মামুনুর রশীদ রাজ,স্বদেশ নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমানঃ পদ্মা পাড়ের বিপুল জনগণের অধীর আগ্রহের অবসান ঘটিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের পদ্মা সেতু স্বপ্নের খোলস থেকে বেরিয়ে কাগজ-কলমের বন্দিদশা কাটিয়ে রূপ নিয়েছে দৃশ্যমান বাস্তবতায়। এই সেতুটি পৃথিবীর অন্যতম একটি সেতু হিসেবেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে স্থাপন করতে যাচ্ছে সড়ক ও রেল যোগাযোগ।
কংক্রিট আর স্টিলের নিখুঁত গাঁথুনিতে তৈরি হতে যাচ্ছে বিশ্বের অতুলনীয় এই সেতু। প্রথম শুরু হওয়া মূল পাইলিংয়ের কাজ এগিয়ে চলছে।পদ্মার ২ পাড় মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। শত শত ট্রাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিনই নিয়ে আসা হচ্ছে নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রী। আসছে প্রয়োজনীয় ভারি ভারি যন্ত্রপাতি।
বর্তমানে মাওয়ায় পদ্মাতীরের অদূরে ট্রাস ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে সেতুর উপরিভাগের (স্প্যান) জয়েন্টের কাজ চলছে। কংক্রিট দিয়ে তৈরি না করে ওজন কমাতে এই সেতুটির মূল অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে স্টিল দিয়ে। তীব্র বায়ু প্রবাহ ও ভূমিকম্পজনিত ধাক্কা মোকাবেলায় বেছে নেওয়া হয়েছে ওয়ারেন ট্রাস ফর্ম।
চীন এবং বাংলাদেশের শ্রমিকরা যৌথভাবে সেতুর জয়েন্ট, সেকশন, গার্ডার, টপকর্ড ও বটমকর্ড অংশের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। পদ্মাসেতু প্রকল্পের (মূল সেতু) নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ আবদুল কাদের প্রতিবেদককে জানান, কাজের গতি আরও বাড়াতে চীন থেকে আনা হয়েছে আরেকটি শক্তিশালী হ্যামার এবং ফ্লোটিং ক্রেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতুর কাজ খুব দ্রত গতিতে এগিয়ে চলেছে। সব সময় প্রতিটি বিষয় খুব দক্ষতার সঙ্গে মনিটরিং করা হচ্ছে। যা থেকে খুব সহজেই বলে দেয়া যায় যে, স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়তো আর বেশি দুরে নয়।‘ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে। এদিকে সেতুর দু’পাড়ের প্রায় ১৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ সহ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে ছোট-বড় ৫টি সেতু ও অসংখ্য কালভার্ট।
কিন্তু এরই মাঝে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে সিমেন্ট এবং রড কোম্পানীগুলোর রংচঙে বিজ্ঞাপন। বেশ কিছু কোম্পানী পদ্মা সেতুতে সিমেন্ট এবং রড সরবরাহের দাবি জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করে যাচ্ছে। বিলবোর্ড, ফেস্টুন, জাতীয় দৈনিক পত্রিকা সহ অনলাইন গণমাধ্যম গুলোতে ্ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে নিজস্ব কোম্পানীর বিজ্ঞাপন। আর এ নিয়ে রেষারেষিও চলছে বেশ।
প্রিমিয়ার সিমেন্টের মহাব্যবস্থাপক এস এম মামুনুর রশীদ তার ফেসবুক পেজ এ পদ্মা সেতু নিয়ে বিজ্ঞাপনে জল ঘোলা করার বিষয়টিকে তুলে ধরে লিখেছেনঃ
পদ্মা নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে।চক্রান্ত হয়েছে।বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কানাডাতে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। মাঝ পথে আবুল হোসেনের মন্ত্রীত্ব গেলেও পদ্মাসেতু নির্মাণ এ কোন বাঁধা – বাঁধা হতে পারেনি।আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে পদ্মাসেতু হচ্ছেই।যদিও আবুল হোসেন নির্দোষ প্রমানিত হয়েছেন।বিখ্যাতদের কেউ কেউ বদনামের ভাগি হয়েছেন।
কিন্তু সেই পদ্মাসেতু নির্মিত হচ্ছে দেশীয় অর্থে, দেশীয় নির্মাণ সামগ্রীতে। রড়, সিমেন্ট, বালু সবই বাংলাদেশের বিখ্যাত সব কোম্পানীর নির্মাণ সামগ্রী। এত বড় একটা স্থাপনাতে কোন একটা বিশেষ প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ সামগ্রীতে তৈরী করা সম্ভবও নয়।তা হয়নিও।কিন্তু প্রচার প্রচারণাতে কোন কোন নির্মান সামগ্রী কোম্পানী এমন ভাবে প্রচারে নেমেছে তারাই শুধুই ‘একমাত্র’।তাতে সমস্যা ছিল না, যদি অন্য কেউ ভাগ বসাতে না চাইতো বা একমাত্র’র প্রতিযোগিতায় না নামতো।বাংলাদেশের অনেক বড় বড় স্থাপনাতে কয়েক কোম্পানী মিলে সিমেন্ট, রড় সহ অন্যান্য নির্মান সামগ্রী সরবরাহ করার নজির কম নয়। সেক্ষেত্রে প্রচার প্রচারনাতে অন্যতম’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।এটা শিষ্টাচারের মধ্যে কতটা পড়ে আমার জানা নেই, তবে ব্যবসায়িক নৈতিকতা (বিজনেস ইথিক্স) বলে একটা কথাতো থাকা উচিত।
পদ্মা সেতুতে এক কোম্পানি একমাত্র সিমেন্ট সরবরাহ করেছে বলে তাদের নিজস্ব প্রিন্ট মিড়িয়াতে প্রচার করছিলেন। জেনেছিলাম তারা নাকি অন্য সিমেন্ট কোম্পানির পদ্মাসেতু নিয়ে কোন এ্যাড বা বিজ্ঞাপন তাদের পত্রিকায় না ছাপাতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল।সে কষ্টে কিনা জানি না আরেক কোম্পানি তাদের সিমেন্টের ব্যাগের গায়ে পদ্মাসেতুর ছবিই ছাপিয়ে দেয়।কিছু দিন পরে দেখলাম মিড়িয়ার মালিক কোম্পানিও তাদের সিমেন্টের ব্যাগে পদ্মাসেতুর ছবি লাগিয়ে দিয়েছে। দুর্জনেরা বলে বেড়ায় এই দুজনের একজন নাকি পদ্মাসেতুতে কোন সিমেন্টই দেয়নি।
‘একমাত্র’ সিমেন্ট সরবরাহের তালিকায় একটা বিদেশী সিমেন্ট কোম্পানিও আছে।তবে ‘অন্যতম’ সিমেন্ট সরবরাহের তালিকায় আরো দুয়েকটি সিমেন্ট কোম্পানি থাকলেও তারা বিজনেজ ইথিক্স মানে বলেই মনে হয়।
যেসব মানুষের জন্য এত প্রচার প্রচারণা,সে মানুষেরা কি কিছুই বুঝে না? বুঝে বটে।বুঝে পদ্মাসেতু একটা সিমেন্ট কোম্পানির সিমেন্ট দিয়ে তৈরী হচ্ছে না।একটা রড় কোম্পানির রড় দিয়েও না।