স্বদেশনিউজ২৪,রাফিঃ ভারি বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জলাবদ্ধতা সব মিলে সৃষ্ট বন্যায় হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও কোথাও কোথাও ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে ধান। এতে করে কয়েক লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, চলতি বোরো মৌসুমে দেশের ৬৪ জেলায় মোট ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চাষাবাদ হয়েছে ৪৭ লাখ ৯৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে।
মার্চের শেষের দিক থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জে। এ জেলার ছোট-বড় ১৩৩টি হাওরের সবগুলোর আধাপাকা ও কাঁচা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। হাওর তলিয়ে যাওয়ার জন্য কৃষকরা ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে। যদিও এ ধরনের অভিযোগ নাকচ করে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে।
হাওরাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির একটি হালনাগাদ তথ্য দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ৩০ এপ্রিল রোববার সুনামগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সামনে রেখে গত শুক্রবার আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠকে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
এ তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার- এ ছয়টি জেলার ৬২টি উপজেলার ৫১৮টি ইউনিয়নের আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫ হাজার ৩৪৫টি ঘরবাড়ি আংশিক ও দুই হাজার ৮৬০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এ তালিকায় নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যেখানে অকালবন্যায় প্রায় পাঁচ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ নিশ্চিত করেছে।
তবে হাওরে ১৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সংগঠন। হাওরাঞ্চলের সাতটি জেলার ৭৫ শতাংশ হাওরের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ বছর ২২ লাখ টন ধান হারিয়েছে কৃষক।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ, জামালপুর ও শেরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪ হাজার ২১৫ হেক্টর জমির বোরো ধান। গোপালগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাত হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির বোরো ধান। চট্টগ্রামে এক হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ধান, লক্ষ্মীপুরে ৯২ হাজার ৩৩৬ হেক্টর জমির মধ্যে অর্ধেকেরই সয়াবিন, মরিচ, তরমুজ, ফেলন, মুগ, চিনাবাদাম ও মিষ্টি আলু নষ্ট হয়েছে। নোয়াখালীতে ক্ষতি হয়েছে তিন হাজারের বেশি হেক্টর জমির সয়াবিনসহ অন্য ফসল। চাঁদপুরে তলিয়ে গেছে তিন হাজার হেক্টর জমির ধান। কক্সবাজারে ১০ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সীতাকুণ্ডে ১১০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। রাজবাড়ীতে দেড় হাজারের বেশি হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ফেনীতে বিভিন্ন ফসল তলিয়ে ক্ষতি হয়েছে অন্তত তিন কোটি টাকা। পটুয়াখালীতে ২৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির মরিচ, তিল, বাদামসহ অন্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৪ হাজার ১৮১ হেক্টর জমির রবিশস্য।