কাতার নিয়ে সংকট দূরীভূত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার টুইটের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে বলেছেন, ঐতিহাসিকভাবেই কাতার সন্ত্রাসবাদের উচ্চমাপের অর্থদাতা। তার নিজের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকল পক্ষকে উত্তেজনা নিরসনে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানালেও, এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কাতারের বিপক্ষে অবস্থান নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার এ বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে কাতারের প্রতিবেশী উপসাগরীয় দুই দেশ সৌদি আরব ও বাহরাইন। মাঝখানে অবশ্য একবার সকল পক্ষকে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। এমনকি সমঝোতায় মধ্যস্থতা করার প্রস্তাবও দিয়েছেন, কথা বলেছেন কাতারের আমীরের সঙ্গেও। কাতারে একটি মার্কিন সেনাঘাঁটিও রয়েছে। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি’র সঙ্গেও শুক্রবার কাতার ইস্যুতে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় প্রেসিডেন্ট আরব দেশগুলোর ঐক্য ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দেন।
এই দুই দেশ সহ সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর মিলে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। দেশগুলোর অনুরোধে ইয়েমেন, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সরকার, মালদ্বীপ, মৌরিতিয়াস, মৌরিতানিয়া ও সেনেগালও কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তবে একই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে ইরিত্রিয়া। অপরদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান বলেছেন, তিনি সৌদি আরবের এ ডাকে সাড়া দেবেন না। তার দেশ কখনোই কাতারকে ছেড়ে যাবে না। তিনি শুক্রবার ইফতারের সময় ইস্তাম্বুলে বলেন, কাতারকে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ দেবে তুরস্ক। এ সময় তিনি কাতারের বিরুদ্ধে দেয়া অবরোধ শিথিল করার আহ্বান জানান। তুরস্ক ও কাতারের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তুরস্কের পার্লামেন্ট কাতারে সেনা মোতায়েনের অনুমতি রেখে একটি বিলও পাস করেছে।
মেক্সিকো সফররত জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল কাতার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, আঞ্চলিক এ সংকট সমাধানে উপসাগরীয় সব দেশ, ইরান ও তুরস্কের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। তিনি উপ- সাগরীয় অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য দেখতে চান। আগামী মাসে জার্মানির হামবার্গে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ নেতাদের সম্মেলনে নিরাপত্তা হবে এজেন্ডা এ কথাও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
কাতারের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলেছে, সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতার ইস্যুতে হাজার হাজার মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে। এক্ষেত্রে অ্যামনেস্টি কয়েক ডজন মানবাধিকার কর্মীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এরপর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল ইস্যুজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডাইরেক্টর জেমস লিঞ্চ বলেছেন, এই ভয়াবহ পদক্ষেপে ভয়াল প্রভাব পড়ছে। পিতামাতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে সন্তানরা। স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন। শুধু কাতারের মানুষ নন, এ অবস্থা এ অঞ্চলজুড়ে চলছে। কারণ, তাদের কর্মসংস্থান হারিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই এ পদক্ষেপের সঙ্গে যেসব দেশ জড়িত তাদেরকে অবশ্যই মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘন না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
শুক্রবার কাতারকে অভিযুক্ত করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের মাত্র কয়েক মিনিট আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সৌদি আরব ও এর মিত্রদের প্রতি কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ শিথিল করার আহ্বান জানান। বলেন, এতে সেখানে মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে। তাতে আইসিলের (আইএস) বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরো বলেন, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে সমর্থন দেয়ার দীর্ঘ ইতিহাস আছে কাতারের। এসব সমর্থন যারা পায় তার মধ্যে অনেকে সহিংসতায় লিপ্ত রয়েছে। তবে সন্ত্রাসে আর্থিক সমর্থন দেয়া বন্ধে যথেষ্ট অগ্রগতি করেছে কাতার।