বছর ঘুরে বেদনার সব রঙ নিয়ে এলো ভয়াল তেসরা নভেম্বর। পৃথিবী জুড়ে কত নৃসংশ ঘটনাই প্রত্যক্ষ করছি, কিন্তু জেলখানার নিরাপদ প্রকৌষ্ঠে বন্দী হত্যার ঘটনা বিরল। সম্পুর্ন বিনা কারনে জাতীয় চার নেতা, চার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হত্যা করা হয়। তাদের অপরাধ, তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারি, একনিষ্ঠ সমর্থক। আজ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তোমাদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হে চার জাতীয় বীর।
সব ভোরেই আলো ফোঁটে। কিন্তু ৩রা নভেম্বরের ভোর নিয়ে আসে হতাশা ও আঁধার। জাতীয় চার নেতা জেলে বন্দী। বঙ্গবভনে চলছে ক্ষমতার চুলচেরা হিসাব। জাতীয় চার নেতাকে জীবিত রেখে মসনদ নিরাপদ নয়। অতএব, মোশতাক-জিয়ার খুনি বাহিনী নিরাপদ জেলে চালায় নারকীয় হত্যাজজ্ঞ। কোন প্রতিরোধ নয়, কেবল অস্ফুট উচ্চারন, “দেখে যাও বঙ্গবন্ধু, কে তোমার আপন”!
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরও রক্তপিপাসু খুনি মোশতাক-জিয়া তাদের মসনদ নিরাপদ ভাবেনি। এই পাকিস্তানি সেবাদাসেরা এদের প্রভুদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে শেষ ধাপটিও রূপায়নে বদ্ধপরিকর। আওয়ামী লীগের তথা বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানাও রাখা চলবে না। বঙ্গবন্ধুর কোন ভাবশিষ্য, অনুসারিরাও থাকতে পারবে না বাংলাদেশে। নতুন করে পাকিস্তানি ভাবধারায় গড়ে তোলা হবে এই দেশ, এটিই ছিল থুনি মোশতাক-জিয়ার সুদুরপ্রসারি লক্ষ।
বঙ্গবন্ধু এ দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর জীবনের আরাম-আয়েশ পরিত্যাগ করেছিলেন। তাঁর এই অনিশ্চিত সংগ্রামের সাথী ছিলেন নিবেদিত প্রাণ সহচর ও বিশাল কর্মিবাহিনী। সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন সর্ব জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জনাব তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপটেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান। তাঁরা এতটাই নিবেদিত ছিলেন যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি সিদ্ধান্ত বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিতেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি অঙ্গুলি হেলন বুঝতে পারতেন এবং তা বাস্তবায়নে জীবনপাত করতেও প্রস্তুত ছিলেন।
কাজেই ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনার পর খুনি মোশতাক-জিয়ার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল এই চার নেতার অনমনীয় দৃঢ়তা। খুনিরা ভেবেছিল, শেখ মুজিব নেই তো আওয়ামী লীগও নেই। কিন্তু তখনো আকাশে-বাতাসে ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য কান্না, যে কান্না আজও শেষ হয়নি। খুনিরা চার নেতারা ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তায় শংকিত হয়েই ইতিহাসের জঘন্যতম জেলহত্যা ঘটায়। আজ ৩রা নভেম্বরের প্রথম প্রহরে জাতীয় চার নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, ঘৃণার থুথু মোশতাক-জিয়া গং-দের প্রতি।।
জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।।