আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা থেকেঃ ভারী বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র ও জিঞ্জিরাম নদীতে গত ২৪ ঘন্টায় ১০ সেঃ মিঃ পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল­ারচর ইউনিয়ন ও ফুলছড়ি উপজেলার দূর্যোগ প্রবণ এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নসহ দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের মোট ৩ হাজার ২’শ ৩৯টি পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে ২’শ ৭৫টি পরিবারের ঘর-বাড়িতে পানি উঠেছে। উত্তাল ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে ৩’শ ৪২টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রায় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী ভাঙ্গনে হুমকির সম্মুখীন। নদী তীরবর্তী শত-শত একর পাটের জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে জানা যায়।
জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদীতে ক্রমাগত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল­ারচর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত ২ হাজার পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পরেছে। সেই সঙ্গে ১’শ ৩টি পরিবারের ঘরে পানি উঠেছে। রা¶সী ব্রহ্মপুত্রের অবিরাম ভাঙ্গনে ইউনিয়নের সিঁধাই ও হাঁসধরা চরের ২’শ পরিবার বসতভিটা হারিয়ে ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নদী তীরবর্তী নিচু জমির পাট পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় চাষীরা বাধ্য হয়ে অপরিপক্ক পাট কাটা শুর“ করেন।
এদিকে ফুলছড়ি উপজেলার প্রত্যš— ও দূর্যোগ প্রবণ এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন চরের ১ হাজার ২’শ ৩৯টি পরিবার পানিবন্ধি হয়ে দূর্বিসহ জীবনযাপন করছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ১’শ ৭২টি পরিবারের ঘরে পানি ওঠায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে দূর্বিসহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। উক্ত ইউনিয়নের বিশেষ করে পাগলার চর, তিনথোপার চর, বুলবুলীর চর, হরিচন্ডি চর, মাগুরীঘাট, সন্যাসীর চর, ধলীপাটাধোয়া চর, কিশামতধলী ও পশ্চিম জিগাবাড়ি চরে প্রমত্ত ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনে গত এক সাপ্তাহের মধ্যে ১’শ ৪২টি পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হন। বসতভিটা হারিয়ে সহায়-সম্বলহীন পরিবারগুলো নিজ ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের আতœীয়-¯^জনের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে যাযাবর জীবন যাপন করছেন। ক্রমাš^য়ে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে রা¯—াঘাট। দেবে যাচ্ছে কালভাট। এতে করে চলাচলের ¶েত্রে জনদূর্ভোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় ইউনিয়নের তিনথোপার চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরিচন্ডি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যায়ল, সন্যাসীর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যায়ল ও দ¶িণ ধলীপাটাধোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যায়ল হুমকির সম্মুখীন। পানিতে ছোট চরগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ায় স্কুলে শি¶ার্থীদের উপস্থিতি অনেকাংশে কমে গেছে। পানি যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষগুলো ডাকাত আতংকে ভুগছেন। গর“ চুরির ভয়ে অনেকে দলবেধে রাত জেগে গোয়ালঘর পাহারা দিচ্ছেন।
চরাঞ্চলের অধিকাংশ বসতবাড়িতে পানি না ওঠা এবং সাহসিকতার সহিত দূর্যোগ মোকাবেলা প্রসঙ্গে মোল­ারচরের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল হাই ও এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান বলেন, ভৌগলিক অবস্থার কারনে চরাঞ্চলে বসবাসরত জনসাধারনের জীবনযাত্রার মান এমনিতেই নিম্ন, তার উপর বিভিন্ন সময় নানা দূর্যোগ লেগেই আছে। এ অঞ্চলের লোকগুলোর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বেসরকার েেসচ্ছাসেবী সংগঠন গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (এটক) সাধারণ জনগনকে দূর্যোগ মোকাবেলার জন্য নানা প্রশি¶ণ দিয়ে সচেতন করে তুলেছে। যার ফলে তারা অতি সহজে দূর্যোগ মোকাবেলা করতে পারেন এবং প্রাণহানীসহ বড় ধরনের ¶য়¶তির হার কম। চরের প্রায় প্রতিটি বসতভিটা উঁচু করে দেয়ায় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত পরিবারের সংখ্যা কম।