আগামীতে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, বিএনপিকে বাদ দিয়ে আগামীতে দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। হতে দেয়া হবে না। আগামীতে নির্বাচন হতে হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, হাসিনার অধীনে নয়। তিনি বলেন, এদেশে নির্বাচন হবেই হবে। তবে সেটা হবে সহায়ক সরকারের অধীনে। সেই নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। আমরা চাই, সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েলস সেন্টারে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়া বলেন, ‘গোপন জরিপে’ একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য পরিণতি জেনে গিয়ে সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তারা চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বিএনপি নির্বাচনে এলে তাদের যে কী পরিণতি হবে, তারা গোপন খবর নিয়ে জেনে গেছে। তাদের অবস্থান কত নিচে। সেটা তারা বুঝে গেছে। সেজন্যই তারা নানাভাবে হয়রানি করছে যাতে বিএনপি নির্বাচনে না আসে, বিএনপির লোকজনকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়। ২০১৪ সালে কোনো দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। আগামী নির্বাচন হতে হবে সকল দলের অংশগ্রহণে। ২০১৮ সাল হবে গণতন্ত্রের বছর, উন্নয়নের বছর, শান্তির বছর। বৃটেনে সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা দেখেছেন বৃটেনে নির্বাচন হয়ে গেছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে) তো ভয় পাননি, তিনি নির্বাচন দিয়েছেন। অথচ তিনি এবার কিছু কম পেয়েছেন সিট। তারপরও তিনি সাহস করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের যদি সামান্যতম সাহস থাকে সেভাবে নির্বাচন দিক। কেন, তারা ভোটে হেরে যাবে এটা নয়। কত অপকর্ম তারা ১০ বছরে করেছে এর হিসাব বিএনপি যদি ছেড়েও দেয়, জনগণের কাছে প্রতিটি জিনিসের হিসাব আছে। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় চুরির চিন্তায় থাকে। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর থেকেই চুরি করে আসছে। তারা জনগণের রিলিফ চুরি করে, গম চুরি করে কখনও জনগণের ভোট চুরি করে। আমরা ভিশন ২০৩০ দিয়েছি। আওয়ামী লীগ বলে তাদের ভিশন নাকি বিএনপি চুরি করেছে। তাদের তো কোনো ভিশন নেই। তারা চুরির চিন্তায় থাকে। আমাদের ভিশন আর তাদের ভিশন এক হতে পারে না। আমাদের চিন্তা আর তাদের চিন্তা এক নয়। ক্ষমতাসীন দলের লুটপাট-দুর্নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই ১০ বছরে তারা যত লুট করেছে, যত খেয়েছে। তাদের একেক জনের এত ওজন বেড়েছে যে, গাড়িও তাদের টানতে পারবে কিনা জানি না। আমি বলছি, এই কয়েকটা মাস আছে। যত পারেন লুটে নেন- আপনাদের জেনারেল সেক্রেটারি (ওবায়দুল কাদের) যেভাবে বলছেন যা পারেন লুটে নেন। বিদেশে যান না হলে আর বেশি সময় পাবেন না। এখন সময় চলে যাওয়ার। এরা জানে নির্বাচন করা তো দূরের কথা, তারা পালাবার সময় পাবে না, বেরুতে পারবে না। সেজন্য তারা একতরফা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির ইফতার মাহফিলেও বাধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ২০১৮ সাল দেশের জনগণের বছর হবে, গণতন্ত্রের বছর হবে, উন্নয়নের বছর হবে, শান্তির বছর হবে। কী ভাই মুক্তিযোদ্ধারা মনে থাকবে তো? আমরাও আছি। মুক্তিযোদ্ধাদের সকলকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান তিনি। মূলমঞ্চে জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীরবিক্রম, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, মে. জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানসহ প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ইফতার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইফতারে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, সেলিমা রহমান, শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, শামসুজ্জামান দুদু, মে. জে. (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, বিএনপির সিনিয়র নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সুজাউদ্দিন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামা ওবায়েদ, লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন, শাহ মো. আবু জাফর, হাসানউদ্দিন সরকার ও বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া অংশ নেন। ইফতারে মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে- আবুল হোসেন, মোস্তফা সাহাবুদ্দিন রেজা, মিজানুর রহমান খান, আবদুস সামাদ মোল্লা, আবদুল মান্নান, মালেক খান, আবুল কাশেম, এসএম মোস্তফা কামাল, এইচআর সিদ্দিকী সাজু, কাজী নাসির আহমেদ, আবদুল হাকিম, মোহাম্মদ সাদেক, মতিউর রহমান, কামালউদ্দিন, জোয়াদুর রসুল বাবু ও আবদুল মতিন ইফতারে অংশ নেন।