জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গতকাল আদালতে হাজিরা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার উপস্থিতিতে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পুনঃজেরা করেন তার আইনজীবীরা। গতকাল খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য থাকলেও তার আইনজীবীদের দুই সপ্তাহের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৪শে নভেম্বর দিন ধার্য করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। ওইদিন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হতে বলেছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে চলছে। গতকাল খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে বকশিবাজার ও তার আশপাশ এলাকায় নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এসময় সতর্কাবস্থায় অবস্থান করেন।
গতকাল সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি এজলাসের সামনে তার জন্য রক্ষিত কেদারায় বসেন। এ সময় তার আইনজীবীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন তিনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এক পর্যায়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশিদকে পুনঃজেরা শুরু করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান। জেরায় আবদুর রেজাক খান হারুনুর রশিদের দুর্নীতি দমন ব্যুুরো থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে আত্মীকরণের প্রশ্ন তুলেন এবং এ মামলায় ট্রাস্ট ডিডের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা-সে বিষয়ে জেরা করেন। তদন্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে সত্যকে গোপন করে এ মামলায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন। হয়রানিমূলকভাবে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। আপনার দেয়া সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য। জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন- এটা সত্য নয়। জেরা শেষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় খালেদা জিয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ২ সপ্তাহের সময়ের আবেদন করেন আবদুর রেজাক খান। পরে আদালত আগামী ২৪শে নভেম্বর নতুন করে দিন ধার্য করে ওই দিন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের আদেশ দেন। একই সঙ্গে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ১৭ই নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত। আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শেষে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে খালেদা জিয়া আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ অনুসারে আজ (গতকাল) আমরা এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পুনঃজেরা করেছি। তিনি জেরায় স্বীকার করেছেন যে, এই মামলায় ট্রাস্ট ডিডের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে, এ রকম কোনো অভিযোগ নেই। তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদের দুদকে আত্মীকরণ বিষয়ে বলেন, তিনি (হারুনুর রশিদ) দুদকে অন্তর্ভুক্তির জন্য চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু তার চিঠি গ্রহণ করা হয়নি। এরপর তিনি এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। সেই রিটও তিনি প্রত্যাহার করেছিলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, এই মামলায় খালেদা জিয়া অর্থের অপব্যবহার করেছেন, এ রকম কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তদন্ত কর্মকর্তাকে ট্রাস্ট আইনের বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু এখানে ট্রাস্ট আইনে মামলা বা অভিযোগ গঠন করা হয়নি। অর্থের অপব্যবহারের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবী) মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দুদকে নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু এ বিষয়টি মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। মোশাররফ হোসেন কাজল আরো বলেন, পরবর্তী তারিখে খালেদা জিয়া যদি হাজির না হন তাহলে তার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ করার আবেদন করবো আমরা। আদালত কি করবেন সেটি আদালতের বিষয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধভাবে লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ই জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯শে মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় অপর মামলা দায়ের করে দুদক।