অবশেষে কাটলো মোহাম্মদ আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞার পাঁচটি বছর। গতকাল থেকে তার ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার ওপর থেকে উঠে গেছে নিষেধাজ্ঞা। এখন তার ব্যাট মাঠের সবুজ ঘাসে আবারও মুক্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবে। তবে এখনও তার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার অনিশ্চয়তা কাটেনি। বিসিএল তিনি খেলতে পারছেন না। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু তা নিশ্চিত করেছেন। আশরাফুলকে নিয়ে বিসিবির কোনো নির্দেশনা নির্বাচক কমিটিতে না থাকায় বিসিএলের ক্রিকেটার চূড়ান্ত তালিকাতে তার নামই রাখেনি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। অন্যদিকে বিসিবি তাকিয়ে আছে আইসিসির দিকে। আশরাফুলের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার প্রসঙ্গে বিসিবির সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী গতকাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আইসিসির কাছে প্লেয়ার গুড অব কন্ডাক্ট’ চেয়ে মেইল পাঠানো হয়েছে। সেটা পেলেই আর কোনো বাধা থাকবে না আশরাফুলের। ঘরোয়া লীগেও খেলতে পারবেন, বিসিএলও খেলতে পারবেন তিনি। তবে সেটা নির্ভর করছে নির্বাচকদের ওপর। তারা চাইলেই খেলা সম্ভব হবে।’
অন্যদিকে মোহাম্মদ আশরাফুল গতকালই দেশে ফিরেছেন। তিনি জানেন নিষেধাজ্ঞা কেটে গেলেও তার ঘরোয়া ক্রিকেটে নতুন ভাবেই লড়াই করতে হবে। মাঠে ফেরার বিষয়ে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরতে পারায় আমি খুশি। নিজের ভুলের কথা আমি জানি। এবার সে ভুলের দায় পরিশোধের পালা। আমার এখনও সেরাটা দেয়ার বাকি আছে। সেটা দিয়েই আমি সবার মন জয় করতে চাই।’ ঘরোয়া লীগে ফিরতে পারলেও জাতীয় দলে ফেরা প্রসঙ্গে আশরাফুল বলেন, ‘আমি জানি জাতীয় দলে ফেরা অনেক কঠিন। লড়াই করেই জায়গা নিতে হবে। তবে শারীরিক ও ক্রিকেটীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি নিজেকে মানসিকভাবে দৃঢ় করার জন্যও আমাকে কাজ করতে হবে। নিজেকে সেভাবেই তৈরি করছি।’ তিনি বলেন, আমি অন্ততঃ আরও ১০ বছর খেলতে চাই। এখন তার বয়স ৩২ বছর। স্বীকৃত ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হলেও ২০১৪ ও ১৫তে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণমূলক ম্যাচ খেলেছেন। খেলেন সিলেটের কিছু আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায়। ২০১২ সালে বিপিএলে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন আশরাফুল। সেখানেই জড়িয়ে পড়েন ফিক্সিংয়ে। শেষ পর্যন্ত আইসিসি ফিক্সিং নিয়ে তদন্ত শুরু করলে আশরাফুল নিজেই স্বীকার করে নেন। ২০১৪ সালে ১৩ই আগস্ট তার বিরুদ্ধে বিসিবি গঠিত ট্রাইব্যুনাল ৮ বছর ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞার শাস্তি ঘোষণা করে। পরে অবশ্য ৩ বছর কমিয়ে সেটি পাঁচ বছর করা হয়। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা কমানো হয় আরও দু’বছর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে তাকে আরো দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে ততদিনে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হয়ে যাবে আরো কঠিন। ২০০১ সালে জাতীয় টেস্ট ও ওয়ানডে দলে তার অভিষেক হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ম্যাচেই তিনি সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েন। জাতীয় দলের হয়ে ২০১৩ সালে শেষ টেস্ট ম্যাচটিও খেলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেই সিরিজে গল টেস্টে তিনি ১৯৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। শেষ ওয়ানডে খেলেন একই বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ৬১ টেস্টে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৬ সেঞ্চুরি ও ৮ ফিফটি। আর ১৭৭ ওয়ানডে খেলা আশরাফুলের ব্যাট থেকে আসে ৩ সেঞ্চুরি ও ২০ ফিফটি। আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচও খেলেছেন ২৩টি।