স্বদেশ নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, সম্পাদনায় – সাইমুর রহমানঃ জের গুণগত মান বজায় রেখে সময়মতো ও দায়িত্বশীলতার সাথে প্রকল্প কাজ সম্পন্ন করতে প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

আজ বুধবার দুই দিনব্যাপী ‘গণপূর্ত অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক বার্ষিক সম্মেলন ২০১৬-১৭’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদউল্লা খন্দকার, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কাজী গোলাম নাসির প্রমুখ উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা করেন।

গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন,“উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের মান নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য ভালো ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। প্রকৌশলীরা প্রকল্প কাজ সঠিকভাবে সুপারভিশন না করলে কাজের মান ভালো হবে না। কাজের গুণগত মান বজায় রেখে সময়মতো ও দায়িত্বশীলতার সাথে প্রকল্প কাজ সম্পন্ন করতে হবে।”

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী আগের তুলনায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি এসেছে উল্লেখ করে বলেন, “এখানে আগের থেকে কাজের মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এই কাজের মান আরও বাড়াতে হবে। আমরা সকলেই জানি প্রকল্পের কাজ করেন ঠিকাদাররা (কন্ট্রাক্টর)। এজন্য ভালো ঠিকাদার নিয়োগ করে মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্টদের মান সম্পন্ন কাজ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষত্রে সুপারভিশন সঠিক না হলে কাজের মানও ভালো হবে না।”

মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রকৌশলীরা কাজ দেখতে সাইটে গেলে তাদের পায়ে কাদা লাগে না। কাজ সুপারভিশন (তদারকি) করতে গিয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে চা পানি খেয়ে ফিরে আসা ঠিক কাজ নয়। প্রকৌশলীদের সুপারভিশন জোরদার করে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ঠিকাদাররা কাজে ফাঁকি দিতে চাইবে, সেখানে আপনাদের (প্রকৌশলী) সঠিক দেখভালের মাধ্যমে তা রোধ করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ৪৫২ কোটি টাকা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ আছে। কিন্তু আপনারা এ টাকা খরচ করছেন না। রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো না করলে বিল্ডিং দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই এটা ঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে। রক্ষণাবেক্ষণ হলো বিল্ডিংয়ের প্রাণ।

মন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প গতকাল অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক )। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সৌদি আরব সরকারের অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে ৮ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। এটা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জন্য বিরাট এক পরীক্ষা। এই কাজ সঠিকভাবে করে আমাদের ইমেজ আরও বাড়াতে হবে বলেও উল্লেখ করেন মোশাররফ হোসেন।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, প্রকৌশলীরা হলো দেশের মেধাবী সন্তান। আপনারা দেশের সাধারণ মানুষের অর্থে প্রকৌশলী হয়েছেন। এখন সময় এসেছে দেশের সেবা করার। তিনি সরকারের যে কোন উন্নয়ন কাজ নিদিষ্ট সময়ে শেষ করার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তাগিদ দেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রকৌশলীদের পড়তে পাঠালে ঐ কর্মকর্তা আর দেশে ফিরে আসেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি। কোন প্রশিক্ষণ বা অফিসের কাজে বিদেশ সফরে গেলে এখন থেকে লিখিতভাবে জানাতে হবে কী শিখেছেন।

সচিব আরও বলেন, বরাদ্দ এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তার মন্ত্রণালয় শীর্ষ ১০ (টপ টেন) মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রয়েছে। এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গত অর্থ বছরে এই মন্ত্রণালয়ের শতকরা হার ছিল ১২০ভাগ। আমাদেরকে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে।

স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান কাজী গোলাম নাসির বলেন, আমরা অবকাঠামো নির্মাণে বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছি। তবে সঠিক অর্থ পেলে এবং গন্ডি ভেঙ্গে বেরিয়ে আসলেই এটির উন্নতি হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, সেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে গণপূর্ত অধিদপ্তর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। এ অধিদপ্তর চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩০টি মন্ত্রণালয়ের মোট ২২৭টি প্রকল্পের বিপরীতে এডিপি/আরএডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৮৩৭ দশমিক ০৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ২ হাজার ৫৫২ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা অবমুক্ত করা হয়েছে এবং অবমুক্ত অর্থ থেকে ১ হাজার ৭৯২ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা ব্যয় হয় চলতি অর্থ বছরে ৬৫টি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত রয়েছে বলে এসময় উল্লেখ করা হয়।