ধীরে ধীরে বঙ্গোপসাগরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বৃদ্ধি করছে চীন। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের সঙ্গে সামুদ্রিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে তারা এই প্রভাব বৃদ্ধি করছে। এসব দেশের অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন
করে এসব করছে চীন। এমন অভিযোগ করেছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর সিনিয়র একজন কর্মকর্তা। তিনি হলেন ইস্টার্ন নেভাল কমান্ড প্রধান, ভাইস এডমিরাল এইচসিএন বিশ্ত। সোমবার কলকাতায় অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘ইন্ডিয়া’স মেরিটাইম কানেকটিভিটি: ইমপর্টেন্স অব দ্য বে অব বেঙ্গল’ শীর্ষক এক ওয়ার্কশপে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ খবর দিয়েছে শ্রীলঙ্কার অনলাইন দ্য ডেইলি নিউজ, অনলাইন ইন্ডিয়া ডটকম, বার্তা সংস্থা আইএএনএস। এতে বলা হয়, এ অঞ্চলে চীনের সামরিক পদক্ষেপ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে সমুদ্র বিষয়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে তিনটি ট্রেন্ড বা প্রবণতা চিহ্নিত করেন এইচসিএস বিশ্ত। তিনি বলেন, প্রথমত প্রগতিশীল দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও জাপানের মতো দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে তাদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো এখানে চীন ও অন্য দেশগুলোর ক্ষমতা ও প্রভাব খর্ব করা। এসব দেশ নিজেদের সামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জলদস্যু ও সন্ত্রাস বিরোধী ভূমিকায় সম্পৃক্ত হচ্ছে। দ্বিতীয় ট্রেন্ড বা প্রবণতা হিসেবে তিনি সামনে নিয়ে আসেন চীনকে। এইচসিএস বিশ্ত বলেন, অবকাঠামো খাতে অর্থায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক ও সমুদ্রবিষয়ক সম্পর্ক বৃদ্ধি করছে চীন। তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়ে অনিবার্যভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে চীন। এক্ষেত্রে চীনের কৌশল হলো তাদের ওপর বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর নির্ভরতা বাড়ানো। সেটা করতে তারা মেরিটাইম সিল্ক রুট ও সম্প্রতি চালু করা ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নামের পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এ অঞ্চলে তাদের সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। ভারতীয় এই নৌবাহিনীর কর্মকর্তা আরো বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের জলসীমানা বিভিন্ন দিক থেকে নতুন করে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে উঠে এসেছে। বিশেষ করে ভারতের ‘লুক ইস্ট পলিসি’র জন্য। তাই পূর্ব উপকূলে ভারতীয় নৌবাহিনীর সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা ইস্যু ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের হুমকির প্রেক্ষিতে জাতীয়ভাবে সমুদ্রসীমার বিষয়টি কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এইচসিএস বিশ্ত বলেন, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সহ পূর্ব উপকূলে সামরিক ‘অ্যাসেট’ বৃদ্ধির জন্য সেখানে ভারতীয় নৌ বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভারতের কাছে কৌশলগত দিক থেকে বঙ্গোপসাগর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সুবিধা পাওয়া যায় এখানে। এ ছাড়া সন্ত্রাস, দস্যুতা, পাচার ও বিদ্রোহের মতো ঘটনা সহ ভারতীয় স্বার্থের সরাসরি বিরুদ্ধে যায় এমন নিরাপত্তা ইস্যুতে সহযোগিতা পাওয়া যায় বঙ্গোপসাগর থেকে। তিনি আরো বলেন, অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের মাধ্যমে ভারতের জন্য জলসীমায় সংযুক্তি বা কানেকটিভিটি বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে আরো সহায়ক হবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, সফলতা অর্জনের জন্য সুযোগ ও হুমকির মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এইচসিএস বিশ্ত বলেন, ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতা নয়, এখন সময়ের প্রয়োজন হলো সহযোগিতা। বঙ্গোপসাগরের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের জন্য রয়েছে যথেষ্ট সম্ভাবনা। এক্ষেত্রে এখন প্রয়োজন হলো বঙ্গোপসাগরে ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সহযোগিতা।