জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব হচ্ছেন পর্তুগালে অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক সহ শক্ত ১০ প্রতিদ্বন্দ্বীকে অনানুষ্ঠানিক গোপন ভোটে পরাজিত করেছেন তিনি। এর ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার বান কি মুনের বর্তমান মেয়াদ শেষে তিনি হতে যাচ্ছেন নতুন মহাসচিব। বান কি মুন দু’দফায় জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ওদিকে অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ দশ বছর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ডিসেম্বরে তিনি অবসরে গিয়েছেন। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ৩৮তম তলার তার প্রবেশ নিশ্চিত হয় বুধবার সকালে। জাতিসংঘের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদ এদিন গোপন ব্যালটে ভোট দেয়। এ ভোটে কোন সদস্য রাষ্ট্রই গুতেরাঁর বিরুদ্ধে ভোট দেয় নি। এদিন জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভিতালি চারকিন ঘোষণা দেন যে, অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ হচ্ছেন সবচেয়ে জনপ্রিয়। তবে এ বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ একজন প্রকৌশলী। তিনি পর্তুগালের প্রথম প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সময় ১৯৭৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ‘কারনেশন রেভ্যুলুশন’-এর মাধ্যমে ওই সময় ৫ দশকের একনায়কের পতন ঘটে। রাজনীতিতে আসার পর দ্রুত গুতেরাঁ উচ্চ পর্যায়ে আসীন হন। তিনি ১৯৯২ সালে সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা হন। ১৯৯৫ সালে নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাকের মতো শরণার্থী সঙ্কট যেখাবে ভয়াবহ সেসব স্থানে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ সময়ে তিনি শরণার্থীদের জন্য আরও সহায়তা করার জন্য বার বার পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে আবেদন জানাতে থাকেন। পর্তুগালের সাবেক প্রেসিডেন্ট আনিবাল কাভাকো সিলভা এ বছরের শুরুতে বলেছিলেন, শরণার্থী বিষয়ক এ এজেন্সিতে একটি নতুন যুগ রেখে গেলেন। তবে এবার তাকে জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে বেছে নেয়ায় প্রচারণা সংশ্লিষ্ট অনেকে হতাশ হয়েছেন। কারণ, তারা মনে করেছিলেন এবার একজন মহাসচিব নির্বাচিত হবেন নারী অথবা পূর্ব ইউরোপের কেউ। এ যাবত এ পদে কোন নারী বা পূর্ব ইউরোপের কেউ ঠাঁই পান নি। কিন্তু মহাসচিব নির্বাচন প্রক্রিয়া উল্লেখ করার মতো বিতর্কের বাইরে ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন প্রতিনিধি সামান্থা পাওয়ার। অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বৃটিশ কূটনীতিক ম্যাথিও রাইক্রফট। তিনি বলেছেন, গুতেরাঁ জাতিসংঘকে নেতৃত্ব দিয়ে পরের পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। বিশ্ব এখন বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্ত। এ সময়ে প্রয়োজন একটি নৈতিক কর্তৃত্ব। এবার মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৩ জন প্রার্থী। তার মধ্যে ৭ জনই নারী। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বুলগেরিয়ার রাজনীতিক ও ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা (৬৩)। নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান হেলেন ক্লার্ক (৬৬)। মলদোভিয়ার রাজনীতিক, উপ প্রধানমন্ত্রী নাতালিয়া ঘেরম্যান (৪৭)। ক্রোয়েশিয়ান পিপলস পার্টির নেতা, সাবেক ফার্স্ট ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ভেসনা পুসিক (৬২)। বাজেট ও মানব সম্পদ বিষয়ক ইউরোপিয়ান কমিশনার ক্রিস্টালিনা জর্জিভা (৬৩)। কিন্তু শেষ দৌড়ে ইরিনা বোকোভা নারীদের মধ্যে সবার আগে উঠে এসেছেন। তিনি হয়েছেন চতুর্থ। দ্বিতীয় হয়েছেন সার্বিয়ার প্রার্থী, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভুক জেরেমিক। তৃতীয় হয়েছেন সেøাভাকিয়ার মিরোসøাভ ল্যাজকাক।