শপথ নিলেন ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। ওয়াশিংটন ডিসি’র ক্যাপিটল হিলে তাকে শপথ-বাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। দায়িত্ব গ্রহণের পর দেয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন ট্রাম্প।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব আমেরিকানকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সবার আগে প্রাধান্য দেয়ার কথাও জানান।
নতুন প্রেসিডেন্টকে বরণ করে নিতে কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলের সামনে জড়ো হন কয়েক লাখ মার্কিনী। হোয়াইট হাউজ থেকে ক্যাপিটল হিলে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর স্থানীয় সময় শুক্রবার ঠিক বারোটায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এরপর প্রায় আঠারো মিনিটের উদ্বোধনী ভাষণের শুরুতেই গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
দেশকে এগিয়ে নিতে জাতীয় ঐক্যের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন- মার্কিনীদের প্রতিটি শ্বাস-নিঃশ্বাস অনুভব করেন তিনি। দেশের স্বার্থকে সবার ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হবে উল্লেখ করে- দেশকে কখনও খাটো হতে দেবেন না বলে অঙ্গীকার করেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এ দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই আমি। বাইবেলেও বলা আছে- ঐক্যের মাধ্যমে যে সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। ঈশ্বর মানুষের মাঝে ঐক্য ও সম্প্রীতি ভালোবাসেন। দেশ ও মানুষের স্বার্থ রক্ষায় কখনও আপোষ করবো না আমি।
যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেনো, মার্কিন জনগণই দেশ ও সরকারের নিয়ন্ত্রক বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারিকে কখনও মানুষ ভুলবে না। কেননা এদিন থেকে আবারও দেশের শাসনভার সব মার্কিনীর হাতে ফিরলো। এ দেশের প্রতিটি শিশুর জন্য শিক্ষা, অভিভাবকদের জন্য কর্মসংস্থান ও যথাযথ মজুরি নিশ্চিত করতে চাই আমি।
উদ্বোধনী ভাষণেও নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। দেশের নিরাপত্তার জন্য সীমান্তে কঠোরতা আরোপের কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন- মার্কিন সেনাবাহিনীকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা রক্ষার বদলে নিজ দেশের নিরাপত্তা ও কল্যাণে কাজে লাগানো হবে। একইসঙ্গে বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে চান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, সামরিক খাতে বছরের পর বছর ভর্তুকি দিয়ে অন্য দেশের সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তার জন্য মার্কিন সেনাদের নিয়োজিত করা হয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসবো আমরা। আমাদের দেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে অন্য দেশ বাণিজ্য করে যাবে- এটা হতে দেয়া যায় না। আমরা নিজেদের সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চাই।
দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় উগ্রবাদকে কখনোই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেবেন না বলে জানান ট্রাম্প। আগামী চার বছরে দেশের প্রতিটি সমস্যায় মার্কিনীদের সঙ্গে চান বলে জানান ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রকে শীর্ষে নেয়ার স্লোগান দিয়ে গত ৮ই নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ের পর চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে শুক্রবার শপথের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাধ্যমে আগামী চার বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এ পদটির পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর প্রধান বা কমান্ডার ইন চিফের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
এদিকে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইউরোপ, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নেতারা।