প্রতি বছরের মত এবারও শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বুড়ির মেলা ভোলায় শুরু হয়েছে। বুধবার জেলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা গ্রামের প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো একটি সৃষ্টি গাছের তলায় ২ দিনব্যাপী এ মেলা শুরু হয়। প্রতিবছর এ সময় এখানে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর ওই পুজারই একটি অংশ বুড়ির মেলা। ভোলা শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১২০ বছরেও বেশি সময় ধরে চলে আসছে এ পূজা। আর এ পুজাকে ঘিরে সৃষ্টি তলা বাজারে ২ দিন ধরে চলে বর্ণাঢ্য লোকজ মেলা। পূজার সাথে সাথে মেলায় কেনাকাটা করতে সকাল থেকে হাজির হয় হাজার হাজার নারী-পুরুষ। মেলায় শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মাটির তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র, মেয়েদের প্রসাধনী ও চুড়ি-মালার দোকানের পসরাও সাজিয়ে বসে দোকানিরা। দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে। বিকেলের মধ্যে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো এলাকা। এসময় মেলায় গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভির জমায়। চারিদিকে সাজ সাজ রব। পুরো এলাকা জুড়ে উৎসবের আমেজ। অপরদিকে চলে পূজা। পূজার পাশেই সৃষ্টি গাছের নিচে মায়ের নামে ভক্তদের মোমবাতি আর ধুপকাঠি দেয়ার ধুম পরে। এসময় ভক্তদের উদ্দেশ্যে ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাতাসা।
অপরদিকে স্থানীয় গ্রামবাসীর ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পায়েশ খাওয়ার উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে প্রতি বাড়িতেই দূর-দূরান্ত থেকে স্বজনরা ছুটে আসে পিঠা খেতে এবং মেলা দেখতে। এছাড়া বাঙ্গালির ঐতিহ্য ধরে রাখতে পূর্ব পুরুষদের রেওয়াজ অনুযায়ী গ্রামের মানুষ ভোরে উঠে হলুদ ও সর্ষে বাটা দিয়ে গোসল করেন। অপরদিকে বাড়ীর মেয়েরা ব্যস্ত থাকেন পিঠা-পায়েস তৈরিতে। দিনব্যাপী চলে অতিথি আপ্যায়ন এবং বিকেলে চলে যান গ্রামের মেলার মাঠে। শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী ও বৃদ্ধরাও মেলায় গিয়ে উপভোগ করেন। পাশাপাশি মেলায় বসা বিভিন্ন দোকান থেকে কেনা-কাটা করে তারা সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন।
মেলায় আসা দর্শনার্থী প্রফেসর বিপ্লব কুমার পাল জানান, পূর্ব পুরুষদের কাছে শুনেছেন একশ বিশ বছর আগে এক বুড়ি মা এখানে স্বরসতী পুজা শুরু করেন। সৃষ্টি গাছের তলায় এ পুজার আয়োজন করা হতো। সেই স্থানে কালের বিবর্তনে আশ্রম গড়ে তোলা হয়। আর এ পুজাকে ঘিরে বসে জমজমাট মেলা। লোকজ ঐতিহ্যের হরেক রকম পসরা সাজিয়ে দোকানিরা বেচাকেনা করেন ২ দিন ধরে।
মেলার দোকানি সুরেশ দে ১০/১২ রকমের খেলনা সাজিয়ে বেচাকেনা করছেন। তিনি এবার নিয়ে ২৫ বছরের মত মেলায় আসলেন। বেচাকেনা বেশ ভালোই হচ্ছে বলেও জানান তিনি। গৌরনদী থেকে আসা বিক্রেতা দশরত সরকারও ব্যস্ত তার পণ্য সম্ভার বিক্রি করতে। তিনি জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এখানে ঢোল, একতারা বিক্রি করতে আসেন তিনি। প্রতি বছর মেলায় নারী-পুরুষের ঢল নামে বলেও জানান তিনি।
পুজা ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার মন্ডল জানান, তারা স্বরসতী পুজা নানা আনুষ্ঠানিকতায় মধ্যদিয়ে স¤পন্ন করেছেন। তিনি আরো জানান, তাদের পক্ষ থেকে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের নির্বিঘে মেলায় আসতে রাস্তাজুড়ে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানান তিনি।