রাজধানীতে পানির দুর্ভোগ যেনো শেষ হচ্ছে না। নগরীর ৩০টি এলাকার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পানির জন্য হাহাকার করছেন। একদিকে তীব্র দাবদাহের সঙ্গে শুরু হয়েছে রমজান মাস। রমজান মাসে পানির সমস্যার কারণে নগর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় তিন মাস ধরে পানি নাই। কিছু এলাকায় দুই মাস, এক মাস, পনের দিন ধরে পানির জন্য হাহাকার চলছে। পানির অভাবে অনেক এলাকায় ঠিকমতো রান্না ও গোসল করা যাচ্ছে না। কেনা খাবার দিয়ে ইফতার- সেহরি করছেন। আবার কিছু এলাকায় মিনারেল ওয়াটার দিয়ে অনেকে কাজ সেরে নিচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, একাধিকবার ওয়াসাকে অভিযোগ করে বিষয়টির সুরাহা করা যাচ্ছে না। গত কয়েকদিন সরজমিন নগরীর কমলাপুর, পূর্ব জুরাইন, জুরাইনের পূর্ব মুরাদনগর, মোহাম্মদপুর, শেখেরটেক, মিরপুর-১, মিরপুর-২, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, নাখালপাড়া বনফুল মোড়, শেওড়াপাড়া, সেনপাড়া, বালুঘাট, দক্ষিণখান, মধ্যবাড্ডা, নামাপাড়া, মধুবাগ, শান্তিবাগ, মতিঝিল, ফকিরাপুল, কুনিপাড়া, বেগুনবাড়ি, জিগাতলার হাজী আফসার উদ্দিন লেন, আজিমপুরের ছাপড়া মসজিদের গলি, লালবাগ, মাদারটেক, নন্দীপাড়া, শনির আখড়া, উত্তর কমলাপুর, মানিকনগর, শাহজাহানপুর, হাজারীবাগ, চামেলীবাগ, মগবাজার, নারিন্দা লাল মোহন সাহা সড়ক, গেণ্ডারিয়ার রজনী চৌধুরী সড়ক, আশকোনা, দক্ষিণখান, কালশিবাজার, উত্তর যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকার ধোলাইখাল, শ্যামলী, আদাবর হাউজিং, দনিয়ার একে স্কুল এলাকা, রামপুরা, বনশ্রী, মেরুল আনন্দ নগর, আফতাব নগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পানির জন্য নগরবাসীর দুর্ভোগের চিত্র। প্রায় তিন মাস ধরে পানির জন্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মিরপুর-১, মিরপুর-২, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, সেনপাড়া, শেওড়াপাড়ার বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর অভিযোগ একাধিকবার ওয়াসাকে বলার পরও এর সুরাহা হয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা মিনারেল ওয়াটার দিয়ে কাজ সারছি। মিরপুর সেনপাড়ার গৃহিণী সালেহা বেগম বলেন, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ছাড়া নগরজীবন অচল। কিন্তু এতদিন ধরে পানি ছাড়া কি বাস করা যায়। খাবার পানি, গোসল, রান্না, কাপড় ধোয়াসহ আনুষঙ্গিক সব কাজে কতো পানি দরকার। কিন্তু আমরা বলতে গেলে পানি ছাড়াই দিন-রাত কাটাচ্ছি। ধোলাইখালের সেলিম মিয়া জানান, ১৫ দিন ধরে এলাকায় পানি নাই। পানির জন্য ইফতার- সেহরি ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। ঠিকমতো গোসল, কাপড় ধোয়া এমনকি বাথরুম করে ভালোভাবে পরিষ্কার হওয়ার উপায়টুকু নাই। মাদারটেকের হোসেন সরদার বলেন, পানির জন্য ঢাকা ছাড়তে হবে। দেশ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পানি। আর আমরা খাবার-গোসলের জন্য পানি খুঁজে পাই না। পানির বিল ঠিকই মাসে মাসে আদায় করা হয়। কিন্তু পানির সমস্যা সমাধান করার কোনো উদ্যোগ নেই। ওয়াসাকে অনেকবার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। মিরপুর-১১ এলাকার শাহেদ আলী বলেন, পানির জন্য ওয়াসার গাড়িতে হামলা করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় মানববন্ধন হয়। তারপরেও ওয়াসার টনক নড়ছে না। এভাবে আর কতদিন। উত্তর বেগুনবাড়ী এলাকার শাহিনা খাতুন জানান, পানি আসে পানি যায়। কখন আসে আর কখন যায় টেরই পাই না। ওয়াসার লোক পানি দিয়ে যায়। কিন্তু এতো অল্প পানি দেয়। কেউ পায় কেউ পায় না। একই এলাকার তবারক মিয়া জানান, সারাদিন রাতের মধ্যে ইফতারির আগে ছোট একটি গাড়িতে পানি দিয়ে যায়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় এই পানি কিছুই না। বাড্ডা এলাকায় পানির সমস্যা প্রায় এক মাস ধরে চলছে। বনশ্রী এলাকায় ২৫ দিন ধরে। আফতাবনগরের আশেপাশের এলাকায় ১৫ দিন, মতিঝিলে দুই সপ্তাহ। খাবারের পানির সংকট আছে। পানির অভাবে ঘরে রান্না করা যাচ্ছে না। বাচ্চাদের বাইরে থেকে খাবার কিনে দিতে হয়। ওয়াসা যে পানি দেয় তা কয়েকজনকে দিলেই শেষ হয়ে যায়। বাকিরা পানির অপেক্ষায় বসে থাকে। এলাকার সবাই কলসি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে। যেখানে পানি থাকে সেখান থেকে পানি এনে কাজ সারে। নামাপাড়ার রহমত শিকদার জানান, সেই ভোর রাতে পানি আসে। তখন পানির কোনো প্রয়োজন হয় না। আর যখন পানি আসে তখন বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকে না। তিনি বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই এই সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। যেখানে তিন বালতি পানির প্রয়োজন সেখানে এক বালতির চেয়ে কম পানি ব্যবহার করছি। হাজারীবাগের মোমেন আলী জানান, আমরা কলসি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আজ এতদিন হয়ে গেল পানির কোনো সমাধান হলো না। একদিকে তীব্র গরম আর অন্যদিকে রমজান মাস। এই সময়ে যদি পানি না থাকে তবে এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে।