ঈদ সামনে রেখে রাজশাহীতে অলিগলিতে এমনকি স্টিল, প্লাস্টিক ও লোহার জিনিসপত্র তৈরির কারখানায়ও তৈরি হচ্ছে সেমাই। স্থায়ী কারখানাগুলোর পাশাপাশি এমন ৫০টির বেশি অস্থায়ী কারখানা গড়ে উঠেছে মৌসুমি ব্যবসার জন্য। কিন্তু সব কারখানারই পরিবেশ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর।
অস্থায়ী কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কোনো অনুমোদন নেই। স্থায়ী কারখানায় তৈরি সেমাইয়ের মানও নিশ্চিত করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরকে ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও রাজশাহীর একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল ও নিম্নমানের লাচ্ছা সেমাই তৈরি করে বাজারজাত করছে। নগরী ও নগরীর উপকণ্ঠের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক অস্থায়ী কারখানা।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক), নগরীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোপনে ৫০টিরও বেশি সেমাই কারখানা গড়ে উঠেছে।
এ ছাড়া বিশাল, বনফুল, বেলিফুল, রুচিতা, পপুলারসহ ১০ থেকে ১২টি নামিদামি লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানা তো রয়েছেই। ঈদ উপলক্ষে এসব স্থায়ী ও অস্থায়ী কারখানায় ২০ দিন ধরে তৈরি হচ্ছে সেমাই। এরই মধ্যে সেমাই বাজারজাতও শুরু করেছে তারা।
সরেজমিনে কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, স্থায়ী কারখানাগুলোতেও নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। আর অস্থায়ী কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে স্টিল, প্লাস্টিক, লোহাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির কারখানার ভেতরে ছোট জায়গায় অথবা অলিগলির ভেতরে। কেউ জায়গা ভাড়া নিয়ে অথবা কারখানা মালিকরা নিজেরাই এসব অস্থায়ী সেমাই কারখানা গড়ে তুলেছে। তবে ছবি তোলার চেষ্টা করেও তাদের সতর্কতা এবং বাধার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। কোনো কারখানায় এই প্রতিবেদককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আবার কোনো কোনোটি এমন লোকালয়ে গড়ে উঠেছে যে সেগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াও মুশকিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কারখানা মালিক জানান, প্রতিবছর ঈদুল ফিতরে রাজশাহীতে যে পরিমাণ সেমাই ও লাচ্ছা সেমাইয়ের প্রয়োজন হয়, তা স্থায়ী কারখানাগুলো সরবরাহ করতে পারে না। আবার স্থায়ী কারখানাগুলোর তৈরি সেমাই ও লাচ্ছা সেমাই নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
তাঁরা আরো জানিয়েছেন, এসব কারখানার মালিকরা প্রশাসনের চোখের আড়ালে বা তাদের ‘ম্যানেজ’ করে অনেকটা গোপনে সেমাই তৈরি করে যাচ্ছেন। কেউ কেই রাতে কাজ করাচ্ছেন।
আব্দুস সালাম নামের এক কারখানা মালিকের দাবি, অস্থায়ী কারখানা মালিকরা বছরের এই সময়টায় শুধু সেমাই তৈরি করে। কেউ কেউ নিজের বাড়িতেও তৈরি করছে সেমাই। আবার কেউ অন্যের জায়গা মাস দুয়েকের জন্য ভাড়া নিয়ে গোপনে তৈরি করছে। সবই হচ্ছে বাজারে এই সময়টায় বিপুল চাহিদা থাকার কারণে। এ ব্যবসায়ীর হিসাবে রাজশাহীতে শুধু অস্থায়ী কারখানায় প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে অন্তত ৬০০ মণ সেমাই।
আরেকটি কারখানার মালিক সোহেল রানা বলেন, ‘মাত্র এক-দেড় মাসের জন্য কেউই বিএসটিআইয়ের কাছে অনুমোদন নিতে যায় না। যারা সারা বছর সেমাই তৈরি করে, তারাই কেবল অনুমোদন নেয়। আর অস্থায়ী ব্যবসায়ী হিসেবে আমাদের প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা করতে হয়। তা না হলে এক দিনও সেমাই তৈরি করতে পারব না।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক মামুন অর রশিদ বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এই ধরনের কাজ করছে। এই সেমাই খুবই অস্বাস্থ্যকর ও নিম্ন মানের। তৈরি হচ্ছে নোংরা পরিবেশে। বেশির ভাগই হচ্ছে শহর থেকে একটু দূরে। প্রশাসনের চোখের আড়ালে এগুলো তৈরি করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও বিএসটিআইয়ের অভিযান আরো জোরদার করা উচিত।’
বিএসটিআইয়ের রাজশাহীর আঞ্চলিক পরিচালক আলতাব হোসেন বলেন, রমজান মাস শুরুর পর থেকেই নগরীতে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন তাঁরা। অস্বাস্থ্যকর বা অনুমোদনহীন কারখানায় সেমাই তৈরি হলে সেখানেও অভিযান চালানো হবে।