উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সভ্যতা নির্মানে প্রয়োজন সব মানুষের অংশগ্রহণ। কাউকে দুরে রেখে, অবজ্ঞা করে টেকসই অগ্রযাত্রা অসম্ভব। এই রাষ্ট্রসীমায় বসবাসকারী সকল ধর্ম-বর্ন ও নৃগোষ্ঠীকে নিয়েই এগুতে হবে। নইলে যে আলোকিত ও সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্ন বুনি তা অধরাই থেকে যাবে। আঁধার রজনী শেষে যে সোনালী ভোরের প্রত্যাশায় আছি সে আলোর রেখা থাকবে আবছা, অস্পষ্ট।
প্রিয় এই জন্মভূমি নির্দিষ্ট কোন ধর্মের, বর্ণের, নৃগোষ্ঠীর নয়। হাজার বছরের লালিত ঐতিহ্যের চর্চা অব্যহত থাকবে, বিনীত নিবেদনে স্ব স্ব ধর্মাচার পালন করবে, এটি দয়াদাক্ষিণ্যের ব্যাপার নয়, এই রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের সংবিধান এটি নিশ্চিত করেছে। যাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনার আছেন তাঁরাও এই শপথে আবদ্ধ যে, সব মানুষের মানবাধিকার, ধর্মাধিকার, উৎসবের অধিকার নিশ্চিত করতে তাঁরা শপথে আবদ্ধ। রাজনৈতিক হীন স্বার্থে সে শপথ ভাঙ্গতে পারেন না।
প্রসঙ্গক্রমে গোবিন্ধগঞ্জের শাঁওতালদের কথা বলতেই হয়। এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাথে গত ৬ নভেম্বর চরম বর্বরতা হয়েছে যা একাত্তরকেও হার মানিয়েছে। হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ এগুলো তো ছিল বর্বর পাকিদের কাজ। প্রশাসনের সহায়তায় চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। যুগ যুগ ধরে বাস করে আসা ভূমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে হত্যা করা হলো তিনজন, গুলিবিদ্ধ একজন, এক নারী নিখোঁজ। আগুন দিল তাদের পল্লীতে। what shame!
এই হত্যাজজ্ঞ, লুটপাট, আগুন পুলিশের উপস্থিতিতে সংঘটিত হয়েছে,, যারা ঘটিয়েছে তারা অজ্ঞাত নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, ক্ষমতায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা- বিষয়টি রীতিমতো আতঙ্কের।।ছয় দিন পরেও এই বিষয়ে মামলা হলো না, এটি তো আরো ভয়ানক। কোথায় রাষ্ট্র, কোথায় সরকার? রামুর পর গোবিন্দগঞ্জ, কি বার্তা পাচ্ছে দেশবাসী কিংবা বহির্বিশ্ব? এই কি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পদ্ধতি?
স্থানীয় সাংসদ, ইউএনও, থানার ওসি গতকালও শাঁওতালদের এই বলে শাসিয়েছে যেন মিডিয়ার সাথে কথা না বলে। শাঁওতালরা এতই ভীত যে, চিকিৎসাও নিতে পারছে না। স্থানীয় এমপি, ইউপি চেয়ারম্যান এদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছিল বৈধ জমি দিবেন বলে। কোন যুগে বাস করছি আমরা? এটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকেও লজ্জায় ফেলে। আমরা শাসকের ভূমিকা থেকে মানুষের ভূমিকায় আসবো কবে? লতা মুঙ্গেসকরের বিখ্যাত গান, “যদিও রজনী পোহালো তবুও, দিবস কেন যে এলো না, এলো না”। সরকার নীরব থাকলে ‘দিবস আসবেও না’ যা কাম্য নয়।।