ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে দলে কোনো চমক রাখেননি জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচকরা। কিন্তু টেস্ট দল ঘোষণা করেছেন চমকে ঠাসা। ১৪ সদস্যের দলে রাখা হয়েছে চার নতুন মুখ। ওয়ানডে দলে নিয়মিত হলেও এবারই প্রথম টেস্ট দলে সুযোগ পেলেন সাব্বির রহমান রুম্মান। এছাড়া তরুণ পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি ও উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানকেও রাখা হয়েছে এই দলে। তবে সবচেয়ে বড় চমকের নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। এ বছরের শুরুতেই তিনি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ছিলেন না ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘোষিত দুই প্রস্তুতি ম্যাচের দলেও। তবে প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিতে দলে ছিলেন সোহান, সাব্বির। দলের নেতৃত্বে থাকবেন যথারীতি মুশফিকুর রহীম ও তার ডেপুটি হিসেবে আছেন তামিম ইকবাল। আগামী ২০শে অক্টোবর চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মাঠে গড়াবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ। অন্যদিকে প্রস্তুতি ম্যাচের একটিতে ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন সৌম্য সরকার। আর গতকাল তিনি দ্বিতীয় ম্যাচের নেতৃত্ব দিতে নেমে দুই অংকও ছুঁতে পারেনি। তবে বারবার ব্যর্থ এই তরুণের প্রতিভার ওপর ভরসা রাখছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। এছাড়া ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলা পেসার শফিউল ইসলামও দলে ফিরেছেন। মূলত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্স করার কারণেই শফিউলকে দলে রাখা হয়েছে।
নির্বাচকদের ঘোষিত এই দল গত বছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্ট স্কোয়াড থেকে পরিবর্তন হয়েছে ছয়টি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দল থেকে এবার নেই মোস্তফিজুর রহমান, জুবায়ের হোসেন, লিটন দাস, মোহাম্মদ শহীদ, নাসির হোসেন ও রুবেল হোসেন। ১৪ সদস্যের দলে পেসার মাত্র দুজন। তাসকিন আহমেদকে দলে নেয়ার একটা সম্ভাবনা থাকলেও কোচ হাতুরুসিংহের আপত্তির কারণে নির্বাচকরা তাকে রাখেননি। মূলত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিন শক্তিকে কাজে লাগাতেই বাড়নো হয়েছে স্পিনারের সংখ্যা। একাদশে তিন স্পিনার খেলানোর ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন নির্বাচকরা। এর মধ্যে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে থাকছেন স্পেসালিস্ট তাইজুল ইসলাম। অলরাউন্ডার হলেও মিরাজকে নেয়া হয়েছে মূলত স্পিন বোলিং সামর্থ্যের কারণে। এ পর্যন্ত ১২টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে মিরাজের শিকার ৪১ উইকেট। এছাড়াও ব্যাট হাতে কোনো সেঞ্চুরি না থাকলেও আছে ৫টি ফিফটি। সাকিব আল হাসান ও তাইজুল থাকায় তৃতীয় আর কোনো বাঁহাতি স্পিনার চাননি নির্বাচকেরা। তবে লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন হারিয়েছেন নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের অবস্থা। নির্বাচকরা বেছে নিয়েছেন অফ স্পিনার মিরাজ ও শুভাগতকে। প্রস্তুতি ম্যাচে লেগ স্পিনে ভেলকি দেখিয়েছেন সাব্বির রহমান রুম্মান। মূলত তার ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি প্রয়োজনে লেগ স্পিনটাকে ব্যবহার করতে চাইছে নির্বাচকরা। শুভাগতকে ফেরানোর পেছনেও নির্বাচকরা জানালেন তার স্পিন সামর্থ্যের কথা। ইংল্যান্ডের বেশ কজন ব্যাটসম্যান বাঁহাতি বলে দুজন অফ স্পিনার রেখেছেন নির্বাচকরা।
অন্যদিকে কামরুল ইসলাম দেশের ক্রিকেটে খেলছেন বেশ কবছর ধরেই। মোটামুটি পারফর্মও করছেন। জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছিলেন। গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি- টোয়েন্টি সিরিজের দলে থাকলেও আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়নি রাব্বির। ৪৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তার উইকেট ১০৩টি। শফিউল সবশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৪ সালের নভেম্বরে, চট্টগ্রামেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০১০ সালে এই চট্টগ্রামেই অভিষেক। ৮ টেস্ট খেলে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। গত শেষ তিন টেস্টে কিপিং গ্লাভস ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলেছেন মুশফিকুর রহীম। কিপিং সামলেছেন লিটন কুমার দাস। উইকেটের পেছনে খারাপ ছিল না পারফরম্যান্স। কিন্তু জাতীয় লীগের ম্যাচে কাঁধে চোট পাওয়াটাই কাল হলো লিটনের। চোট সারলেও ম্যাচ খেলার মত ফিট নন এখনও। সেই কারণে জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলে ৬ ম্যাচ খেলা নুরুল হাসান সোহানকে দলে রেখেছেন নির্বাচকরা। অনেক দিন থেকেই নুরুলকে মনে করা হচ্ছে দেশের সেরা তরুণ উইকেটকিপার। ৪৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে করেছেন ৫টি সেঞ্চুরি তার ব্যাটিং গড় ৪১.৮১। চলতি জাতীয় লীগেই তিনি একটি সেঞ্চুরি করেন। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দেয়ার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও রান পেয়েছিলেন শাহরিয়ার নাফীস। তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে দলে তাকে রাখা হয়নি। অবস্থা রাখা হয়েছে সৌম্য সরকারের ওপরই।
প্রথম টেস্টের বাংলাদেশ দল
মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, তাইজুল ইসলাম, শুভাগত হোম চৌধুরী, শফিউল ইসলাম, কামরুল ইসলাম রাব্বি, নুরুল হাসান।