প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ির ওপর অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কর প্রত্যাহার, দুই বছরের মধ্যে বিড়ি তুলে দেয়ার অর্থমন্ত্রীর
ঘোষণা প্রত্যাহার, বিদেশি কোম্পানির প্রতি পক্ষপাত ও সকল বিদেশি সিগারেট বন্ধ করা, বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করাসহ বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছে বিড়ি শ্রমিকরা।
গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত শ্রমিক মহাসমাবেশে তারা এই দাবি তুলে ধরে।
বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ (আরডিসি) এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে।
এতে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন আরডিসি’র চেয়ারপারসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এমপি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম।
এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুুর রহমান, বিড়ি শ্রমিক নেতা আবুল হাসনাত লাভলু, আজিজার রহমান, হায়দার আলী, লোকমান হাকিম, ফজলুল হক, লুৎফর রহমানসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বিড়ি শ্রমিক নেতারা।
সমাবেশে নাজমুল হক প্রধান এমপি বলেন, অর্থমন্ত্রী কথায় কথায় বলেন বিড়ি শিল্পে কোনো শ্রমিক নাই। তাহলে দুই বছরের মধ্যে বিড়ি শিল্প বিদায় করার কথা আসছে কেন? এটা কোন ষড়যন্ত্র। আজ এসে দেখে যান বিড়ি শিল্পে শ্রমিক আছে কিনা। আপনি দায়িত্বশীল মানুষ দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেন। শুধু বিড়ির ওপর এই আক্রমণ কেন বন্ধ করতে হলে সকল প্রকার সিগারেট বন্ধ করুন। বহুজাতিক কোম্পানি বন্ধ করুন। না হলে আমরা দুই বছরের মধ্যে আপনাকে বিদায় করবো। তিনি বলেন, আমি বিড়ি শ্রমিকদের সঙ্গে সংসদের বাইরে এবং ভেতরে আছি। আমি তাদের পক্ষে কথা বলবো।
মনজুরুল আহসান খান বলেন, বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন, তার ভাষায় আমরা বলতে পারি তিনি একটা ‘রাবিশ’।
তিনি এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী থেকে এরশাদকে ডুবিয়েছেন এবং শেখ হাসিনাকে ডুবাবেন।
তিনি বলেন, শুধু বিড়ি শ্রমিকদের নয়, অর্থমন্ত্রী সব মানুষকে আঘাত করেছেন প্রস্তাবিত বাজেট দিয়ে। এই বাজেটের মাধ্যমে তিনি বড়লোকের স্বার্থ রক্ষা করেছেন। বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর স্বার্থ রক্ষা করেছেন। এটি একটি জন ধিকৃত বাজেট।
প্রবীণ এই কমিউনিস্ট নেতা বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুধু করে পাকিস্তান আমলে যে সব আন্দোলন হয়েছে এমন কি ভাষা আন্দোলনেও বড় ভূমিকা পালন করেছেন বিড়ি শ্রমিকরা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে ঠেকান।
তিনি শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই বাজেট নিয়ে কথা বলতে লজ্জা হয়। ঘৃণা হয়। তিনি বৃটিশ আমেরিকান কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় আজ লাখ লাখ শ্রমিকের পেটে লাথি মারছেন। অথচ এই শ্রমিকরাই ভোট দিয়ে তাদের ক্ষমতায় এনেছে।
শ্রমিক নেতারা বলেন, আমাদের বিড়ির কাজ যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমরা ঢাকায় এসে রাস্তায় অনশন করে মরে যাবো। তবুও বিড়ি বন্ধ হতে দেবো না। তারা বলেন, ধূমপান বন্ধ করতে হলে শুধুুমাত্র বিড়ি বন্ধ করলেই চলবে না সিগারেটসহ অন্যান্য তামাক পণ্য বন্ধ করতে হবে।
বক্তারা বলেন, গ্রামের হত দরিদ্র মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এই শিল্পের কারণে তাদের কর্মসংস্থার তৈরি হয়েছে। বিড়ি শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। এই দায়িত্ব অর্থমন্ত্রীকে নিতে হবে।
সমাবেশে বিড়ি শ্রমিকদের দাবি মানা না হলে আরো কঠোর কর্মসূটির হুমকি দেয়া হয়।
সমাবেশে সঞ্চালক ছিলেন আরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক জান্নাত এ ফেরদৌসী ও বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হ্যারিক হোসেন। সমাবেশে সংগীত পরিবেশন করেন বিমল চন্দ্র বিশ্বাস ও দিদারুল করিম।