ওএমএস কার্যক্রমে সরকারি ভর্তুকির শত শত কোটি টাকার চাল-আটা লোপাট করছে ডিলাররা। খোদ রাজধানীতেই দিনে গড়ে ১১৮ জন ডিলার অন্তত ৩০০ টন চাল-আটা কালোবাজারে বিক্রি করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওএমএসের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে মাহবুব আলমের তিন পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে থাকছে মালামাল বিক্রি না করেই ভুয়া রেজিস্ট্রারে বিক্রি দেখানোর তথ্য।
২২ মার্চ বুধবার সকাল ১০টা। ওএমএস কার্যক্রমের তথ্যানুসন্ধানে তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের সামনে থেকে একটি ট্রাক অনুসরণ। যাত্রাবাড়ি এলাকার ডিলার তারিকুল ইসলামের তোলা চার টন আটা ও চাল নিয়ে ট্রাকটির গন্তব্য দয়াগঞ্জ। সকাল নয়টায় বেচা-কেনা শুরু হওয়ার সরকারি নিয়ম থাকলেও শুরু হলো সকাল সাড়ে ১১ টায়।
তদারক কর্মকর্তা ইসমত আরা বিক্রয়স্থলে সারাদিন থাকার কথা থাকলেও বিক্রি শুরু করে দিয়েই চলে যান।
ধলপুরের অদুরেই মিরহাজীরবাগে ডিলার বাবুল হোসেনের ট্রাকে চলছে বেচা-কেনা। কিন্তু অনেকেই চাল কিনতে গিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। নির্ধারিত মূল্যে চাল পাচ্ছেন না।
পাশে উপস্থিত তদারক কর্মকর্তাও ডিলারদের জবরদস্তির কথা স্বীকার করে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানান।
তেজগাঁও কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম থেকে ১১৮ জন ডিলার প্রতিদিন তিন থেকে চার টন করে চাল ও আটা তোলেন। রাজধানীর নয়টি এলাকার নির্ধারিত স্পটে ট্রাক থামিয়ে বিক্রি করেন। দিন শেষে একজন ডিলার চাল-আটা মিলিয়ে সর্বোচ্চ বিক্রি করেন ৫০০ থেকে ৭০০ কেজি। বাকিটা কালোবাজারে বিক্রি করে একজন ডিলার কেজিতে লাভ করেন অন্তত ১৫ টাকা। এ হিসেবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০০ টন চাল ও আটা কালোবাজারে বিক্রি করে ১১৮ জন ডিলার হাতিয়ে নেয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
সাধারণের কাছে না বেচে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার তথ্য মিললো দয়াগঞ্জে ডিলার তারিকুল ইসলামের স্পটে। ট্রাক বোঝাই মালামাল থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই বেচা-কেনা বন্ধ। তদারক কর্মকর্তা ইসমত আরাও নেই। ট্রাকটি অনুসরণ করে দয়াগঞ্জ মোড় থেকে একটু সামনে যেতেই ওএমএস-এর মাল ভর্তি আরো তিনটি ট্রাক। এতে ফুটে ওঠে বেশির ভাগ মাল বিক্রি না করে কালোবাজারে বেচার চিত্র।
ডিলার তরিকুলের ট্রাকটি রাতের অন্ধকারে দোলাইলপাড়ে পুলিশি তল্লাশির মুখে পড়ে। দোকান বন্ধের সময় ইসমত আরা না থাকলেও মুর্হূতেই নতুন একটি খাতায় তার লেখা নির্দেশনা দেখিয়ে পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পেলেন তারিকুল। এরপর রাত সাড়ে ১১ টার দিকে কালোবাজারে চলে গেলো তারিকুলের মাল।
কোন ডিলারের রক্ষিত মুল রেজিষ্ট্রারে কোনদিনই মালামাল অবিক্রিত থাকার নজির নেই। রেজিস্টারে কোন কার্যদিবসে তদারক কর্মকর্তার সই আছে, আবার কোন কার্যদিবসে কারো সই নেই।