রায়হান কবির, স্বদেশ নিউজ ২৪.কমঃ ঈদ সামনে রেখে জাল টাকা ব্যবসায়ীদের কয়েকটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পুলিশ বলেছে, রাজধানীতে চারজন হোতার অধীনে কমপক্ষে ১৫টি জাল নোট সরবরাহকারী চক্র এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন বিপণিবিতানে কৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে জাল টাকা। বাণিজ্যিক লেনদেন এমনকি এটিএম বুথেও পাওয়া যাচ্ছে জাল টাকা। মূলত রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম জাল টাকার কারবারিদের কেন্দ্র হলেও তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে আছে দেশজুড়ে।
প্রতি বছর ঈদ এলেই আর্থিক লেনদেন বেড়ে যায়। সে চাহিদা মেটাতে বরাবরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নতুন নোট ছাড়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় হয়ে উঠে জাল নোট প্রস্তুতকারীরা। ইতোমধ্যে তিন জাল নোট সরবরাহকারীকে গত সপ্তাহে রাজধানীর শ্যামপুর ও তেজগাঁও থেকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৮ জুন থেকে জনসাধারণের হাতে বিভিন্ন কাউন্টারের মাধ্যমে নতুন নোট তুলে দেয়ার কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময় রাজধানীর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা থেকে ২ থেকে ৫০ টাকা মূল্যমানের নতুন নোট বিনিময় শুরু হয়। এর ঠিক তিনদিন পর, ১১ জুন বিকালে রাজধানীর শ্যামপুর থানাধীন ধোলাইপাড় এলাকা থেকে হারুন (৬০) ও মাসুদ (২১) নামে জাল নোট চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, চারজন পরিকল্পনাকারী বর্তমানে রাজধানীতে জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এদের অধীনে এখন সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে অন্তত ১৫টি চক্র। কয়েক ধাপে বিভক্ত এসব চক্রের সদস্যরা বাজারে জাল নোট প্রচলনের কাজ করে থাকে।
ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে অন্তত সাতটি নোট জালকারী যন্ত্র চালু রয়েছে। এগুলোয় নোট জালের মূল কাজটি করে চারজন কারিগর বা মাস্টার। এ চার মাস্টার হলো- হুমায়ুন, আলাউদ্দিন, আজিজ ও জাকির। এদের মধ্যে আলাউদ্দিন আশুলিয়া এলাকায় থাকে। আর জাকির থাকে ফার্মগেটে। বাকি দুজনের অবস্থান এখনো জানা যায়নি। তবে এটুকু জানা গেছে, এসব মাস্টার নির্দিষ্ট এলাকায় থাকলেও এক বাসায় ১০ দিনের বেশি থাকে না। ফলে এদের গ্রেফতার করাটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। ঈদের আগেই অন্তত দুজন মাস্টারকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর জাল নোট চক্রের মূল হোতার কাছে জাল টাকা তৈরির বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক মেশিন রয়েছে। প্রতি বছরই এরা ঈদের আগে ব্যাংকগুলোর নতুন নোট ছাড়ার অপেক্ষায় থাকে। বাজারে নতুন নোট আসার পর এরা এসব নোটের কিছু কপি সংগ্রহ করে। সংগ্রহ করা নোটের ভিত্তিতেই জাল নোট তৈরির কাজ শুরু করে মাস্টাররা।