পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এসব ব্র্যান্ডের বিরিয়ানির নাম ভাঙ্গিয়ে ক্রেতাদের ঠকিয়ে সাধারণ বিরিয়ানি বিক্রি করছে মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। মিথ্যা তথ্য দিয়ে খাবার বিক্রির প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তবুও এ নির্দেশনা অমান্য করে বিক্রি করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। গত সপ্তাহে ইপিবি লিখিতভাবে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে এসব কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি জবাব চেয়েছে। ইতিমধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠান জবাব দিয়েছে। অনেকে নাম সংশোধনের অঙ্গীকার করলেও গতকাল পর্যন্ত কোনো রেস্টুরেন্টের নামের পরিবর্তন হয়নি। কিছু প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে অনুমতি নিয়ে নাম ব্যবহারের কথা। বাস্তবে কোনো প্রতিষ্ঠান কারও অনুমতি নেওয়ার কপি দাখিল করতে পারেনি।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজী বিরিয়ানির স্বত্বাধিকারী মো. আসাদুজ্জামান স্বদেশ নিউজ ২৪ ডট কমকে বলেন, মেলায় তাদের কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। এমনকি কাউকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। সাধারণ রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানি বিক্রি করে হাজী বিরিয়ানির নামে প্রতারণা করছে। এতে তাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ ধরনের প্রতারণা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।
এবার হাজীর বিরিয়ানির হিংস্র থাবায় পড়েছেন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। সচরাচর বাঘের হিংস্র থাবায় পড়ে অন্যান্য প্রাণী। মেলায় শেষ সময়ে হিংস্র হয়ে উঠেছে কথিত হাজীর বিরিয়ানি নামের খাবারের দোকানগুলো। বারবার সতর্ক ও জরিমানা করা সত্ত্বেও থেমে নেই তাদের প্রতারণা। ভোক্তাদের কাছ থেকে তিন থেকে চারগুণ মূল্য থাবা দিয়ে নিচ্ছে তারা। অভিযোগ করলেও ভোক্তাদের দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে তারা। এতে তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে মেলায় আসা সাধারণ মানুষ। সরেজমিনে মেলা ঘুরে এমনটিই জানা গেছে।
রোববার মেলায় এসেছেন হরিপদ ওঝা ও তার বন্ধু। পাপিন হাজীর বিরিয়ানির খাবারের স্টলে দুপুরের খাবার খান তারা। দুজনে চিকেন বিরিয়ানি ও ফ্রাই চিকেন এবং হাফ লিটার পানি নেন। তাদের রাখা তালিকায় যার মূল্য ৮৩০ টাকা। কিন্তু ক্যাশ কাউন্টারে বিল পরিশোধ করতে গেলে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় তিন হাজার ৩৮০ টাকা। টাকার রশিদ চাইলে ক্যাশের লোক বলেন, মেলায় তা দেয়া হয় না। বিপদে পড়েন হরিপদ। পকেটে আর আছে মাত্র ২০ টাকা। কীভাবে যাবেন নারায়ণগঞ্জ। অনেক মিনতি করেন টাকার জন্য। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না পেয়ে তিনি বাণিজ্য মেলায় অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যালয়ে অভিযোগ দিতে আসেন। এখানেও উপস্থিত পাপিন হাজীর বিরিয়ানির মালিক আব্দুল গফুর। দায়িত্বরত কর্মকর্তার সামনেই অভিযোগকারীকে বলেন, আসেন দেখে নেব। তামাক কাটা কাটবো- এসব বলে হুমকি দেন।
পরে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিতে গেলে সমঝোতা করে অভিযোগকারীর থেকে আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেন এবং তিনি লিখিত অঙ্গীকার করেন ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম করবেন না। আর করলে যেকোনো শাস্তি মেনে নেবেন।
এ বিষয়ে মেলায় হাজীর বিরিয়ানির মালিক আব্দুল গফুর বলেন, আমরা নির্ধারিত মূল্যেই খাবার বিক্রি করছি। মাঝে মধ্যে আমাদের কয়েকজন স্টাফ বেশি মূল্য আদায় করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং যাদের কাছ থেকে বেশি মূল্য নিয়েছে তাদের টাকা ফেরত দিয়েছি। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ প্রতারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তাদের অপকর্ম চলতেই থাকবে। আর বিপদে পড়বেন আমাদের মতো সাধারণ মানুষ।
গতকালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে ঝটিকা আভিযানে সময় স্বদেশ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আরজে সাইমুর রহমান এবং স্বদেশ নিউজ ২৪ ডট এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক আব্দুল জাব্বার মণ্ডেল বলেন, মেলায় বেশিরভাগ ভোক্তার অভিযোগ কাবারের দোকান ও হাজীর বিরিয়ানিগুলোর প্রতি। বারবার জরিমানা করা সত্ত্বেও তাদের প্রতারণা থেমে নেই। ভোক্তারা অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেই। এছাড়া মেলায় ভোক্তাদের ঠকাচ্ছে কি না তা দেখতে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করি। তিনি বলেন, প্রতি বছরই বাণিজ্য মেলায় হাজীর বিরিয়ানির নামে খাবার দোকান দিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেন তারা। যেহেতু তারা ভোক্তাদের ঠকাচ্ছে তাই তাদের স্টলগুলো বন্ধ করে দেয়া দরকার। এ বিষয়ে মেলা কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে বলেন তিনি। অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের কারণে হাজীর বিরিয়ানি, নান্না বিরিয়ানি, কাবাবসহ খাবারের দোকানগুলোর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩০টি অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা। এর মধ্যে পাপিন হাজীর বিরিয়ানির বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি জরিমানা ও ছয়টি যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় সমঝোতা করা হয়েছে।কমের কর্মীরা উপস্থিত থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেন।