ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ হরিয়ানার রেওয়ারি জেলায় প্রাত্যহিক যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ৬ দিন ধরে অনশন ধর্মঘট পালন করছে ১৩ জন স্কুল-বালিকা। খবরে বলা হয়, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী এই বালিকারা বলছে, পাশ্ববর্তী গ্রামে অবস্থিত বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে প্রায়ই পুরুষরা তাদের উদ্দেশ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করে। তারা জানায়, রেওয়ারি জেলার স্থানীয় কর্মকর্তারা তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, পুলিশ অবশ্য এখন বলছে, তাদের আরও ভালো সুরক্ষা প্রদান করা হবে। এছাড়া মেয়েদের যেন পড়াশোনার জন্য পাশের গ্রামে না যেতে হয় সেজন্য তাদের গ্রামে থাকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিকে উচ্চ-মাধ্যমিকে পরিণত করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। তবে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তারা লিখিত নির্দেশ না দেখা পর্যন্ত অনশন বন্ধ করবে না। তারা পানি ব্যতীত সবরকম খাদ্য গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। অনশন ধর্মঘটে না থাকলেও তাদের সঙ্গে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা।
অনশন ধর্মঘট পালন করা ১৩ শিক্ষার্থীর একজন নিতিন শ্রীভাস্তাবা বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ‘আমরা যৌন হয়রানির শিকার হই। আমরা কি পড়াশোনা ছেড়ে দেবো? স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেবো? শুধু ধনী লোকদের ও তাদের সন্তানদেরই কি স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে? সরকারের উচিত আমাদের সুরক্ষা দেয়া অথবা আমাদের গ্রামে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।’ অপর এক শিক্ষার্থী সুজাতা জানান, ‘পুরুষরা প্রায়ই আমাদের অসংগতভাবে স্পর্শ করতে চেষ্টা করে। তারা আমাদের ফোন নাম্বার দেয়ালে লিখে রাখে, অশ্লীল মন্তব্য করে। প্রকৃতপক্ষে যা ঘটে তা আরও জঘন্য। সবকিছু বর্ণনা করা সম্ভব নয়।’
প্রতিবাদরত এক শিক্ষার্থীর মা জানান, ‘মেয়েগুলোকে এভাবে ভুগতে দেখাটা আসলেই যন্ত্রণাদায়ক। এ তরুণীগুলো এমন সব হয়রানির মধ্যে দিয়ে যায়, যা আমি বর্ণনা করতে পারব না। আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে তারা উল্টো আমাদেরকে অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য চাপ দেয়।’ আরেক শিক্ষার্থীর বাবা রোহতাশ কুমার জানান, যৌন হয়রানির সমস্যা বহু বছর ধরেই বিদ্যমান। তিনি বলেন, ‘এবারই প্রথম মেয়েরা এর প্রতিবাদ জানাতে নিজেরা মাঠে নেমেছে। আমাদের গ্রামের পুরুষরা তাদের এ প্রতিবাদের পক্ষে আছে।’ তিনি সরকার ও পুলিশের দেয়া প্রতিশ্রুতি যে আসলেই কার্যকর হবে তার পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা চান। তিনি বলেন, ‘পূর্বে করা এমন প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করা হয়নি।’