নিজ জিম্মায় জামিন চেয়েছিলেন সিলেটের আবিদা আনোয়ার। আর পিতাও চেয়েছিলেন মেয়েকে নিজের জিম্মায় নিতে। অবশেষে আদালত আবিদাকে পাঠিয়ে দিলেন নিরাপত্তা হেফাজতে। গতকাল সিলেটের আদালতে ঘটে পিতার সঙ্গে মেয়ের এ লড়াই। তবে, মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অনেকটা নমনীয় আবিদার পরিবার। তবে আবিদা আদালতে তার বয়স সম্পর্কিত যে কাগজপত্র উপস্থাপন করেছে সেগুলো তার পিতার উপস্থাপিত কাগজের সঙ্গে মিলছে না। পিতা আদালতে মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলে দাবি করে কাগজ উপস্থাপন করেছেন। প্রায় চার মাসের সংসার ওসমানীনগরের নিজ কুরুয়া গ্রামের তরুণী আবিদা আনোয়ারের। স্বামী জুনেদ আহমদ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ঘিলাতৈল গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে। তারা একে অপরের আত্মীয়ও। সেই সূত্রে তাদের প্রেম ও বিয়ে। ফুফাতো ভাই পাবেলের সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তা চলছিল আবিদার। এই অবস্থায় ৪ঠা অক্টোবর প্রেমিক জুনেদের হাত ধরে ঘর ছাড়ে আবিদা। এরপর তারা বিয়েও করেন। সিলেটের নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিটও করেন। বিয়ের পর স্বামী জুনেদের সঙ্গে ঘর সংসার করেন আবিদা। পরে আবিদার পরিবার থেকে উদ্যোগ নিয়ে মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। সামাজিকভাবে বিয়ে দেয়ার বিষয়টি তখন জুনেদ ও তার পরিবারকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আবিদাকে নিজ কুরুয়া গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসার পর অত্যাচার চালানো হয়। জুনেদকে ভুলে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। আবিদা এতে রাজি হয়নি। টানা ১৪ দিন তার ওপর চলে নির্যাতন। ওই সময় আবিদার কাছ থেকে একটি ডিভোর্স কাগজে জোরপূর্বক দস্তগত নেয়া হয়। ১৪ দিন পর আবিদা সুযোগ পেয়ে ফের জুনেদের কাছে চলে যায়। এরপর সে পুরো বিষয়টি জানিয়ে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি সিলেটের পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানের কাছে আবেদন করে। এ সময় সিলেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে পাভেলের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে অভিযুক্ত আজির উদ্দিন, পাভেল, রোকসানা পারভিন রুবি, মাহবুব খানের ওপর সমন জারি করে কারণ দর্শনোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। এর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ওসমানী নগর থানায় অপহরণ মামলা করেছিলেন আবিদার পিতা আনোয়ার হোসেন। আর ওই অপরহরণ মামলার আসামি করা হয়েছে জুনেদ আহমদকে। মামলায় ২০শে ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টর বিচারক ওবায়দুল হাসান ও কৃষ্ণা দেবনাথ-এর দ্বৈত বেঞ্চ পালিয়ে থাকা প্রেমিক জুনেদ ও আবিদার ৬ সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। জামিন পাওয়ার পর গতকাল দুপুরে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলামের আদালতে আবিদা হাজির হয়ে নিজ জিম্মায় যাওয়ার আবেদন করেন। অপরদিকে তার পিতাও তাকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলে তার জিম্মায় নেয়ার আবেদন করেন। আদালত উভয় পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে আবিদাকে সিলেটের শিশু কিশোর নিরাপদ হেফাজত প্রেরণের আদেশ দেন। আবিদার বাবার নিয়োজিত আইনজীবী মখলিছুর রহমান জানান, ওসমানীনগর থানার মামলায় আবিদা আদালতে হাজির হলে তাকে নিজ জিম্মায় নেয়ার জন্য তার বাবা আবেদন করেন। আবেদনের সঙ্গে কিছু কাগজও দাখিল করা হয়েছে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আবিদাকে সিলেটের বাগবাড়িস্থ শিশু কিশোর নিরাপদ হেফাজত প্রেরণ করেছেন।