বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে সারা দেশে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের প্রধান নদী বন্দরগুলো। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ভূঁইয়া জানান, নৌশ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বানে চার দফা দাবিতে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে। কর্মসূচিতে ১৭টি নৌযান শ্রমিক সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা গত জানুয়ারিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করলে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নৌযান শ্রমিকদের মজুরিকাঠামো নির্ধারণ করার ঘোষণা দেয়া হয়। গত ২০ এপ্রিল শ্রমিকরা সারা দেশে ধর্মঘট শুরু করলে ছয় দিন পর নূ্যনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা করার ঘোষণা দেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
তেলবাহী শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ায় তারা আন্দোলনে নেই জানিয়ে শাহ আলম বলেন, অন্যসব নৌশ্রমিক চার দফা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাদের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।
নৌযান শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নূ্যনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বেতন স্কেল ঘোষণা, দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ পুনর্নর্ির্ধারণ, নৌপথে সন্ত্রাস-ডাকাতি-চাঁদাবাজি বন্ধ ও নাব্যতা রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, নৌধর্মঘটের সমর্থনে মঙ্গলবার সকাল থেকেই বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী ও মালবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে, ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি ফারহান সকালে লঞ্চঘাটে এসে পেঁৗছলে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে লঞ্চটি বরিশাল টার্মিনাল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল ১০টার দিকে নগরীর নৌবন্দরে বিক্ষোভ মিছিল করেন নৌযান শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন ও নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন বরিশাল বিভাগীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একিন আলী বলেন, ‘সর্বশেষ গত ২১ এপ্রিল রাত ১২টা ১ মিনিটে ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন শুরু করে নৌযান শ্রমিকরা, যা অব্যাহত থাকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে ২৩ এপ্রিল কেবল সারাদেশে নৌ ধর্মঘট শুরু
যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে যাত্রীবাহী নৌযানে কর্মবিরতি শিথিল করা হয়। তখন কর্মবিরতি চলাকালে নৌমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও আমাদের সেই যৌক্তিক দাবি মানা হয়নি। যার ফলে বাংলাদেশ নৌশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে পুনরায় নৌপথে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।’
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ ১১টি রুটে প্রায় ২৫টি লঞ্চ চলাচল করে। নৌযান ধর্মঘটের কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকেই এসব ?রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শত শত যাত্রী।
বিআইডবিস্নউটিএ’র চাঁদপুরের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ধর্মঘটের কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘাটে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ঈগল লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি আলী আজগর জানিয়েছেন, ঢাকায় মালিক-শ্রমিকদের সমঝোতা বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত এলে লঞ্চ চলাচল শুরু হবে।
খুলনা প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মঙ্গলবার বলেছেন, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, নৌপথে চুরি-ডাকাতি বন্ধ ও নদী খননসহ ১৫ দফা দাবি আদায়ের জন্য সোমবার মধ্যরাত থেকে খুলনায় নৌযানের শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের কাজ বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছেন। তবে তেলবাহী ট্যাংকার এ ধর্মঘটের আওতামুক্ত রয়েছে।
তিনি জানান, কেন্দ্রের ডাকা ধর্মঘট খুলনা ও মংলায় সর্বাত্মকভাবে পালিত হচ্ছে। এতে যশোরের নওয়াপাড়া থেকে শুরু করে মংলার হারবাড়িয়া পর্যন্ত নৌপথ অচল হয়ে গেছে।
এর আগে মজুরি বাড়ানোসহ ১৫ দফা দাবিতে গত ২০ এপ্রিল নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে সারা দেশে নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করেন। ছয় দিনের মাথায় মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বৈঠক করে সর্বনিম্ন ধাপের মজুরি ৭ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন। এ সিদ্ধান্তে তখন শ্রমিকরা ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তবে মালিকপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট আবেদন করে।
এ বিষয়ে নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘নৌমন্ত্রীর নির্ধারিত মজুরি দিতে পারব না বলে আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি শ্রম মন্ত্রণালয়ের বলে আদালত আদেশ দিয়েছে। এখন নৌযান শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে গেলে সেটির আইনগত ভিত্তি নেই।’