টাঙ্গাইল প্রতিনিধি॥ টাঙ্গাইল বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না দুর পাল্লার কোন বাস। টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা, গাজিপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুরসহ সব জেলার সাথে বাস যোগাযোগ বন্ধ করেছে টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ, মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তারা এ ধর্মধটের ডাক দেয়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।
শ্রমিকদের উপর করা সরকারের নতুন আইন শিথিল না করা হলে তাদের এ ধর্মঘট অব্যহত থাকবে বলে জানিয়েছেন একাধিক শ্রমিক নেতা। এদিকে শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারনে ঘর ছেড়ে আসে সাধারণ যাত্রীরা যেতে পারছে না তাদের গন্তব্যে। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকলেও মিলছেনা কোন গাড়ি।
বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল নতুন বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একাধিক বাস চালক সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে। একাধিক বাসের জটলা লেগে রয়েছে। কাউন্টারে-কাউন্টারে যাত্রিদের ভীড়। কিন্তু ছাড়ছে না কোন গাড়িই।
টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা যাবার উদ্দেশ্যে নিরালা পরিবহনের কাউন্টারে বসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন রাকিব। গাড়ি না পাওয়ায় তার ভার্সিটির ক্লাস করতে পারলেন না বলে জানান তিনি।
সাজ্জাত নামের আরেক যাত্রী জানান, তার আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি। সময় মতো না যেতে পারলে তার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
সকাল থেকে প্রায় ২ ঘন্টা যাবত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন পারভিন আক্তার। বাস না ছাড়ায় তার সঙ্গে থাকা ৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
অপরদিকে পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, তাদের উপর সরকারের নতুন আইন করাই তারা আজ দিশেহারা। প্রয়োজনে তারা পরিবহন ছেড়ে অন্য পথে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করবেন বলেও জানান এসব বাস চালকরা।
বাস চালক খোকন বলেন, আমরা যদি কোন দূর্ঘটনা করে থাকি তবে তার জন্য যে লক্ষ-লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে তা আমরা কই পামু। যদি আমাগোর টাকা থাকতো তাইলে আমরা কি এই গাড়ি চালাতাম?
রাজ্জাক নামের আরেক চালক বলেন, আমরা যে দূর্ঘটনার স্বীকার হই, সেটা কি শুধু আমাদের কারনেই হয়। এটা তো অন্য কোন কারনেও হতে পারে। তাহলে আমরা কেন তার প্রতিদান একা দিব।
এছাড়া আলম, ফরহাদসহ একাধিক বাস চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা প্রয়োজনে তাদের এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন পেশার সাথে সম্পৃক্ত হবেন।
টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মীর লুৎফর রহমান লালজু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের ব্যক্তি উদ্যেগে জেলার ৮০ শতাংশ যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এর সাথে শ্রমিক ইউনিয়নের কোন সমর্থন নেই। পরিবহন শ্রমিকরা নিজেরাই এ ধর্মঘট করেছে।
আইনের কয়েকটি ধারায় অস্পষ্টা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা দীর্ঘ দিন যাবৎ এ সেক্টরে কর্মরত আছে তাদের অনেকেই পড়া-লেখা জানে না। নতুন আইন অনুযায়ী অস্টম শ্রেনী পাশ না হলে তাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে না। লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি সহ বেশ কয়েকটি ধারা নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে ভিতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি হওয়ায় তারা যানবাহন পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছে।
আগামী ৬ এপ্রিল এ বিষয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের সভা রয়েছে জানিয়ে এ আইনের কয়েকটি ধারা পূনঃবিবেচনা করে সংশোধনেরও দাবি জানান তিনি।