সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান, স্বদেশ নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম: প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন জোট বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সে’র যৌথ উদ্যোগে আজ ২৭ নভেম্বর রবিবার সকাল ৯টা ৩০মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে আর্থিক সেবাভুক্তি বিষয়ক কার্যক্রম নিয়ে “ডিজিটাল পেমেন্টস ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ: বিল্ডিং অ্যান ইকোসিস্টেম ফর অল” শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার উদ্বোধন করেন। এছাড়া উক্ত কর্মশালায় অর্থবিভাগ এর অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও এটুআই প্রোগ্রাম এর প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার, ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী এবং বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রুথ গডওইন গ্রেওয়েন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এমপি তাঁর বক্তব্যে বলেন,“আগামী দুই বছরের মধ্যে সরকারের সকল লেনদেন পেপারলেস হতে পারে।সরকারের সকল প্রতিষ্ঠানকে পেপারলেস অফিস তৈরির লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি”।
বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রুথ গডওইন গ্রেওয়েন বলেন, “সরকারের সফল নেতৃত্ব এবং পাবলিক-প্রাইভেট সেক্টরের উদ্ভাবনীয় উদ্যোগের কারণে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশ ডিজিটাল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাচ্ছে”। তিনি আরো বলেন, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ বাংলাদেশে ইলেকট্রিক পেমেন্ট সিস্টেম জনগনের জীবনযাত্রা, ব্যবসা এবং অর্থনীতির সকল স্তরে এক অনন্য সুযোগ তৈরী করছে।
এটুআই এর পলিসি এডভাইজর আনীর চৌধুরী বলেন,“মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আমাদের জায়গা করে নেয়া এবং ডিজিটাল সমাজ বিনির্মাণে সরকারের প্রচেষ্টা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, যার একমাত্র লক্ষ্য হল অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের সাথে আমাদের পার্টনারশীপ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উন্নয়নের লক্ষ্যে আর্থিক লেনদেনে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ লেনদেনকে আরো সহজতর করেছে। কর্মশালায় জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন জোট ‘বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স’ কর্তৃক “পেমেন্ট ইকো সিস্টেম ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট ২০১৬” শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ডিজিটাল পেমেন্টস কিভাবে আর্থিক সেবাভুক্তি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ব্যয় সংকোচনে সহায়তা করবে তা দেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে বিগত ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে লেনদেনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১২০শতাংশ। শুধুমাত্র ২০১৫ সালেই এক বিলিয়নের উপর ডিজিটাল লেনদেন সম্পন্ন হয়, যার সর্বমোট মূল্য প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সফলভাবে সকল স্তরে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা প্রচলনের জন্য ৩টি বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে: সকল স্তরে জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করা,ডিজিটাল পেমেন্টের জন্য একটি উপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা, ডিজিটাল পেমেন্ট বিষয়ে জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ব্যবহার প্রচলন করা হলে শুধুমাত্র সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বছরে শতকরা ১০ ভাগ ব্যয় হ্রাস করা সম্ভব।
ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছিল, সারা বিশ্বে ২০২৫ সালের মধ্যে ডিজিটাল লেনদেন প্রায় ৩.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার জিডিপি বৃদ্ধি করতে সক্ষম এবং সকল ক্ষেত্রে ৯৫ মিলিয়ন নতুন চাকুরীর ক্ষেত্র তৈরী করবে। পাশাপাশি নতুন ১.৬ বিলিয়ন নাগরিক কাঠামোভিত্তিক অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে সংযুক্ত হবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বার্ষিক ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ কমে আসবে।
উল্লেখ্য, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে সহজ, হয়রানিমুক্ত ও দ্রুত নাগরিক গণের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সকল ধরণের আর্থিকসেবাডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৩রা জুন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন জোট বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সে (Better Than Cash Alliance) সদস্য দেশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। বর্তমানে সকল ধরণের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রেমিটেন্স এবং ই-কমার্সের জন্য সকল ধরণের পেমেন্ট ব্যবস্থা ডিজিটাল করার উদ্যোগ এবং প্রয়োজনীয় সরকারী-বেসরকারী অংশদারিত্বের মাধ্যমে দেশের অধিক সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরীর জন্য সরকার কাজ করছে।
উক্ত কর্মশালায় এটুআই প্রোগ্রাম, বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স, ইউএনডিপি, ইউএসএইড, ইউএনসিডিএফ, ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর, দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ এর উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকগণ ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতিকরণকে ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা করেন। এসময় বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মী উপস্থিত ছিলেন।