ঈদ যাত্রায় দেশের ১৪ পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক ও মহাসড়ক অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর এ শঙ্কা থেকেই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এসব পয়েন্টে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বড় দাগে যানজটের সৃষ্টি হয় ৪টি এলাকায়। এগুলো হলো ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, যমুনা সেতুর পূর্ব স্টেশন ও আশুলিয়া। এছাড়া, ঢাকার ভেতরের ১০টি পয়েন্টে যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এগুলো হলো- আশুলিয়ার জিরাবো বাজার, ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে, বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, কোনাবাড়ি, কালিয়াকৈর, নবীনগর, কাঁচপুর, ভুলতা ও মেঘনা। মালিক সমিতির নেতা ও পরিবহন চালকদের কথা- প্রতিবারের মতো এবারও ভোগান্তির কারণ হতে পারে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক। মে মাসের পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় প্রতিদিনই এই মহাসড়কে যানজট আছে। সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার ছাড়িয়েছে যানজটের পরিধি। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ ফোর লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। টাঙ্গাইলের ফোর লেন প্রকল্পের কাজ চলমান। সিলেটের অবস্থা ভালো। তুলনামূলকভাবে ঢাকা-টাঙ্গাইল গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে গাড়ির চাপ যথেষ্ট। কিছু কিছু স্থানে ভাঙাচোরা সড়ক, নির্মাণসামগ্রীর স্তুপ, হাটবাজার, স্বল্প গতির যানবাহন, লোকাল গাড়ির আধিক্য, অবৈধ পার্কিং ও বাজারসহ নানা কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল আড়াই ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগছে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা। পরিবহন চালক ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ পথের ভোগান্তির মূল জায়গা এখন টঙ্গী-গাজীপুর-টাঙ্গাইল অংশ। অথচ এই সড়ক দিয়ে প্রায় ২১ জেলার যানবাহন নিয়মিত চলাচল করছে। বাস মালিকরা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যাই প্রায় এক হাজার। ঈদ উপলক্ষে এর সংখ্যা আরো বাড়বে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর এবং টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য হাটবাজার, স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এতে পথচারীদের অবাধ চলাচলের কারণে যানবাহন চলাচলে গতি বৃদ্ধি করা যায় না। এছাড়া প্রায়ই বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের অবরোধ ও দুর্ঘটনার পরে অবরোধ, ফিটনেসহীন গাড়ি অকেজো হয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
যমুনা সেতুর পূর্ব স্টেশন থেকে কালিহাতী উপজেলা এবং মির্জাপুর এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। যে কারণে এই এলাকাতেও যানজট লাগে প্রায়ই। এবার ঈদ যাত্রায়ও ওইসব এলাকায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে মির্জাপুরের ইচাইল, ডুবাইল, মিয়াপুর ওম সোহাগপাড়া, কালিহাতীর চরভাবনা, বাসাইলের বাইখোলা, ঘাটাইলের কালিদাসপাড়া এবং সদর উপজেলার করটিয়া দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এসব এলাকায় ঈদ উপলক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে হাইওয়ে পুলিশ।
এছাড়া, গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা এবারও এবার দুশ্চিন্তার কারণ। ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ভোগড়া বাইপাস হলো যানজটের দিক থেকে বিষফোঁড়া। আবার জয়দেবপুর চৌরাস্তার সমস্যাও তেমনি। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলো জয়দেবপুর চৌরাস্তার তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার আগে থেকেই যানজটে পড়ে। এই সামান্য রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগে কখনও দুই ঘণ্টা। অথচ মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ যেতে এখন সময় লাগে দুই ঘণ্টা। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বলছেন, জয়দেবপুর চৌরাস্তার চারপাশজুড়েই পরিবহনের অরাজকতা
। সিটি সার্ভিসগুলো এখানে ঘুরানো হয়। রাখা হয় এলোপাতাড়ি করে। এরপর লেগুনা, অটোরিকশা, ম্যাক্সি, অটো, ব্যাটারিচালিক রিকশার অবৈধ টার্মিনাল বানানো হয়েছে চৌরাস্তার স্কুলের সামনে। পণ্যবাহী পরিবহনগুলো রাখা হয় রাস্তার উপর। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লোকাল বাসগুলোও রাস্তায় থামিয়ে ইচ্ছামতো যাত্রী তোলা হয় এখান থেকে। সব মিলিয়ে গোটা সড়কজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএন সিদ্দিক বলেন, মহাসড়কের এসব এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি ঈদ সেবার জন্য বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক আনসার সদস্যের পাশাপাশি সড়কের যানজট নিরসনে কাজ করবে রোভার স্কাউটের সদস্যরা। এসব সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা শিফট অনুযায়ী কাজ করবে। যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে এসব যানজট প্রবণ এলাকার পাশে অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করবে সড়ক ও মহাসড়ক অধিদপ্তর। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী জানান, যানজটমুক্ত মহাসড়ক নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঢাকায় ১৪টি প্রবেশ পয়েন্টে যানজটপ্রবণ এলাকায় মোতায়েন থাকবে স্বেচ্ছাসেবক। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দ্রুত সরিয়ে নিতে মহাসড়কে থাকবে রেকার। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছাড়া অন্য সড়কগুলো নিয়ে এবার যানজটের খুব একটা চিন্তা নেই। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর রাস্তার অবস্থা ভালো। প্রতিবছরের মতো আমরা এবারও ঈদের যাত্রীসেবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। এ ব্যাপারে মালিক-শ্রমিক মিলিয়ে সভা করে সব কিছু ঠিক করবো। টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি রোধ, বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ, অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের ভিজিলেন্স টিম কাজ করবে।