মাস দেড়েক আগে ইংল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর আগে মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন, যেকোনো কিছুই হতে পারে। স্বপ্নের পরিধি যে সেমিফাইনাল, সেটা সরাসরি বলতে পারেননি। সেই সেমিফাইনালে বাংলাদেশ উঠেছে, শেষটা অবশ্য একদমই মনে রাখার মতো হয়নি। মাশরাফি বিন মুর্তজা সেমিফাইনালে যাওয়ার সেই সুখস্মৃতি নিয়েই বলছেন, মানসিকভাবে এই দলকে আরও বেশি শক্ত হতে হবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করাটাই বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন ছিল। সেখানে শেষ চারে থাকাটা তো আরও বড় ব্যাপার। ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের স্মৃতিটা তো টাটকাই। মাশরাফির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শেষ সংবাদ সম্মেলনে প্রাপ্তির মধ্যেও ছুঁয়ে গেল সেই হতাশা। সেমিফাইনালে আমরা আরও ভালো খেলতে চেয়েছিলাম। সেটা হয়নি। ভালো একটা স্কোরের পথেই ছিলাম আমরা, কিন্তু দুই উইকেট পড়ে যাওয়ায় আমরা সেটা পারিনি। এটা নিয়ে তো হতাশই। শুধু কি সেমিফাইনাল? পুরো টুর্নামেন্ট কী করেছেন ব্যাটসম্যানরা? বোলাররা কি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী বোলিং করতে পেরেছেন? টুর্নামেন্টের পরিসংখ্যান ঘাটলে সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। পুরো টুর্র্নামেন্টে একেবারে নির্জীব ছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। এক তামিম ছাড়া সেভাবে হাসেনি কারও ব্যাট।
তামিম ইকবালও মুশফিকুর রহীম বাদে কেউই ধারাবাহিক ছিলেন না এই আসরে। মোস্তাফিজ, সাব্বির, সৌম্যরা চার ম্যাচে নিজেদের হারিয়েই খুঁজেছেন। টুর্নামেন্টের শুরুর ম্যাচ থেকেই দেখা যাক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে তিন শতাধিক স্কোর করেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচেও তামিম মুশফিক ছাড়া হাসেনি কারও ব্যাট। তামিম ১২৮ ও মুশফিক করেছিলেন ৭৯ রান। এদের বিদায়ের পর সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, সাব্বির, মোসাদ্দেক কেউ বলার মতো স্কোর করতে পারেনি। যে কারণে ৩০৫ রানেই থামে বাংলাদেশের ইনিংস। সহজেই টপকে যায় ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও তামিম ছাড়া বাকিরা ব্যর্থ। মাত্র ৫ রানের জন্য এই ম্যাচে সেঞ্চুরি মিস করেন এ ওপেনার। যার ফলে ১৮২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। যদিও বৃষ্টির কল্যাণে এক পয়েন্ট জোটে মাশরাফি বাহিনীর। ওই এক পয়েন্ট আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ জয়ের ফলেই সেমিফাইনালের টিকেট পায় টাইগার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জিতলেও কিন্তু ব্যর্থ ছিল বাংলাদেশের টর্প অর্ডার। কিউইদের ছুড়ে দেয়া ২৬৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৩৩ রানেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তামিম, সৌম্য, সাব্বির, মুশফিক। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান। দুজন ওইদিন সেঞ্চুরি করে মাঠ ছাড়েন। ওই সেঞ্চুরি ছাড়া পুরো আসরেই ব্যর্থ সাকিব, মাহমুদুল্লাহর ব্যাট।
সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তামিম মুশফিকের বিদায়ের পরও তারা হাল ধরতে পারেনি দলের। যদিও সেমিফাইনালে নিজেদের ব্যর্থতার চেয়ে তামিম, মুশফিকের ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখেছেন সাকিব। তার মতে, সেট হওয়ার পর তামিম, মুশফিকের সেঞ্চুরি করে মাঠ ছাড়া উচিত ছিল। ওরা দুজন সেঞ্চুরি পেলে আমরা তিন শতাধিক রান করতে পারতাম। সেক্ষেত্রে ম্যাচের চিত্র অন্যরকম হলেও হতে পারতো। যদিও এক সেঞ্চুরি ছাড়া বলার মতো কিছুই করতে পারেননি সাকিব নিজে। এক সেঞ্চুরিতে চার ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৬৮ ও মাহমুদুল্লাহ করেছেন ১৩৭ রান। চার ম্যাচে মাত্র ৫৯ রান করেছেন সাব্বির রহমান। সমান ম্যাচে সৌম্য সরকারের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৪ রান। তিন ম্যাচে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সংগ্রহ ২৪।
এ তো গেল বাংলাদেশের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের চিত্র। এবার বোলিংয়ের দিকে নজর দেয়া যাক। নিকট অতীতে এত সাদামাটা বোলিং ছিল না টাইগারদের। পুরো টুর্নামেন্টের চার ম্যাচে প্রতিপক্ষের মাত্র ১১ জন ব্যাটসম্যানকে আউট কতে পেরেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। একেবারে বাজে অবস্থা পার করেছেন দলের অন্যতম দুই সেরা বোলার একজন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান, অন্যজন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। মোস্তাফিজ চার ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র এক উইকেট। ৬.২২ ইকোনোমি রেটে উইকেটশূন্য ছিলেন সাকিব। রুবেল, তাসকিনরাও নিজেদের নামের প্রতি একেবারে সুবিচার করতে পারেননি। চার ম্যাচে রুবেল ও তাসকিন নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। এদের মাঝে একেবারে ব্যতিক্রম ছিলেন টাইগার দলপতি মাশরাফি। ৪.৭০ ইকোনোমি রেটে বোলিং করে দুই উইকেট নিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের ব্যাটিং বোলিং পরিসংখ্যান
ব্যাটিং
নাম ম্যাচ ই. অপ. রান সর্বোচ্চ গড় ১০০/৫০
তামিম ৪ ৪ ০ ২৯৩ ১২৮ ৭৩.২৫ ১/২
সাকিব ৪ ৪ ০ ১৬৮ ১১৪ ৪২.০০ ১/০
মুশফিক ৪ ৪ ০ ১৬৩ ৭৯ ৪০.৭৫ ০/২
মাহমুদুল্লাহ ৪ ৪ ২ ১৩৭ ১০২* ৬৮.৭০ ১/০
সাব্বির ৪ ৪ ০ ৫৯ ২৪ ১৪.৭৫ ০/০
সৌম্য ৪ ৪ ০ ৩৪ ২৮ ৮.৫০ ০/০
ইমরুল ২ ২ ০ ২৫ ২৫ ১২.৫০ ০/০
মোসাদ্দেক ৩ ৩ ২ ২৪ ১৫ ২৪.০০ ০/০
বোলিং
নাম ম্যাচ ওভার মে. রান উই. গড় ইকো.
মাশরাফি ৪ ৩৫.০ ১ ১৬০ ২ ৮০.০০ ৪.৭০
মোস্তাফিজ ৪ ২৯.০ ০ ১৮৩ ১ ১৮৩ ৬.৩১
সাকিব ৪ ২৭.০ ০ ১৬৮ ০ ০ ৬.২২
রুবেল ৪ ৩০ ০ ১৯১ ২ ৯৫.০০ ৬.৩৬
তাসকিন ২ ১৫ ০ ৯২ ২ ৪৬.০০ ৫.৯১
মোসাদ্দেক ৩ ১২.২ ০ ৭৩ ৩ ২৪.৩৩ ৫.৯১