ক্ষমতার বাইরে থাকলে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ সরকার এবং ক্ষমতায় থাকলে দলটি নিজেই নিজের কঠিন প্রতিপক্ষ। গোড়া থেকেই আওয়ামী লীগে এ দৈরথ চলে আসছে। মূল নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু আসার পরে আওয়ামী লীগ স্থিতি পায়। বর্তমানে প্রকাশ্যে না হলেও আভ্যন্তরীন সমস্যা যে আছে এতে সন্দেহ নাই। নতুন দায়িত্ব পেলেন ওবায়দুল কাদের, দেখার বিষয় কতটা সামলে নিতে পারেন।
আওয়ামী লীগের জন্ম ঐতিহাসিক দিনে, যেদিন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য্য অস্তমিত হয়েছিল সেই ২৩শে জুন। স্বাধীনতার জন্য যে তীব্র ক্ষুধা, আকাঙ্খা তারই দীপ্ত প্রকাশ ঐ তারিখটি। আর যাঁরা দলের জন্মের সাথে জড়িত তাদের সততা, মেধা, দেশপ্রেম প্রশ্নাতীত, ছিলেন পাকিস্তানী শোষন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু এক সময়ে তাদের অনেকেই মতবিরোধে জড়িয়ে সরে পড়েন। এটি আওয়ামী লীগের নিয়তি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতে মূল নেতৃত্ব এলে আওয়ামী লীগের কাঙ্খিত রূপটি পরিস্ফুট হতে থাকে। কিন্তু তদুপরি ৬ দফা ঘোষনার জন্য কোনো সিনিয়র নেতাকে তিনি পাননি। অগত্যা, লাহোরে ঐতিহাসিক ৬ দফা তিনি নিজেই উত্থাপন করেন, যা ছিল মূলত এক দফা, স্বাধীনতার দফা। তখনো দলে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধবাদীর সংখ্যা কম ছিল না। বঙ্গবন্ধুর হিমালয়সম ব্যাক্তিত্বর কারনে তাঁর মুখের উপর কেউই বিরোধিতা করেনি, তবে মনের ভিতরে পোষন করেছে। যার প্রমান দেখি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে।
১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীন নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের প্রাথমিক রূপ। যদিও দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্টতার প্রমান ধীরে থীরে প্রকাশিত হচ্ছে। অর্থাৎ খোন্দকার মোশতাক নিজে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে, তাকে ভিত্তি করেই চারপাশের শক্তি একত্রিত হতে থাকে, যার পরিণতি ভয়াল ১৫ আগস্ট। এই অবস্থার কিন্তু ৭৫ সালেই সমাপ্তি ঘটেনি। ‘৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তাঁকেও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে পড়তে হয়েছিল এবং তা দলের অভ্যন্তরে।
১/১১-তেও আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ ছিল আওয়ামী লীগই। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গোড়া থেকেই যাদের অপছন্দ ছিল সে অংশটি কলকাঠি নেড়েছে সে সময়ে। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন আওয়ামী লীগের ও বাংলাদেশের ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বহাল থাকে। বর্তমানে দলটির প্রতিপক্ষ নিজেদের দুর্নীতি, কতিপয় নেতৃবৃন্দের অপরিণামদর্শী কর্মকান্ড। সামনে জাতীয় নির্বাচন, নবীন সাধারন সম্পাদকের সামনে চ্যালেঞ্জ, কঠিন প্রতিপক্ষ দুর্নীতি সামাল দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।।