বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে কয়েক মৌসুম আগে শেখ জামাল-রহমতগঞ্জ ম্যাচ পাতানো প্রমাণিত হওয়ার পর দুটি ক্লাবকেই কঠিন শাস্তি দিয়েছিল বাফুফে। দৃষ্টান্তমূলক ওই শাস্তির পর মাঝে পাতানো খেলার গন্ধটা কমে গিয়েছিল; কিন্তু ফুটবলের ‘ক্যানসার’ এ পাতানো খেলা আবার জেঁকে বসেছে নিচের আসরগুলোতেও। পাইওনিয়ার, তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ও সিনিয়র ডিভিশনে দেদারসে পাতানো ম্যাচ হচ্ছে। সোমবার শেষ হওয়া সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লীগে ন্যক্কারজনকভাবে পাতানো ম্যাচ হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে অবনমনের শঙ্কা দূর হওয়ার পরই দুটি পাতানো ম্যাচ খেলেছে ঢাকা ইউনাইটেড। চ্যাম্পিয়ন স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের দিকেও অভিযোগের তীর রয়েছে। মহাখালী শেষ ম্যাচে ওয়ান্ডারার্সকে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ বয়েজ ও সাধারণ বীমার ম্যাচ নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
বিস্ময়কর হচ্ছে, আগে পাতানো খেলা হতো যাতে কেউ না বোঝে তেমন কৌশলে। কিন্তু এখন পাতানো হচ্ছে একরকম বলেকয়ে। ফুটবল অঙ্গনের ঘনিষ্ঠজনেরা আগেই জেনে যান, অমুক দল অমুক দলকে ছেড়ে দিচ্ছে! ঢাকা ইউনাইটেড ও ফ্রেন্ডস সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের ম্যাচটি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ম্যাচের আগের রাতেই শোনা গিয়েছিল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারকে ছেড়ে দিবে ঢাকা ইউনাইটেড। মাঠে হয়েছেও তাই। ম্যাচটির ভিডিও ফুটেজ দেখলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। ম্যাচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুটি গোল হজম করেছেন ঢাকা ইউনাইটেডের গোলরক্ষক আজাদ। গোল দুটির দায় কোনো ভাবেই এড়াতে পারেন না অধিনায়ক বাপ্পি। তার চোখের সামনে দিয়েই বল নিয়ে ঢুকেছেন প্রতিপক্ষের ফুটবলার। তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটা শুধু দেখেছেন। দলের একাধিক ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা মিলেছে। প্রত্যেকে এর দায় চাপিয়েছেন ম্যানেজার সুমনের ওপর। রেলিগেশন সেভ হওয়ার পর তিনিই নাকি সমঝোতার ম্যাচ ছেড়ে অর্থের যোগান দিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি ম্যাচে ঢাকা ইউনাইটেড ছেড়েছে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারকে। অপরটি তারা ছেড়েছে স্বাধীনতাকে। স্বাধীনতার বিপক্ষে ১-০তে এগিয়ে থেকে ২-১এ হেরেছে ঢাকা ইউনাইটেড।
শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারকে ম্যাচ ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে স্বাধীনতার বিপক্ষে। এটি লীগে চ্যাম্পিয়নদের একমাত্র হার। সাধারণ বীমাকে ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ বয়েজ। এতেই রেলিগেশনের খড়গে পড়েছে বাড্ডা জাগরনী সংসদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা ইউনাইটেডের এক ফুটবলার জানান, লীগের মাঝপথেই টাকা নিয়ে ঝামেলা শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্ট। এতে দলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে দলের কিছু ফুটবলার পাতানো ম্যাচের সঙ্গে জড়িত হতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। যদিও বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন ম্যানেজার সুমন। তার যুক্তি লীগে ভালো করার জন্য তাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। তারা প্রতিটি ম্যাচ ফাইট দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তার পরেও কেন তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে তা তিনিও বুঝে উঠতে পারছেন না।
সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের বিপক্ষে ইউনাইটেডের হজম করা গোল দুটি তার কাছে দৃষ্টিকটু ছিল কিনা জানতে চাইলে গোলরক্ষক আজাদের পক্ষ নিয়ে সুমন বলেন, ওর চোখে ব্যথা ছিল বলে ও বল দেখতে পায়নি। ইনজুরি আক্রান্ত একজনকে গোলপোস্টের নিচে কেন দাঁড় করিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন ইনজুরির বিষয়টি গোলরক্ষক আমাদের কাছে গোপন করেছিল। তার পরেও এই দুই ফুটবলারের বিষয়ে ক্লাব একটি তদন্ত কমিটি করেছে বলে জানান এই ম্যানেজার। যদিও বিষয়টিকে সাধারণ ভুল হিসেবে বলছেন ঢাকা ইউনাইটেডের কোচ স্বপন কুমার দে। তিনি বলেন, গোল দুটি ওদের ভুলে হয়েছে, তবে এখানে অন্য কিছু খোঁজার অবকাশ নেই। কোচ ম্যানেজার দু’জনই দুই ফুটবলারের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করুন না কেন, ম্যাচে যে কিছু ছিল তা তাদের কথাতেই পরিষ্কার হয়!