আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসির ৩০তম জন্মদিন আজ। জন্মদিনকে কেন্দ্র করেই রোজারিওতে আছেন মেসি। তাইতো সব পথ যেন মিলেছে রোজারিওতে। একে তো সময়ের সেরা ফুটবলারের জন্মদিন দুই ফুটবলারের আবার বিয়ে, সেই উপলক্ষে রোজারিওতে আসছেন ফুটবলের, শোবিজ-জগতের অনেক তারকা।
মেসির বিয়ে এরই মধ্যে পেয়ে গেছে গত কয়েক দশকে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিয়ের স্বীকৃতি। জন্ম দিনের ছয় দিন পর জন্মস্থান রোজারিওরই সিটি সেন্টারে দীর্ঘদিনের বান্ধবী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর সঙ্গে বিয়ের বাঁধনে বাঁধা পড়তে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। আমন্ত্রিতদের তালিকায় আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ছোটকালের বন্ধু যেমন আছেন, তেমনি আছেন বার্সেলোনার তারকা সতীর্থ-বন্ধুরাও। নেইমার, লুইস সুয়ারেজ, সেস্ক ফ্যাব্রিগাস সবাই। সব গুঞ্জন মিথ্যা করে অনুষ্ঠানে আসবেন বলা কথা দিয়েছেন জেরার্ড পিকে ও তাঁর স্ত্রী কলম্বিয়ান পপতারকা শাকিরাও। শুধু রোজারিও কেন, পুরো বিশ্বই তো এই বিয়ে নিয়ে রোমাঞ্চিত। পুরো আর্জেন্টিনাই যেন মেসির বিয়ে নিয়ে মহাব্যস্ত।
বিয়ের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকারী বারবারা দিয়েজও
মেসির বিয়ের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকারী বারবারা দিয়েজও। বিখ্যাত এই ব্যক্তি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মরিসিও মাক্রির ঘনিষ্ঠ এক মিত্রের স্ত্রী। ফুটবল আর রাজনীতি যেখানে সমান্তরালে চলে, সেই আর্জেন্টিনায় ব্যাপারটা এমনই হওয়ার কথা! মেসির বিয়েতে গান গাইবেন মেসির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আর্জেন্টিনা দলের সতীর্থ সার্জিও আগুয়েরোর স্ত্রী কারিনা।
থাকছেন না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
কেউ বলছেন এই বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা ৬০০, আবার আর্জেন্টাইন অনেক সংবাদমাধ্যমই বলছে, সংখ্যাটা ২৫০। তা কে কে থাকছেন? বিয়েতে বার্সেলোনার মূল দলের ২১ ফুটবলারকেই নিমন্ত্রণ করেছেন মেসি। আসছেন পুরোনো সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজও। তবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থাকছেন না। নিমন্ত্রণ পাননি বার্সেলোনার কোনো কোচও। তবে বার্সেলোনার পুরো ব্যাকরুম স্টাফ, কিটম্যান, ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্ট, ম্যাসিউর সবাইকেই বিয়েতে নিমন্ত্রণ করেছেন মেসি।
বিয়েতে উপহার চান না মেসি রোকুজ্জো জুটি
সামপ্রতিক সময়ের, যখন দুজনের ঘর আলো করে এসেছে দুই সন্তান থিয়াগো ও মাতেও। দুই ভাই এখন বাবা-মায়ের বিয়ে দেখার অপেক্ষায়। উপহার চান না মেসি-রোকুজ্জো জুটি। তবে তাঁরা বলেছেন, কেউ যদি সত্যিই কিছু দিতে চান, সেটি যেন দান করেন ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশনে’, যে ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে কাজ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখা, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা নিয়ে। তবে ভায়েহস অতসব নিয়মনীতি মানতেই রাজি নন, ‘ওসব তো ভিআইপিদের জন্য। আমি ওকে প্রতীকী কিছু দেব, সেটি একজোড়া কাফলিংকও হতে পারে।’
কেন রোজারিওতে বিয়ে?
বিয়ের ভেন্যু হিসেবে রোজারিওকে বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে মেসির বাল্যবন্ধু ভায়েহস এক সংবাদ মাধ্যমককে বলেন, ‘ওরা বিয়ের অনুষ্ঠান এখানেই করছে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে। ও সব সময়ই একই রকম। সাধারণ একজন মানুষ, যে তার পরিবার, বন্ধুদের কাছাকাছি থাকতে চায়। অর্থ ওকে একটুও বদলাতে পারেনি।’ অবশ্য বিয়ের অনুষ্ঠান সেখানেই করার পেছনে চাইলে রোমান্টিক কারণও খুঁজে নেয়া যেতে পারে। মেসি ও রোকুজ্জোর প্রথম পরিচয়, প্রথম ভালো লাগা তো এখানেই, সেই ছোট্ট বয়সে। ছুটিতে প্রতিবছরই কয়েকবার রোজারিওতে যান মেসি-রোকুজ্জো। দুই ছেলে থিয়াগো ও মাতেওর ‘ব্যাপ্টাইজেশনও’ হয়েছে এখানে।
রোজারিওতে বিয়ে হলেও মেসির পরিবারের আদি নিবাস ইতালির আকোনা শহরে। চার ভাই-বোনের মধ্যে মেসির বড় দুই ভাইয়ের নাম রদ্রিগো ও মাতিয়াস এবং ছোট বোনের নাম মারিয়া সল। লিওনেল মেসি মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। মেসির প্রথম কোচ তার বাবা হোসে। এরপর ১৯৯৫ সালে তিনি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলা শুরু করেন। ২২ বছর বয়সেই তরুণ মেসি ব্যালন ডি অর এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করেন। বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন ২৪ বছরে। বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন ৮টি লা লিগা, ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩টি ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ, ৩টি উয়েফা সুপার কাপসহ অসংখ্য পুরস্কার। হয়েছেন পাঁচবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। আর্জেন্টিনার হয়ে জিতেছেন অলিম্পিকে সোনা। তাছাড়া আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক দল অনূর্ধ্ব-২০ এর হয়ে সেটির বিশ্বকাপও জিতেছেন মেসি। বার্সেলোনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন, হয়েছেন এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা, আর্জেন্টিনার শীর্ষ গোলদাতাও হয়েছেন ২০১৬ কোপা আমেরিকায়। তবে মেসির অর্জনের তালিকাতে নেই আর্জেন্টিনার মূল দলের হয়ে কোন ট্রফি। এটাই হয়ত এখন একমাত্র স্বপ্ন এই ক্ষুদে ম্যারাডোনার।