তীব্র শীতে শরণার্থীদের কম্বল কেড়ে নিচ্ছে ফরাসি পুলিশ। ক্যালে জঙ্গল শিবির ভেঙে দেয়ার পর রাজধানী প্যারিসে একটি মাত্র আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে উপচেপড়া চাপ শরণার্থীতে। পুলিশ সেখানেও হাত দিয়েছে। সেখানকার কয়েক শত শরণার্থীকে রাতে কনকনে শীতে রাস্তায় ঘুমাতে বাধ্য করছে। পুলিশ এভাবেই পর্যায়ক্রমিক নির্যাতন চালাচ্ছে তাদের ওপর। এ অভিযোগ করেছে দাতব্য সংস্থা মেডিসিনস স্যান ফ্রন্টিয়েরস (এমএসএফ)। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এমএসএফ-এর অভিযোগ পুলিশ শরণার্থীদের হয়রান করছে। মধ্যরাতে তাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে ছোড়ে কাঁদানে গ্যাস। প্যারিসের লা চ্যাপেলেতে যে আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে সেখানে শরণার্থীরা একটু জায়গা পাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদেরকে বসতে দেয়া না পুলিশ। এমএসএফ-এর অভিযোগ পুলিশের এমন আচরণের কারণে শরণার্থীরা ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গত সপ্তাহে কমপক্ষে ৮ শরণার্থীর দেহের তাপমাত্রা ভীষণভাবে নেমে যায়। তাদের অবস্থা হাইপোথারমিয়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছে যায়। যখন দেহের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায় তখন তাকে বলা হয় হাইপোথারমিয়া। এমএসএফ বলেছে, এমন অবস্থার কাছাকাছি শরণার্থীদের অনেকে। এমএসএফ-এর প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী কোরিনে টোরি ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেছেন, শীতের এই কঠিন সময়ে সরকারি শক্তি খরচ করে সব অভিবাসীকে আশ্রয় দেয়া উচিত এবং তা জরুরি ভিত্তিতে করা উচিত। উল্টো শরণার্থীদের গায়ের চাদর (কম্বল) কেড়ে নেয়া হচ্ছে। তাদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে বাধ্যতামুলক। এই অবস্থার অবসান হওয়া জরুরি। তবে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো লি রোক্স রোববার এমন অভিযোগের জবাবে পুলিশের পক্ষ নিয়েছেন। তিনি পুলিশের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কোনোভাবেই এমন অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করি না। পুলিশ এখন যা করছে তা হলো বিপন্ন মানুষগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে। পুলিশের কাজ এভাবেই চলবে। তাদের দায়িত্ববোধের অংশ হিসেবেই এক্ষেত্রে মানবতা রক্ষা করা হবে। তবে শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার কাজটি কখনো কখনো কঠিন হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য, স্ট্যালিনগ্রাডে বিশাল এক শরণার্থী কেন্দ্র (ক্যালে জঙ্গল) বন্ধ করে দেয়ার পর শরণার্থীদের জন্য প্যারিসে প্রথম আশ্রয় সেন্টার খোলা হয় নভেম্বরে। ওই শিবিরটি বন্ধ করে দেয়ার পর ফরাসি সরকার রাস্তার পাশে আশ্রয় নেয়ার নীতিতে শূন্য সহনশীলতা ঘোষণা করে। এ জন্য অনেক এলাকা বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। বাড়ানো হয় পুলিশি প্রহরা। প্যারিসের ওই আশ্রয় কেন্দ্র গত কয়েক সপ্তাহে পুরো ভরে যায় মানুষে। তারপর প্রতিদিন সেখানে আশ্রয় চাইছে ১০০ থেকে দেড়শ অভিবাসী। সেখানে আশ্রয় পাওয়ার আগে তাদের অনেকে রাস্তায়ই ঘুমাচ্ছে।