শুষ্ক মৌসুম শেষ হয়ে এসেছে বর্ষা। কিন্তু এ বর্ষায় রাজধানীতে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে একযোগে। একের পর এক উন্নয়ন কাজের খোঁড়াখুঁড়িতে নগরীতে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, তিতাস, বিটিসিএল, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজের জন্য এই খোঁড়াখুঁড়ি। সাধারণ শুকনো মৌসুমে এসব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজ করার কথা। কিন্তু শুকনো মৌসুম শেষ হয়ে বর্ষা সমাগত হওয়ার পরও তাদের খোঁড়াখুঁড়ি অব্যাহত আছে। রাজধানীতে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এখন সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী এলাকা হচ্ছে মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, আগারগাঁও, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, খিলগাঁও, রামপুরা, তালতলা, কাকরাইল, ফকিরাপুলসহ আরো কিছু এলাকা। মাসের পর মাস এসব এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। আগারগাঁওয়ের পরিবার পরিকল্পনা ভবনের সামনের ফটক থেকে শুরু করে রোকেয়া সরণি, তালতলা, কাজীপাড়া এবং মিরপুরের একাধিক এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি গত কয়েক মাস ধরেই চলছে। ধারাবাহিক ভাবে ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, তিতাস, বিটিসিএল, মেট্রোরেলের কাজ চলছে। জানা যায়, আগারগাঁও নার্সারির পাশে মেট্রোরেলের একটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। তাই মাটির নিচে থাকা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের লাইন সরানোর কাজ গত কয়েক মাস ধরে চলছে। তবে এখনো মেট্রোরেলের পুরোপুরি কাজ শুরু হয়নি। মূল কাজ শুরু হলে এই এলাকায় ভোগান্তি আরো অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন নির্মাণ কাজের শ্রমিকরা। গতকাল আগারগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উন্নয়ন কাজের জন্য প্রধান সড়কের অর্ধেক কেটে রাখায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে। ব্যস্ততম এই সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু রাস্তা সরু থাকার কারণে যানজট লেগে থাকে সবসময়। গাড়ির লম্বা লাইন আগারগাঁও সিগন্যাল থেকে শুরু করে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্ত চলে গেছে। সামনের দিকে সিগন্যাল একটু দেরি হলেই এই যানজট আরো অনেক দূর গিয়ে গড়াচ্ছে। মিরপুরের একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী নুরুল হাসান জানান, প্রতিদিনই তিনি এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন। আগে এই রাস্তায় কোনো যানজট থাকতো না। কিন্তু এই উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই যানজট লেগেই থাকে। আগারগাঁও থেকে মিরপুর যেতে কখনো কখনো দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। রমজান আর এই গরমের মধ্যে যানজটে বসে থাকতে থাকতে অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, নিয়ম আছে এই কাজগুলো শুষ্ক মৌসুমে শেষ করার। কিন্তু আমাদের দেশে তা হচ্ছে না। মিরপুর বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী সোহেল রানা জানান, মিরপুরবাসীর এখন পানির ভোগান্তির সঙ্গে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তি। এই দুই ভোগান্তিতে এখন মিরপুরের বাসিন্দাদের কষ্টের সীমা নেই। তিনি বলেন, এই কাজ শেষে মেট্রোরেলের মূল কাজ শুরু হবে। তখন আরো ভোগান্তি বেড়ে যাবে। আর এই দুই ভোগান্তির কারণে অনেকে এই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে বাসা নিচ্ছে। বিকল্প বাসের চালক আলাল মিয়া জানান, আগে যেখানে আগারগাঁও থেকে মিরপুর যেতে বিশ মিনিট সময় লাগতো এখন সে জায়গায় কখনো দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। এদিকে মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য এই এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। ফ্লাইওভারের নিচের কাজ চলাকালীন সময়ে ভোগান্তি ছিলো চরমে। ইদানীং নিচের কাজ শেষ হয়ে উপরে কাজ চলছে। তাই ভোগান্তি কিছুটা লাগব হয়েছে। গতকাল মালিবাগ-মৌচাক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এখনো এই এলাকায় দুর্ভোগ আছে। যেসব জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছিলো এখনো তা মেরামত করা হয়নি। এছাড়া কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে ঈদকে সামনে রেখে এখন মোটামুটি রাস্তা মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করে দেয়া হয়েছে।