ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী। কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমরা রাস্তাঘাটে বের হলে শুধু ঢাকা শহরেই হাজার হাজার সুবিধাবঞ্চিত পথ শিশু দেখতে পাই। সেদিন পুরানা পল্টন এলাকার কাছেই দেখলাম রাস্তার পাশেই একটি শিশু শুয়ে আছে। এখনো সে মায়ের দুধ ছাড়েনি। দুধের সেই অবুঝ শিশুটি রাস্তায় গড়াগড়ি দিচ্ছে। সেই শিশুটির জন্য বরাদ্দ নেই কোন দোলনা অথবা খেলার জন্য কোন খেলনা, সেই অবুঝ শিশুটিকে দেখলাম নোংরা কাঁদা মাখানো পানির বোতল নিয়ে খেলছে। আমরা অনেকেই দেখেছি, রাস্তায় দাড়িয়ে কিছু খেতে গেলে একটু পর হয়তো ছোট একটি হাত বাড়িয়ে একটি শিশু খাবারের জন্য অনুরোধ করেছে। আমরা কি সব পথ শিশুর অনুরোধ পূরণ করতে পারি? কয়জনের অনুরোধ বা আমরা পুরন করতে পারি? কেউ রাজপথে ভিক্ষা করে বেড়ায়, কেউবা শ্রমজীবী শিশু। এরকম সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সংখ্যা অনেক। যা হাতে গুনে শেষ করা যাবেনা। দারিদ্রতার সর্বশেষ সীমায় এদের বসবাস। এদের কারোর বসবাস বস্তিতে, কারোর রাস্তার পাশেই। কারো বসবাস পরিত্যক্ত নোংরা কোন জায়গায়।।
বাংলাদেশে এখন অনেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও অনেক আগে থেকেই শুনেছি উদ্বেগ নেওয়া হয়েছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে। তারপরেও কি সমস্যার সমাধান হয়েছে? আমাদের ছোট একটি দেশে জনসংখ্যার পরিমাণ অধিক। অনেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ কি সেটাই বুঝেন না, বিশেষ করে নিন্মশ্রেণীর জনগন। নিন্মশ্রেণী বলতে আমি বুঝাতে চেয়েছি যারা খুব দরিদ্র। আমাদের দেশে যতদিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে যতদিন গরীবের ঘরে একের অধিক শিশু জন্মগ্রহন করবে ততদিন সুবিধাবঞ্চিত শিশু দেশে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
শুনেছি রিজিকের মালিক আল্লাহ্। আমি বিশ্বাস করি রিজিকের মালিক মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন। তাই বলে সন্তান একটি হলে অনেক ভালো আর দুটি সন্তানের অধিক আর সন্তান নয় এরকম মনোভাব নিয়ে সবাই যদি এগোয় তাহলে বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকতো। আমরা সবাই মিলে যদি হাতে হাত মিলিয়ে আমাদের দেশের আনাচে কানাচে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাড়াই হয়তো ভবিষ্যতে এইসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাবে। যখন দেখি ধনী ঘরের কোন শিশু ৩ বেলা ভালো ভালো খাবার মুখের সামনে পেয়েও সেই খাবার খেতে আপত্তি করে আবার যখন দেখি দরিদ্র পিতামাতার কোন শিশু একবেলা খাবারের খোঁজে পথে পথে ঘুরে বেড়ায় তখন মনটা ব্যথায় ভঁরে উঠে। মনে মনে বলি; হে আল্লাহ্ আমরা সবাই তোমার সৃষ্টি মানুষ। সবাই আশরাফুল মাখলুকাত। তবে, কেউ না চেয়েও হাতের কাছে পেয়ে যায় আর কেউবা অনেক চেয়েও পায়না। যারা একবেলা ঠিকমতো খেতে পায়না সেইসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আমাদের নৈতিক দায়িত্ব কিছু করার। হয়তো তারা সম্পর্কে আমাদের কেউনা কিন্তু তারাও আমাদের মতো মানুষ। তারাও বাঙালি। তারাও বাংলাদেশী।
আসুন আমরা সকলে মিলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাড়াই। শিশুদের দিয়ে শ্রমিকের কাজ বন্ধ করতে হবে। শিশুদের হাতে তুলে দিতে হবে বই। যার যা সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে এদের পাশে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিই। কোন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকারে তলিয়ে না যায় এই ব্যাপারে আমরা সকলে মিলে দৃষ্টি দেই। মাতাপিতার দারিদ্র্যতার অভিশাপের গ্রাস থেকে এদের আমরা হয়তো মুক্ত করে আনতে পারবোনা তবে এদের দিকে সামান্য হলেও সাহায্যের হাত তো আমরা সবাই বাড়িয়ে দিতে পারি???