মামুনুর রশীদ রাজ, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান, স্বদেশ নিউজ২৪.কম : আজ দেওয়ানবাগ শরীফের বাবে রহমতে হযরত রাসূল (সঃ)-এর শুভ জন্মদিন ও শ্রেষ্ঠ সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষে আগামী ১২ই রবিউল আউয়াল অনুষ্ঠিতব্য আশেকে রাসুল (সঃ) সম্মেলন উপলক্ষে দেওয়ানবাগী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) হুজুর আশেকে রাসূল ও মুক্তিকামী মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবী রাসূলের জন্মের খুশি। মিলাদ অর্থ জন্ম। খুশি অর্থ আনন্দ।
দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) বলেন, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) ধুমধামের সাথে পালন করা উচিত। এই ঈদের যে কত ফজিলত, কত রহমত, কত বরকত আল্লাহ্ই ভাল জানেন।এই ঈদে আল্লাহ্ নিজে খুশি, ফেরেশতারা খুশি এবং সমস্ত মাখলুকাত খুশি, গাছপালা খুশি এবং যত প্রাণী আছে সবাই খুশি। কারণ সবাই অপেক্ষায় ছিল কখন রাহমাতাল্লিল আলামিন জগতে তাশরিফ আনবেন। সুতরাং এই দিনটার পবিত্রতা ও সম্মান অনেক বেশি। আমরা জানিনা দেখেই বুঝিনা এবং পালন করিনা। আর বাস্তবে ঐদিন দেখবেন ঈদের আনন্দ করলে মন থেকে একটা আনন্দ আসে।
সূফী সম্রাট বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবী সৃষ্টি কুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ। আমরা এটা করব। মহব্বতের সাথে করেন। আমাদের দেখে পরে অন্যরা করা শুরু করবে। আপনার ছেলের জন্মদিন যদি বাড়িতে পালন করতে পারেন রহমাতুল্লিল আলামিনের জন্মদিন এটা কি আরও বেশী গুরুত্বের না? এটার ফজিলত আরও বেশী না? আপনারা মিষ্টি বিতরণ করেন বা দাওয়াত দিয়ে খাওয়ান বাড়িতে। হাঁস-মুরগী জবাই করে গরু ছাগল জবাই করে পরে খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন, আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়াবেন। এমনিতেই তো আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়াতে হয়। আর ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে যদি বলেন তখন তারাও জানল এটাতো একটা আনন্দের দিন। আমরা এখানে আমার ছেলেরা বাচ্চাদেরকে চকলেট দিচ্ছে স্কুলে গিয়ে। প্রতি ঈদের দিন। রবিউল আউয়াল মাস আসলেইতো শুরু করে। আমরা চেষ্টা করি যাতে ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) ঘরে ঘরে ঈদের দিন হিসাবে মানুষের কাছে পরিচিত হয় সেটা চালু করেন। খ্রিষ্টানরা দেখেন তাদের নবীর জন্মদিন ধুমধামের সাথে পালন করে। তাদের নবীর জন্মদিন ধুম ধামের সাথে পালন করে। সারাবছর কোন এবাদত নাই কিন্তু ঐ পূজাটার বেলায় আছে। খুব আয়োজন করে ধুম ধামের সাথে। তো আমরা আমাদের রাসূলের জন্মদিন আনন্দের সাথে পালন করলে তো উপকার। এর ফজিলত অনেক বেশী।
তিঁনি বলেন,সবাই চেষ্টা করেন যেন সারা দেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)-এর একটা জোয়ার আসে। আপনাদের আহ্বান করেছি পরামর্শ সভা করতে। পরামর্শটা হলো কিভাবে আমরা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) এবং শুভ জন্মদিন পালন করতে পারি। মিলাদুন্নবী আমাদের প্রচেষ্টার দ্বারা সরকারিভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। আগে ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) ছিলনা। তখন ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম বা ফাতেহা-ই-দোয়াজদহম ছিল। বড় পীর সাহেবের মৃত্যুর দিন এবং হযরত রাসূল (সঃ)-এর মৃত্যুর দিন একই ছিল। আমরাই ১৯৯৬ সাল থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে চেষ্টা করে ঈদে-মিলাদুন্নবী বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের প্রচেষ্টার দ্বারাই সরকার ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) সরকারী আইন করে দিয়েছে পালন করার জন্য। ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)-এর বিপক্ষে অনেক লোক ছিল। প্রথম যখন আমরা এটা শুরু করেছি তখন পত্রিকায় লিখেছে, পোস্টারে লিখেছে। তখন একটা শ্রেণী ‘এই ঈদ আবার কোন ঈদ? মানে এটাকে তিরস্কার করে, এই ঈদ আবার কোন ঈদ? মানে তারা জানেই না এটা কোন ঈদ। আসলে জানে, ইচ্ছাকৃত এটার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমরা পঁচাশি লক্ষ লিফলেট ছেড়ে ছিলাম ‘এই ঈদ কোন ঈদ’ এটার জবাব দিয়ে। সুতরাং আজো একটা দল আছে এটাকে ঈদ বলে না। এরা বলছে এটা হযরত রাসূল (সঃ)-এর ইন্তেকালের তারিখ। এটা আবার ঈদ হয় কিভাবে? তা আমরা এটার ব্যাখ্যা দিয়েছি। রাসূল (সঃ)-এর জন্ম কবে আর ওফাত কবে? আসলে ধর্ম না জানার কারনেই এই ভুলটা হয়েছে। এরপর যখন ভুল ভেঙ্গেছে তখন আর বিরুদ্ধে লিখে না।
সূফী সম্রাট বলেন, জামায়াতের সাঈদি যখন সংসদীয় কমিটির সভাপতি ধর্ম বিষয়ক ছিল, সে চেষ্টা করছে যে ঈদে মিলাদুন্নবী বাদ দিয়ে সিরাতুন্নবী করার জন্য এবং সে ব্যবস্থা নিয়েছিল। আল্লাহ দয়া করলে সেটা কেউ ফিরাতে পারেনা। আমরা প্রতিনিধি পাঠালাম ধর্ম মন্ত্রীর কাছে। তখন শাহজাহান সাহেব ছিলেন ধর্ম মন্ত্রী। ওনার সাথে আমাদের মিটিং হয়েছে। আলোচনা করেছে পরে তখন ওখানে বসেই সাথে সাথে উনি ফোন করে সচিবকে বলে দিয়েছে এবং জায়গায় জায়গায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)-এর প্রোগ্রামটা দিয়ে দিয়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) বন্ধ করে দেয়ার জন্য বহু আক্রমন এসেছে। কিন্তু আল্লাহ দয়া করেছেন মিলাদুন্নবী আমাদের দেশে এখনও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন হচ্ছে। আমরা সতর্ক ছিলাম আর পারে নাই। কত দিন আমরা রাখতে পারবো জানিনা। ঐরকম সরকারী ছুটি শুক্রবার। এটার উপরে অনেকবার আঘাত আসছে যে সরকারী ছুটি রবিবার করতে। এটাও আমরাই করিয়েছিলাম সরকারকে বলে। যে মুসলমানদের জন্য পবিত্র দিন সপ্তাহে শুক্রবার। মুসলমানরা তো জুমার নামাজ রবিবার পড়েনা। তো আমরা কেন রবিবারে ছুটি নিব? শুক্রবার সরকারী ছুটি। এটা হয়েছিল, করার পরে আজও আছে কিন্তু আরেকটা পক্ষ ব্যবসার বাহানা দিয়ে রবিবারে করার চেষ্টা করেছে। গত দুই বৎসর আগে একবার পত্রিকার মধ্যে লেখা আসছিল। টিভি চ্যানেলে লেখা আসছিল যে শুক্রবারের পরিবর্তে রবিবারে সাপ্তাহিক ছুটি। প্রধানমন্ত্রী বলেছে, শুক্রবারের পরিবর্তে রবিবারে সাপ্তাহিক ছুটি। আমাদের এখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি এটা কিন্তু আমি করিয়েছি। ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল সাথে সাথেই। আমি বোধহয় যোহরের সময় দেখে আসছিলাম। আছরের সময় নিউজটা আর নাই। নিউজটা বন্ধ হয়ে গেছে। এখনও তো সরকারী ছুটি শুক্রবার বহাল আছে।
তিঁনি আরো বলেন, যেহেতু আমরাই এই ঈদ এনেছি। আমাদের তো এটা ধুমধামের সাথে পালন করা উচিত।রাসূল (সঃ)-এর ঈদে মিলাদুন্নবীটা চালু হয়েছে। মিলাদ এখন সব জায়গাতেই হয় । পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)-এর দিন মিলাদ হয়। আমাদের এখানে করে, অন্যরাও করে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে উদযাপন করে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উদযাপন করে। সব জায়গাতেই। সরকারী অফিসগুলাতে করে এবং লাইটিং করে, পতাকা লাগায়। রাস্তা সাজায়। মানে এটা সরকারী অনুষ্ঠান। এটা সরকারী অনুষ্ঠান হয়েছে আমাদের জন্য। এই ঈদের যে কত ফজিলত, কত রহমত, কত বরকত আল্লাহ্ই ভাল জানেন। এই ঈদে আল্লাহ্ নিজে খুশি, ফেরেশতারা খুশি এবং সমস্ত মাখলুকাত খুশি, গাছপালা খুশি এবং যত প্রাণী আছে সবাই খুশি। কারণ সবাই অপেক্ষায় ছিল কখন রাহমাতাল্লিল আলামিন জগতে তাশরিফ আনবেন।
সূফী সম্রাট বলেন, আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছে যে, আবু লাহাবের হাত ধ্বংস হোক; সেই আবু লাহাব খুশি হয়েছিল রাসূল (সঃ)-এর জন্মদিনে। সোয়াইবা নামের কৃতদাসী খবর দিয়েছিল, আপনার ভাতিজা হয়েছে। তখন উনি খুশি হয়েছিলেন। তখনতো রাসূলের পিতা জগতে নাই। ভাতিজা হয়েছে খবর পেয়ে খুশি হয়ে ঐ আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছিল আমার ভাতিজা হয়েছে যাও এখন থেকে তুমি মুক্ত। আমি তোমাকে নাজাত করে দিলাম। এরপর আবু লাহাব হযরত রাসুল (সঃ)-এর বিরোধীতা করেছে। আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে বলেছে, তাব্বাত ইয়াদা আবি লাহাব। আবু লাহাবের হাত ধ্বংস হয়ে যাক। তো আল্লাহর কথা তো ভুল হবেনা। ধ্বংস তো হয়েছেই। এরপরে রাসূল (সঃ) এর সাথে বিরোধীতা করার কারনে এই আয়াত নাজিল হয়েছে কোরআনে। একদিন আবু লাহাবের মৃত্যুর পরে তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস স্বপ্নে দেখছিল, তিনি তো রাসূলের চাচা আবু লাহাবের ভাই। তার অবস্থাটা কি ? স্বপ্ন দেখেছে, জিজ্ঞেস করল, তুমি তো আমাদের সাথে বিরোধীতা করেছিলে, রাসূলের বিরোধীতা করেছ। তোমার কি অবস্থা? এখন কেমন আছ তুমি? আবু লাহাব বলেছে , আমি খুব কষ্টে আছি। তবে সপ্তাহে একদিন আমার কোন কষ্ট থাকে না। সপ্তাহে একদিন সোমবার দিন রাসূল (সঃ) জন্ম হয়েছিল সে দিন দাসী সোয়াইবা আমার কাছে সংবাদ করেছে পরে আমি দাসী সোয়াইবাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলেছিলাম, যাও তুমি এখন থেকে মুক্ত।এ কারণে প্রতি সোমবারে কবরে আমার আঙ্গুল দিয়ে স্বর্গীয় পানি বের হতে থাকে। আমি ঐ আঙ্গুল চুষতে চুষতে সারা সপ্তাহের যত পিপাসা আছে মিটাতে পারি। ঐদিনই খুব শান্তিতে থাকি।
তিঁনি বলেন, সেতো একটা কাফের, একটা বিধর্মী যাকে আল্লাহ গজব দিয়েছে, অভিশাপ দিয়েছে সেই কাফের ঐদিন শান্তিতে থাকে রাসূলের জন্মের খুশি হওয়াতে। ঐ জন্মের খুশি হয়েছে। আপনি আমি যদি রাসূলের শুভ জন্মদিন পালন করি খুশি হই ছেলে পুলেদের নিয়ে জামা কাপড় কিনে দেই এবং ভাল খাবারের ব্যবস্থা বাসায় করি নিজে নিজের বাসায় এতে রাসূল খুশি হবেন। সবাই চেষ্টা করেন আমরা যেন সুন্দর ভাবে এই খুশিটা পালন করতে পারি।
দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) বলেন, আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)-এর দিনেই সম্মেলনটা করব। রাসূলের জন্ম দিনের আনন্দে আশেকে রাসূল সম্মেলন। এটা সবার জন্য।সবাই চেষ্টা করেন যেন সারা দেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)-এর যেন একটা জোয়ার আসে। এখনতো সারা দেশে ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) পালন করে রাষ্ট্রীয় ভাবে। সরকারী প্রতিষ্ঠান, জেলখানায় কয়েদিদের, ক্যান্টনম্যান্টে, হাসপাতালে ভাল খাবারের ব্যবস্থা করে।
পরিশেষে তিঁনি বলেন, আসুন আমরা মহান রাব্বুল আলামিনের সাহায্য চাই। তিনি যেন দয়া করে আমাদেরকে সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশে ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে আগামী ১২ই রবিউল আউয়াল অনুষ্ঠিতব্য আশেকে রাসুল (সঃ) সম্মেলন পালন করার সুযোগ করে দেন। আমীন।