ঢাকায় কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে নিহত ‘জঙ্গি’ দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ (২২) দীর্ঘ এক বছর ধরে উধাও ছিলেন। তবে মাঝে মাঝে মুঠো ফোনে বিভিন্ন নম্বর থেকে পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলতেন। এক সপ্তাহ আগেও বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলেছেন।
বুধবার সকালে র্যাব এর একটি বিশেষ দল বাড়িতে যাওয়ার পর আব্দুল্লাহ নিহত হওয়ার খবর পান পরিবারের লোকজন। এর আগে তারা জানতেন না আব্দুল্লাহ নিহত হওয়ার খবর।
আব্দুল্লাহ্ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউপি’র বল্লবপুর গ্রামের সোহরাব আলী’র ছেলে। পেশায় রাজ মিস্ত্রি জোগাল সোহরাবের ৫ ছেলে এক মেয়ে’র মধ্যে আব্দুল্লাহই ছিলো ৪ নম্বর ছেলে। মা মোসলেমা খাতুন। পেশায় গৃহিনী।
আব্দুল্লাহ্ নবাবগঞ্জে প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ে ৫ শ্রেণি পর্যন্ত পড়া-লেখা শেষে নওগাঁ জেলায় একটি মওমি মাদরাসায় ভর্তি হয়। পরে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে দেবই কাজিরবাদ আলিম মাদরাসা থেকে ২০১০ সালে জিপিএ-৫ নিয়ে দাখিল পাস করে। একই মাদরাসা থেকে ২০১২ সালে জিপিএ-৫ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে আলিম। এর পর এক বছর আর বাসায় আসেনি আব্দুল্লাহ।
সে ছিলো বাড়ি থেকে উধাও। তবে মাঝে মাঝে বিভিন্ন নম্বর থেকে মোবাইল ফোন করে জানায়, রূপগঞ্জে দেবই কাজিরবাদ আলিম মাদরাসাতেই সে ফাজিল পড়ছে। কিন্তু বাস্তবতায় ওই মাদরাসায় ফাজিলে পড়ার কোন সুযোগ নেই। আলিম পর্যন্তই পড়া-লেখা হয় সেখানে।
আব্দুল্লাহ’র মা মোসলেমা খাতুন জানান, যে সব নম্বর থেকে আব্দুল্লাহ্ ফোন দিতো কথা বলার পর বন্ধ থাকতো ওইসব নম্বর। বুধবার সকালে র্যাব এর একটি বিশেষ দল বাড়িতে আসার পর আব্দুল্লাহ নিহত হওয়ার খবর পান পরিবারের লোকজন। এর আগে তারা জানতেন না আব্দুল্লাহ নিহত হয়েছেন।
এক সপ্তাহ আগেও বড় ভাই রাজমিস্ত্রি নূরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন আব্দুল্লাহ। আরেক ভাই কাঠমিস্ত্রি আবুল কালাম আজাদ জানান, মাঝে মাঝে ফোন করে মা,বাবা, ভাইদের সাথে আব্দুল্লাহ কথা বললেও আমরা পরে ওই নম্বরে ফোন করলে পেতাম না তাকে।
একই কথা জানালেন, আরেক ভাই রাজমিন্ত্রি আব্দুল সালাম। তিনি জানালেন, বাবা সোহবাব আলী এক বয়সের ভাবে নুয়ে পড়েছেন। কানে শুনেন কম। আমাদের সব চেয়ে ছোটভাই মোহাম্মদ আলী শেরপুর পলিটেকনিক কলেজে পড়া-লেখা করে। একমাত্র বোন মাসুদাকে বিয়ে দিয়েছি দু’বছর আগে পাশের গ্রামেই। আমরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছিনা আমার ভাই জঙ্গি। সে মারা গেছেন। এ নিয়ে তারা আতংকে আছেন। থানা থেকে পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। বলেছেন, তারা কেউ যেনো বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র না যায়।
নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন জানান, সোহরাব আলী ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পরিবার নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন। তারা নওগাঁতেই বসবাস করতেন। সেখানে অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন আছেন। পরে পেশাগত কারণে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে এসে বসবাস শুরু করেন তারা।