আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ‘বঙ্গবন্ধু’ একটি আদর্শের নাম, একজন সংগ্রামী সিংহ পুরুষের নাম। যাঁর নিকট সর্বোচ্চ বিবেচ্য ছিল দেশ ও মানুষ। ৫৪’র সাধারন নির্বাচন থেকে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ’ এই দীর্ঘ পথ-পরিক্রমার বাঁকে বাঁকে তিনি ইতিহাসের স্রষ্টা। ইতিহাস যতটা বঙ্গবন্ধুকে সৃষ্টি করেছে বা করতে পেরেছে তার চেয়েও ঢের বেশি ইতিহাস তাঁর চলার পথ ধরেই রচিত হয়েছে। স্বাধীনচেতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে হাজার বছর পরেও বাঙালীর স্বাধীনতার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেতো।
তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ ছিল সুচিন্তিত। এ দেশের মানুষের বিন্দু পরিমান ক্ষতির কারন হবে এমন সিদ্ধান্ত তিনি তাঁর পুরো রাজনৈতিক জীবনে নিয়েছেন বলে প্রমাণ নেই। তাঁর সামনে অবারিত সুযোগ ছিল সম্পদ আহরনের, বিলাসী জীবন-যাপনের। তিনি তাঁর গরীব-দুঃখী মানুষের চিন্তা করে সেগুলো নির্দ্বিধায় দু’পায়ে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে গ্রহন করেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন জীবন। যে জীবনের নিয়তিই ছিল সম্পূর্ণ অনিশ্চিত, জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন।
তিনি এ দেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তাঁর সম-সাময়িক কিংবা বয়োজেষ্ঠ্য অনেক গুণীজন আওয়ামী লীগে থাকলেও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিলেন না। তিনি ৬ দফা প্রণয়ন শেষে উত্থাপনের জন্য সিনিয়র নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। সবাই তাঁকে বারণ করেছেন যেন এটি উত্থাপন না করেন। একজন সিনিয়র নেতা বলেছিলেন, ‘শোন মজিবর, তুমি আমারে ফাঁসিতে ঝুলােইতে চাও’? বঙ্গবন্ধু জবাব দিয়েছিলেন, ‘তাইলে আমিই উত্থাপন করুম, দেশের কাজ করতে গিয়া কাউরে না কাউরে তো ফাঁসিতে ঝুলতেই অইব’।
অত:পর ১৯৬৬ সালে লাহোরে ঘোষিত হলো ছয় দফা। মূলত ছয় দফা ছিল একটি মাত্র দফা, স্বাধীনতার দফা, পাকিস্তান থেকে সরে এসে বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণের দফা। উভয় পাকিস্তানে তো বটেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও ব্যাপক তোলপার সৃষ্টি হয়েছিল এই ছয় দফা নিয়ে। বস্তুত এই ছয় দফা পাকি শাসকদের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু দফাগুলোর মধ্যে কথার বুনন এতই সমৃদ্ধ ছিল যে, তাঁকে সরাসরি দোষারোপের কোন সুযোগই ছিলনা। মাথা গরম সৈরশাসক অবশ্য হাল ছাড়েনি, যার ফলাফল ছিল মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। কিন্তু তারা মিথ্যাকে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
আগড়তলা মামলা থেকে খালাস পাবার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু অখন্ড পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হোন। আওয়ামীলীগ, বঙ্গবন্ধু ও পুর্ব পাকিস্তান একটি সমার্থক শব্দে পরিণত হয়, তা হলো ‘শেখ মুজিব’। তবুও সেনাশাসক ইয়াহিয়া ৭০;র নির্বাচন দেয় অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই। অনেকের নিষেধ সত্বেও বঙ্গবন্ধু সে নির্বাচনে অংশ নেন এবং নিরঙ্কুশ বিজয় ছিনিয়ে আনেন। আজীবন গণতন্ত্রের পুজারী, দেশপ্রেমিক বঙ্গবন্ধুর আস্থার জায়গা ছিল তাঁর জনগন, যাদের প্রতিটি নড়াচড়া তিনি বুজতে পারতেন এক অলৌকিক ক্ষমতাবলে। তাঁরই নাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।।
জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।।