মঙ্গলবার থেকে আটটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ১০টি বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী যাত্রীদের হাতে বিমানের কেবিনে আইপ্যাড, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলের চেয়ে বড় কোন ডিভাইস থাকতে পারবে না। এই দেশগুলো থেকে ইজিপ্ট এয়ার, এমিরেটস, ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারওয়েজ, কাতার এয়ারওয়েজ, রয়্যাল এয়ার ম্যারক, রয়্যাল জর্দানিয়ান এয়ারলাইন্স, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স ও তুর্কি এয়ারলাইন্সের যাত্রীরা ফ্লাইটে ল্যাপটপ বা ওই ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবহার করতে পারবেন না।
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বলছে নিরাপত্তাই মূল কারণ। তবে ওয়াশিংটন পোস্টের এক বিশ্লেষণীতে বলা হয়েছে, অন্য কারণও থাকতে পারে। এতে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন বলছে যে, নতুন নিয়ম প্রণীত হয়েছে কারণ হলো, বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য বলছে যুক্তরাষ্ট্রগামী এয়ারলাইন্সগুলোকে টার্গেট করছে সন্ত্রাসীরা। এ ইস্যু সম্পর্কে জানেন এমন এক ব্যাক্তি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন যে, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অনেকদিন ধরেই চিন্তিত ছিলেন এ ব্যাপারে। কারণ, তাদের কাছে তথ্য ছিল সিরিয়ার একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এমন বোমা তৈরি করা যাচ্ছে যা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে প্রবেশ করানো যায়। আর এই বোমা শনাক্ত করাও বেশ কঠিন।
কিন্তু ফিনান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, আমেরিকার বাইরের পর্যবেক্ষকরা এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তারা বলছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বলছে না যে, এই পদক্ষেপ সাম্প্রতিক কোন গোয়েন্দা তথ্য থেকে নেওয়া হয়েছে, নাকি দীর্ঘদিনের উদ্বেগের কারণে। দীর্ঘদিনের উদ্বেগের কারণে হলে, এখন এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো কেন? এতদিন নেওয়া হয়নি কেন?
আবার বিমানে কেবিনে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস রাখা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও, ব্যাগেজের ভেতরে থাকলে সমস্যা নেই! কেন?
ওয়াশিংটন পোস্ট এক্ষেত্রে বিকল্প একটি ব্যাখ্যার কথা বলছে। এ বিষয়টি হয়তো নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোন বিষয়ই নয়। এই নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন এমিরেটস, ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজ ও কাতার এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই মার্কিন এয়ারলাইন্সগুলো অভিযোগ করছে যে, তারা নিজ সরকারের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি পায়। আর এই তিনটি মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন্স কয়েক মাস ধরে উদ্বেগে ছিল যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন। আর এই পদক্ষেপই হয়তো সেই প্রতিশোধ।
এই এয়ারলাইন্সগুলোর প্রধান ব্যবসা হলো বিজনেস ক্লাস ও ফার্স্ট ক্লাসে ভ্রমণরত যাত্রীরা। এই যাত্রীরা সাধারণত ধন্যাঢ্য ব্যবসায়ী বা নির্বাহী। তারা একটু আরাম আয়েশ চান। আর এদের অনেকেই বিমানে থাকা অবস্থায়ও ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে চান। কিন্তু নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে এই যাত্রীরা এই তিনটি এয়ারলাইন্সে চড়লে স্মার্টফোন ছাড়া আর কোন ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। এর ফলে অনেকেই মার্কিন এয়ারলাইন্সগুলোর দিকে ঝুঁকবেন। এছাড়া এ নিষেধাজ্ঞার ফলে দীর্ঘ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ধাপেধাপে যাত্রার যে ব্যবসায়িক মডেল আছে এই তিন এয়ারলাইন্সের, তা-ও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
তবে বেসামরিক যাত্রী পরিবহন ব্যবসা ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের অধিভুক্ত না হওয়ায় এ নিয়ে মামলাও করতে পারবে না মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি এয়ারলাইন্স। তাই তাদের আপাতত কিছু করারও নেই।