ব্রিটেনের রানীর জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশিকে সম্মানজনক খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। খেতাবপ্রাপ্তরা হলেন- ব্যাংকার সুলতান আহমদ চৌধুরী, কাউন্সিলর আব্দুল জব্বার, শেফ টমি মিয়া, আর্টিকেল ১৯-এর তাহমিনা রহমান ও আসিফ আনওয়ার আহমদ।
এদের মধ্যে সুলতান ওর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই), জব্বার, টমি ও তাহমিনা মেম্বার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (এমবিই) এবং আসিফ আনওয়ার ওর্ডার অব সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড সেন্ট জর্জ-সিএমজি খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। প্রতি বছর দুই দফায় জুন মাসে নিজের জন্মদিন উপলক্ষে এবং ইংরেজি নববর্ষে কয়েকশ ব্যক্তিকে বিভিন্ন মর্যাদার সম্মাননা দেন ব্রিটিশ রাণী।
এ বছর ‘ওর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’ সম্মাননার শতবর্ষ উদযাপন হচ্ছে। এবার মোট সম্মাননাপ্রাপ্ত এক হাজার ১০৯ জনের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।
টমি মিয়া
মৌলভীবাজারের ছেলে টমি মিয়া আজ বিশ্বখ্যাত রন্ধনশিল্পী। ১০ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে যাওয়ার পর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন রেস্তোরায় প্লেট ধোয়ার কাজ দিয়ে। পরে রান্নাকেই বেছে নেন ক্যারিয়ার হিসেবে। বৃটেন সরকার রন্ধনশিল্পী টমি মিয়াকে দিয়েছে কারি কিং উপাধি। বাংলার এই ছেলের খ্যাতি এখন বিশ্বজুড়ে।
ডাক নাম টমি মিয়া। পুরো নাম মোহাম্মদ আজমান মিয়া। মৌলভীবাজারের বারন্তী গ্রামে জন্ম তার। ১০ বছর বয়সে বাবা মার সাথে টমি মিয়া ব্রিটেনে যান।
পরিবারকে সাহায্য করার জন্য ছাত্রাবস্থায় কর্মজীবন শুরু করেন ইংল্যান্ডের একটি রেস্তোরায় প্লেট ধোয়ার কাজ দিয়ে। এরপর বেছে নেন রান্নার কাজ। খোলেন রেস্তোরা। সেই থেকে শুরু, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ইংল্যান্ডে টমি মিয়া নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন বিশ্বের সেরা রন্ধন শিল্পী হিসেবে। তার হাতের রকমারি সুস্বাদু রান্না ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় লন্ডনে।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুনাম কুড়িয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এ ব্রিটিশ। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের জন্যেও রান্না করেছেন। ব্রিটেনে টমি মিয়া পরিচিতি পেয়েছেন কারি কিং হিসেবে।
এত খ্যাতির পরেও ভোলেন নি প্রিয় দেশকে। মাতৃভূমির টানে ১৯৮৬ সালে দেশে এসে নেন নানা উদ্যোগ। বেকারত্ব দূর করতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে খোলেন টমি মিয়া হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে তরুণ-তরুণীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন দেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশে একটি ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তোলেন।
টমি মিয়া হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি ও চ্যারিটি ক্ষেত্রে অবদানের জন্যে শেফ টমি মিয়া নামে পরিচিত মোহাম্মেদ আজমান মিয়া পেয়েছেন এমবিই খেতাব। এডিনবরার বাসিন্দা টমি মিয়া ১৯৯১ সালে ইন্টারন্যাশনাল শেফ অব দি ইয়ার প্রতিযোগিতা চালু করেন। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তিনি শ্রীপুর ভিলেজ অরফানেজের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন।
এডিনবরায় রাজ রেস্টুরেন্টের প্রতিষ্ঠাতা টমি মিয়া ঢাকায়ও একটি রেস্তোরাঁ চালু করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে, শিশু পল্লী, সিআরপি, আরবিস চক্ষু হাসপাতালসহ বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহ করে দেন।
সুলতান আহমদ চৌধুরী :
সুলতান আহমদ চৌধুরী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যাংকার সুলতান আহমদ চৌধুরীকে যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারে ইসলামী ফিন্যান্সে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ওর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার সম্মানে ভুষিত করা হয়েছে।
ব্রিটেনের আল রায়ান ব্যাংকের (সাবেক ইসলামী ব্যাংক অব ব্রিটেন) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান চৌধুরী ১৯৯৪ সালে নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করে। এরপর আস্টন বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ করেন তিনি।
কর্মজীবনে হিসাব রক্ষণ প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট অ্যান্ড টুশ, চার্লস শোয়াব ইউরোপ এবং বার্কলেজ প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করেন সুলতান আহমদ চৌধুরী। ২০০৪ সালে ইসলামী ব্যাংক অব ব্রিটেনের প্রতিষ্ঠালগ্নে ব্যবস্থাপনা দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি ব্যাংকের কমার্শিয়াল ডিরেক্টর ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস উন্নয়ন বিষয়ক যুক্তরাজ্য সরকারের উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য ছিলেন সুলতান চৌধুরী।
আব্দুল জব্বার :
আব্দুল জব্বার গ্রেটার ম্যানচেস্টারের ওল্ডহ্যাম কাউন্সিলের সাবেক মেয়র ও বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল জব্বারকে রাজনীতি ও জনসেবায় অবদানের জন্য মেম্বার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (এমবিই) সম্মাননা দেওয়া হয়। গত ২৩ বছর ধরে স্থানীয় লেবার পার্টির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন জব্বার। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি ওল্ডহ্যাম মেট্রোপলিটন বরো কাউন্সিলের কাউন্সিলর।
হাউজিং ম্যানেজমেন্টে ইউনিভার্সিটি অব সলফোর্ড থেকে এমএসসি ডিগ্রিধারী আব্দুল জব্বার পেশায় হাউজিং ম্যানেজার। ওল্ডহ্যামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণদের খেলাধুলার উন্নয়নে বাংলাদেশ ইয়ুথ এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত তিনি।
তাহমিনা রহমান
তাহমিনা রহমান বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা ও তথ্য অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আর্টিকেল ১৯-এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক তাহমিনা রহমান পেয়েছেন এমবিই সম্মাননা। তাহমিনা ব্রিটেনের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি), নরওয়ের পররাষ্ট্র দপ্তর ও সিডার বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অক্সফাম, ওয়াটারএইড- এর বিভিন্ন পদেও দায়িত্ব পালন করেন তাহমিনা রহমান। এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
আসিফ আনওয়ার
আহমদ আসিফ আনওয়ার আহমদ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটিশ স্বার্থ রক্ষায় অবদানের জন্যে বর্তমানে ফিলিপিন্সে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত আসিফ আনওয়ার আহমদকে ওর্ডার অব সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড সেন্ট জর্জ (সিএমজি) সম্মাননা দেওয়া হয়। এর আগে থাইল্যান্ড ও লাওসে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন তিনি। অগাস্টে জ্যামাইকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনারের দায়িত্ব নেবেন।
ডারহাম ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির গ্রাজুয়েট আসিফ আনওয়ারের জন্ম যুক্তরাজ্যে, ১৯৫৬ সালে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক কূটনীতিকের ছেলে আসিফ ১৯৯৬ সাল পর্যন্তু ব্রিটেনে একটি ব্যাংকে কাজ করেন। পরে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসে যোগ দিয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।