নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আগামী ১৯ থেকে ২৪ ডিসেম্বর যেকোনো দিন করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। কারণ আগামী ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটির ভোট করতে হবে। আর ৮ ফেব্রুয়ারির আগে কুমিল্লা সিটির নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আলাদা আলাদা সময়ে দুই সিটির নির্বাচনের সুযোগ থাকলেও বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একত্রে দুটি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, রাজনৈতিকভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন প্রণয়নের পর নির্বাচন হয়েছে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের। তবে দুটি নির্বাচনই হয়েছে সহিংসতাপূর্ণ। ইসির তথ্যমতে, ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় ১০১ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হন। আর ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোটকেন্দ্র দখল ও আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার অপরাধে তিন শতাধিক ইউপির নির্বাচন স্থগিত হয়। আগামী ৩১ অক্টোবর স্থগিত এসব কেন্দ্রে ভোট হবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) মো. জাবেদ আলী বলেন, আগামী ডিসেম্বরে দুটি সিটির নির্বাচন হবে। এর জন্য ১৫ থেকে ২৫ ডিসেম্বর নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে। তবে ১৬ ডিসেম্বরের পরে অর্থাৎ ১৯ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনো দিনে একত্রে দুটি নির্বাচন করা হবে।
আর নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ্ নেওয়াজ জানান, কোনো নির্বাচনই কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এ জন্য সবার সহযোগিতা দরকার। তবে কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হবে।
কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মালেক বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কমিশন। মন্ত্রণালয় থেকে শুধু এ দুটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে তাদের চিঠি দিয়েছেন। এ বছরের মধ্যেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির সিটি শাখার তথ্যমতে, সাবেক ড. শামসুল হুদা কমিশনের মেয়াদের শেষ সময়ে অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটির নির্বাচন। নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচন ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। আর তাদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৮ ডিসেম্বর। পরের বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় নবগঠিত কুমিল্লা সিটির নির্বাচন। তাদের সভা হয়েছিল ৯ ফেব্রুয়ারি।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুসারে সিটি করপোরেশনের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতার কথা বলা আছে। এ হিসাবে ১ জুলাই থেকে আগামী ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটির এবং কুমিল্লার নির্বাচন ৩ আগস্ট থেকে আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে। এ কারণে তাদের মেয়াদের মধ্যেই এ দুটি নির্বাচন সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তবে, ডিসেম্বরে ভোটগ্রহণ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত কমিশন। কারণ নতুন বছর শুরুর আগেই স্কুল-কলেজের বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হয়। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণির নিয়মিত পরীক্ষার পাশাপাশি পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী ‘পিএসসি’ এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ‘জেএসসি’ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসব পরীক্ষার সময়সূচি বিবেচনায় নিয়ে ১৫ থেকে ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেছে ইসির নির্বাচনী শাখা।
এক নজরে দুটি সিটির তথ্য: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ড ২৭ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড নয়টি। মোট ভোটার ৪০ লাখ তিন হাজার ৭০৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ তিন হাজার ৯৬ জন ও নারী দুই লাখ ৬১০ জন।
অপরদিকে কুমিল্লা সিটির সাধারণ ওয়ার্ড ২৭ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড নয়টি। ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ১৯৯ জন ও নারী ৮৬ হাজার ৭৪ জন।