ডেস্ক নিউজ: চলনবিলে অঞ্চলে প্রতিটি জনপদ বর্ষায় রূপ ধারণ করে ষোড়শী যৌবনার। খাল-বিল ভরে যায় পানিতে। বিলের সবুজ ধান ক্ষেত যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। ক্ষেতে কাজ নেই, তাতে কী? জীবনযুদ্ধে খেটে খাওয়া মানুষগুলো হারতে নারাজ। জীবন-জীবিকার জন্য অভাবীরা এ সময় বেছে নেয় অন্য পেশা। মাছ ধরার এক প্রকার যন্ত্র যার স্থানীয় নাম খলসুনি। মতান্তরে চাঁই তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এ এলাকার হাজার হাজার মানুষ। বাঁশ, তালের আঁশ আর লই বদলে দিয়েছে তাদের ভাগ্য। আর চলনবিল এলাকার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগা হাট, গুরুদাসপুর উপজেলার চাচকৈড় হাটসহ বিখ্যাত অনেক হাটে চাই বিক্রিরও ধুম পড়ে গেছে। জেলেরা তা কিনে বাড়ি ফিরছেন।
তবে কত দিন যাবত চলছে এ কাজ : চলনবিল এলাকায় প্রথম কবে ও কোথায় খলসুনি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে এ ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যাক্তিরা জানান, তাদের দাদার আমল থেকেই তারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত। অনেকে নতুন করে আসছে এ পেশায় তাই দিন দিন এর সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছেই। অনেকে জানান, বংশানুক্রমে তারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত।
যেভাবে তৈরি হয় : প্রথমে বাঁশ চিরে খিল তুলে চিকন করে। সেগুলো শুকিয়ে নেয়া হয় হালকা রোদে। পচানো তালের ডাগুরের আঁশ দিয়ে খিল বান দেয়া হয়। এসব কাজে গৃহবধূ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরাও পরিবারকে সহায়তা করে থাকে। দিন-রাত চলে খলসুনী তৈরির কাজ।
ধরইল মৎসজীবী পাড়ার মস্তফা জানান, তার গ্রামের প্রায় আড়াইশ’ পরিবার খলসুনি তৈরির কাজে জড়িত। তার দুই ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রী এই কাজে তাকে সহায়তা করে থাকে।
দাম কেমন : আকারভেদে প্রতি জোড়া খলসুনির দাম ৪০০-৫০০ টাকা। কখনও কখনও এর চেয়েও বেশি। আকারের ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয় দাম। এক জোড়া খলসুনি তৈরিতে সময় লেগে যায় প্রায় দু’তিন দিন। উপকরণ বাবদ খরচ হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। খলসুনি প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা লাভ থাকে বলে অনেকেই জানান।
খলসুনির হাট : এ এলাকায় তৈরি খলসুনি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ হাট, গুল্টা হাট, রায়গঞ্জের নিমগাছীর হাট, সলঙ্গা হাট, চাটমোহর ছাইকোলা হাট, মির্জাপুর হাট, নাটোরের গুরুদাশপুর হাট, চাচকৈড় হাটসহ অন্যান্য হাটে বিক্রি হয়ে থাকে। এসব হাটে পাইকারি ও খুচরা ক্রয়-বিক্রয় হয় খলসুনি। নওগা হাটের ব্যবসায়ী আবুল বাসার জানান, জোড়াপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ হয়। এই দিয়ে কোনো মতে টিকে আছি জীবনযুদ্ধে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় বসে খলসুনির হাট। হাটের ইজারাদাররা খাজনা বেশি নেয়ায় ক্রেতা, বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইজারাদারদের বচসা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
তাড়াশ উপজেলার ভাদাস গ্রামের শাহ আলম ২০টি চাই কিনে ফেরার পথে তাড়াশ প্রেসক্লাবের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে তিনি বলেন,চাচকৈড় হাট থেকে চাই কিনে বাড়ি ফিরছেন। কারণ বর্ষা মৌসুমে খালবিল পানি ডুবে যায়। কোন কাজ থাকে না। তাই চাই দিয়ে উচু জমির মাঝে মাছ ধওে জীবিকা নির্বাহ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, খাজনা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারলে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার পরিবার উপকৃত হবে।