐতিহ্যবাহী ‘সিরাজ’ প্রদেশ। এখানেই নবাব আলিবর্দী খান তাঁর শৈশবও যৌবনের বহুকাল কাটিয়েছেন। তাইতো বাংলায় তার সুদীর্ঘ নবাবি শাসনামলে বাংলার মানুষকে মাতিয়েছেন পারস্যের সব সৌরভে। আজকের পারস্য সমাজে পারফিউমের ভূমিকা বিশাল। মন প্রফুল্ল রাখতে তাদের পারফিউম চাই-ই চাই। শারীরিক সৌন্দর্য, গর্জিয়াস পোশাক-আশাকের পাশাপাশি সুবাসিত পারস্যের পারফিউমের গুণে পারস্যবাসী সকলের নজর কাড়েন। পারস্যবাসীকে তাঁদের ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধের সৌরভ মুহূর্তের মধ্যে এনে দেয় চাঙ্গা ভাব, এতে তাঁরা পারফিউমের পরশে স্বর্গীয় ভাব অনুভব করেন। ইরানের আধুনিক সমাজে কমবেশি সবাই সর্বক্ষেত্রে বিশ্বস্ততার সাথে সফলতার পরশ পেতে আগ্রহী। তাইতো সফলতার নাগাল পেতে তাঁরা পোশাক সচেতনতার সঙ্গে পারফিউম ব্যবহারেও মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়ে থাকেন। তাই নতুন দিনের ইরানের রকামরি সব সৌরভের ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তাইতো পারস্যের মনমাতানো সব সুবাসে বিশ্ববাসী আজ মুগ্ধ।
পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সাথে সাথে ইরানও ফ্যাশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে ফ্যাশন এক বিশাল শিল্পে পরিণত হয়েছে। পারস্যের মেঠো পথ থেকে শুরু করে শহরের অলিগলি পর্যন্ত সর্বখানে তারুণ্য হয়ে উঠেছে ফ্রাশন প্রিয়। দেশটির তারুণ্য তার আপন চিন্তাচেতনায় সু-নিপুণ করে তৈরি করে প্রিয় ফ্যাশন। পারস্যের গ্রামের মতো এখন শহরের তারুণ্যরাও এইসব কাজে অনেকাংশে এগিয়ে রয়েছে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে। আবার কর্মব্যস্ত নারী-পুরুষ তাদের সংসার সাজিয়ে বাড়তি আয়ের জন্য কাজ করছেন ফ্যাশন নিয়ে। ‘সিরাজ’সহ দেশটির সব প্রদেশে গড়ে ওঠেছে রকমারি সব ফ্যাশন হাউজ। এইসব ফ্যাশন হাউজে কাজ করছে পারস্যের তারুণ্য সমাজের একটি বৃহৎ অংশ। এইসব ফ্যাশন হাউজে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে নতুন নতুন ডিজাইনের বাহারি সব পোশাক, অলংকার সহ আরো অনেক কিছু। পারস্যবাসীরা কেউ বসে নেই। সবাই কিছু না কিছু করছে। ফ্যাশন শিল্পের মাধ্যমে সে দেশের তারুণ্য হয়ে উঠেছে স্বাবলম্বী। ক্রমেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নিত্য নতুন ফ্যাশনের দিকে শুধু যে দেশটি পড়ে আছে তাই নয়। বর্হিবিশ্বেও ছড়িয়ে যাচ্ছে পারস্যের ফ্যাশন। পালাবদলে বদলে যাচ্ছে সময়। বদলে যাচ্ছে দিন। দিন বদলের হাওয়া লেগেছে পারস্যের সৌরভে। না, শুধু পারস্যের সৌরভেই লাগেনি। লেগেছে দেশটির তারুণ্যের গায়েও। তাইতো পারস্যের তারুণ্য নিজেই নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছে আধুনিক ফ্যাশন শিল্পের মাধ্যমে। সিরাজ প্রদেশের আবহাওয়ায় রয়েছে বৈচিত্র্য। এখানে রয়েছে শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম ও শরৎকাল। এখানকার অধিবাসীর অধিকাংশ প্রাচীন পারস্যের অধিবাসী। এছাড়া বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে ‘সিরাজে’। এখানে ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ, ইরাক, রাশিয়া, চীন, জার্মান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান সিরিয়া, ইয়েমেন থেকে আসা অনেক অভিবাসী রয়েছে।
আমি ইরানে গিয়ে দেখতে পাই ইসলামের সব গৌরবময় স্থাপনা যা ইসলামি কারিগরিতার ঐতিহ্য বহন করছে। আমরা অনেকে হয়তো শুনেছি যে, এককালে ভারতের মোগল স¤্রাট ও নবাবদের নির্মিত শিশ মহল (ফার্সিতে শিশে কারি, আর বাংলায় কাচের ঘর) যা ছিল নজর কাড়া সুন্দর। ইরান ভ্রমণে বুঝতে পেরেছি যে, এটা তাদের জন্য তেমন বড় কিছু নয়। এখানকার দক্ষ কারিগরেরা বিভিন্ন মসজিদ এবং ইসলামি স্থাপনাসমূহে এ ধরনের নিখুঁত কারিগরির ব্যবহার করে থাকেন। এই শিল্পটি আমার মনে হয় একান্ত ইরানের। কারণ ভারতের মোগল স¤্রাট ও নবাবরা ইরান থেকেই ভারতে এসেছিলেন। পরবর্তীতে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সময় নবাব আলিবর্দীসহ অন্যান্য নবাব ও স¤্রাটরা নিজ মাতৃভূমি/পিতৃভূমি ইরানের কারিগরদের সহযোগিতায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে দৃষ্টি নন্দন মহল ও বাগবাগিচা দাঁড় করান। যেমনটি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং তাঁর প্রিয় নানাজান নবাব আলিবর্দী খান বাংলার হৃদয়ে দাঁড় করিয়েছিলেন কিছু দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থাপনাসমূহ : নবাব সিরাজের স্বপ্ন রঙের বাস্তব রূপ হিরাঝিল, মদিনা মসজিদ, কাঠের তৈরি ইমাম বাড়া, মনসুরাগঞ্জ প্যালেসসহ আরও বেশকিছু বাগ-বাগিচা ও স্থাপনা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লোকেরা ‘সিরাজ’ ভ্রমণ করতে আসেন। সিরাজে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শিল্পকলা, বিজ্ঞান, ধর্মীয় সহ আরও অন্যান্য বিষয়াদিতে শিক্ষার মাধ্যম। এখানে রয়েছে অনেকগুলো গ্যালারি, শহরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নানারকম সৌকর্যপূর্ন ভাস্কর্য। এখানে বিদেশী পর্যটকদের জন্য রয়েছে ইংরেজি, বাংলা, হিন্দিভাষী ইরানী গাইড। এখানে রয়েছে অনেকগুলো পার্ক ও বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মাযার। রয়েছে চিড়িয়াখানা, যেখানে অনেক বণ্যপ্রাণী রয়েছেÑ যা পর্যটককে আকৃষ্ট করে। ‘সিরাজ’ পর্যটকদের জন্য অতি আকর্ষণীয় স্থান। আর সে জন্য এখানে হোটেল-মোটেলের সংখ্যা প্রচুর।নানা প্রকৃতির কলকারখানা রয়েছে সিরাজে। পর্যটন স্বর্গ সিরাজে বসবাসের জন্য রয়েছে অনেক আবাসিক হোটেল।