মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর হামলার পরিণাম শুভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পরপর দুটি টুইট বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন। টুইটে খালেদা জিয়া
বলেন, বিএনপি মহাসচিবের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা নেই। এ হামলা গণতন্ত্র, রাজনীতি, নাগরিক অধিকার ও পরমতসহিষ্ণুতার ওপর হামলা। এর পরিনাম শুভ হবে না। এ ঘটনায় পরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, পাহাড়ধসে উপদ্রুত এলাকায় সরকারের তাচ্ছিল্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে যে ধিক্কার উঠেছে, সেখান থেকে জনগণের চোখ অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার জন্যই বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। আওয়ামী পাণ্ডাদের দিয়ে বিএনপির গাড়িবহরে আক্রমণ সরকারের পতনের আগে শেষ মরণকামড়। তবে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর সব অপকর্মের হিসাব নিতে জনগণ অপেক্ষা করছে। আর এ অপেক্ষা বেশি দীর্ঘ হবে না। বিবৃতিতে তিনি বলেন, পাহাড়ধসে রাঙ্গামাটির বিধ্বস্ত জনপদ ও মাটিচাপায় হতাহতদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় টিম রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালীতে তাদের গাড়িবহরে আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত হামলা চালায়। হামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, তার সফরসঙ্গী দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মে. জে. (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মীর ফাওয়াজ হোসেন শুভ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বকরসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ হামলাকে ন্যক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় বিএনপি মহাসচিবসহ বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের গাড়িবহরে হামলা ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করে আহত করার যে নজির সৃষ্টি করা হলো তা গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু মুছে ফেলতে সরকারের একটি দুর্বিনীত উদ্যোগ। এ ঘটনা বর্তমান বিনা ভোটের সরকারের আরেকটি হিংসাশ্রয়ী অসুস্থ রাজনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গুন্ডামিকেই আশ্রয় করেছে টিকে থাকার অবলম্বন হিসেবে। তাই শান্তি, স্বস্তি ও জননিরাপত্তাকে বিসর্জন দিয়ে নৈরাজ্যকেই বেছে নিয়েছে। এভাবে ভয়ভীতি, শঙ্কা ও আতঙ্কের পরিবেশ বজায় রেখে গণপ্রতিবাদকে চাপা দিয়ে রাখাটাই হচ্ছে তাদের মূল লক্ষ্য। সরকার ভক্ষকের ভূমিকা গ্রহণ করার জন্যই বাংলাদেশে মানুষের জীবন-জীবিকা এখন ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাহীনতায় বিপন্ন। জনসমর্থনহীন ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতেই অপরাধ ও অপরাধীদের সহযোগী হিসেবে বেছে নিয়েছে এ সরকার। তাই জনসমাজে সন্ত্রাসীদের শাসনই সর্বত্র বিরাজমান। খালেদা জিয়া বলেন, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, মৌলভীবাজারে পাহাড় ধ্বসে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুতে ওই এলাকাগুলোর বিপন্ন মানুষগুলো এখন শোকে-দুঃখে ম্রিয়মাণ। হাজার হাজার আহত মানুষের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। উপদ্রুত মানুষ বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা না থাকায় অভুক্ত ও অসুস্থতায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ওই এলাকাগুলোয় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। উপদ্রুত এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে সরকার প্রধান বিদেশ সফরেই সময় কাটিয়েছেন। দুর্গত এলাকার অসহায় বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি নিয়ে ভ্রূক্ষেপহীন থেকেছেন সরকার প্রধান। বাংলাদেশের জনগণকেই আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় দুশমন মনে করে। সেজন্য বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্ভোগে নিপতিত মানুষের পাশে আওয়ামী সরকার কোন সময়ই দাঁড়ায়নি। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এরা জনগণের বিপদে ও কষ্টে আনন্দ লাভ করে। তাই বৃহত্তর চট্টগ্রামে যেসব এলাকায় পাহাড়ধসে মানববিধ্বংসী মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে সেসব এলাকায় দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল- বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত টিমকে ঢুকতে না দিয়ে তাদের গাড়িবহরে হামলা, উপদ্রুত এলাকায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের ব্যর্থতা ঢাকারই কৌশল। হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান। সেই সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবসহ আহত নেতৃবৃন্দের আশু সুস্থতা কামনা করেন।