রাজধানীর বেসরকারি গণপরিবহনে দীর্ঘদিন নতুন কোনো বিনিয়োগ নেই। তাই পর্যাপ্ত গণপরিবহনের অভাবে ভুগতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
এ অবস্থায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে চারহাজার নতুন বাস নামাতে রাজি হলেও বাসমালিকদের সংগঠন বলছে, যানজট পরিস্থিতির উন্নতি না হলে লোকসানের মুখে আটকে যাবে নতুন বিনিয়োগ।
এক্ষেত্রে দ্রুত যানজট নিরসন ও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে কয়েকটি রুটে নতুন কিছু বাস নামলেও সামগ্রিকভাবে রাজধানীর গণপরিবহন খাত একরকম থমকেই আছে। এ খাতে বড় বিনিয়োগ আসছে না, অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পুরনো ব্যবসায়ীরাও। অথচ যাত্রীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ভোগও।
বাস মালিকরা বলছেন, একদিকে নতুন বাস নামাতে বিপুল খরচ অন্যদিকে যানজটের কারণে ৭০ ভাগ রুটেই লাভ তুলতে না পারায় নতুন বিনিয়োগে উৎসাহী নন তারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘যানজটের কারণে ট্রিপ হয় না। যেখানে ৮ থেকে ৯ ট্রিপে মারার কথা সেখানে মাত্র ২ থেকে ৩ ট্রিপের বেশি মারতে পারছে না। সবকিছু মিলিয়ে ঢাকা শহরে বাস ব্যবসাটা অলাভজনক’
পরিবহণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ‘ কেউ যদি পাগল না হয় তাহলে এই শহরে বিনিয়োগ কেন করতে যাবে। একটা বাস কেনার জন্য কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করতে হয়।’
তবে এমন অবস্থার মধ্যেও আগামী একবছরে চারহাজার নতুন বাস নামাতে বাস মালিকদের রাজি করিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। দেয়া হয়েছে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা সহ নানা প্রণোদনার আশ্বাস। তবে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও অবকাঠামো তৈরি না হলে শুধু নতুন বাস নামিয়ে যাত্রী পরিবহনে সফলতা আসবে না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘পুরাতন বাসগুলো উঠিয়ে নতুন বাস প্রবর্তন করার জন্য আমরা কিছু কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে এক হাজার এসি বাস এবং বাকিগুলো নন এসি বাস থাকবে।’ এদিকে অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগুলি রাস্তায় আছে কি না সেটা দেখতে হবে। ওয়ার্কশপ ডেকোর জায়গা দেওয়া, স্টপ টার্মিনালগুলি দেওয়া, এই অবকাঠামো ছাড়া যদি শুধু রুট পারমিট দিয়ে দেই তাহলে প্রক্রিয়া হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবহন খাতকে ঢেলে সাজাতে হলে শুরুতেই হাত দিতে হবে রাজধানীর বাসগুলোকে অল্প কয়েকটি কোম্পানির অধীনে আনার কাজে।
রাজধানীতে বাস পেতে নাগরিকদের যে দুর্ভোগ তা আসলে নিত্যদিনের ঘটনা। তবে দীর্ঘ দিনেও এ সমস্যা সমাধানের কার্যকর কোন উদ্যোগ দেখা যায় নি।
তবে এখন সরকারের পক্ষ থেকে যখন নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এরপরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠছেই যে এর মাধ্যমে ঢাকায় যে গণপরিবহনের সমস্যা তার কি আদৌ কোন সমাধান হবে।