ইতোমধ্যেই ফাঁসির নির্বাহী আদেশও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কারাগারে। শনিবার বিকেলে মীর কাসেমের স্বজনরা দেখা করেছেন। প্রায় পোনে দুই ঘন্টার এই সাক্ষাতপর্বে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন তার পরিবার সদস্যসহ ৩৮ জন স্বজন। অবশ্য কারাগারের ভেতরে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ঢুকেছিলেন পরিবারের আরো কিছু বেশি সদস্য। এরমধ্যে শিশুও ছিলো। কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট থেকে ৫টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ৩৮ জন স্বজন মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। স্বজনদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ৮/১০ জন করে গ্রুপ করে তাদের সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়। এছাড়াও, দুপুরের পর থেকে বাড়ানো হয়েছে আরো বেশি নিরাপত্তা। সব কিছুই আভাস দিচ্ছে আজ রাতেই হতে যাচ্ছে জামায়াত নেতা মীর কাসেমের ফাঁসি। তবে ফাঁসির আগ মুহূর্তে নেওয়া নানা পদক্ষেপ ফাঁসির আভাস দিলেও কারাগার বা সরকারের দায়িত্বশীল কোনও কর্মকর্তার কাছ থেকে সুস্পষ্ট উত্তর জানা যায়নি।
তবে কাশিমপুর কারাগারের আশপাশের এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মানবতাবিরোধী মামলায় এর আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করার ধরনের সঙ্গেও সরকারের আজকের নেওয়া প্রস্তুতির বেশ মিল পাওয়া যাচ্ছে।
শনিবার মীর কাসেম আলীর পরিবারকে সাক্ষাতের জন্য খবর দেওয়ার পর থেকেই কারাগারের আশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশেও নিরাপত্তা বেষ্টনী বসায় কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা পুলিশ। বিকালে রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের জন্য ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪ প্লাটুন বিজিবি থাকবে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে। জেলা পুলিশ ছাড়াও র্যাব সদস্যরা কারাগারের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে। শহরজুড়ে লক্ষ্য করা গেছে পুলিশি টহল।
সন্ধ্যায় কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন বলে জানা গেছে। এর আগে দুপুরের দিকে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কারাগারে প্রবেশ করেন।
কারা সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, সরকারের আদেশ পেলে যে কোনও একটি মঞ্চে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করার ব্যাপারে তারা প্রস্তুত। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
এছাড়ও শনিবার সকাল থেকে জেল রোডে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেল রোডে গাজীপুর জেলা পুলিশকে মহড়া দিতে দেখা গেছে। পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ীতে বাড়তি জনবল ও একটি জল কামান নিয়ে তারা জেল রোডে এ মহড়া দেয়।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করলে তাও গত মঙ্গলবার খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
–